সম্পুর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো করে গরুটিকে লালন পালন করেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ এর নয়াপাড়া মোল্লাকান্দি গ্রামের নোমাজ আলীর পরিবারটি। গরুটির সাহেবী স্বভাবের কারনে শখ করে তার নাম রেখেছে মানিকগঞ্জের সাহেব। ৪ বছরের যত্নে মানিকগঞ্জের সাহেবের বর্তমান ওজন হয়েছে ৩০ মণ। এবারের কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে গরুটি বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছে কৃষক পরিবারটি। বিশালাকার এই মানিকগঞ্জের সাহেব গরুটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার শত শত মানুষ।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ ইউনিয়নের এর নয়াপাড়া মোল্লাকান্দি গ্রামে রয়েছে গরুটি। ফ্রিজিয়ান জাতের কালো ও সাদা রঙের গরুটিকে ৪ বছর ধরে সন্তানের মতো লালন পালন করে আসছে কৃষক নোমাজ আলী তার স্ত্রী ও সন্তানেরা। ৩০ মণের গরুটির তারা দাম চাচ্ছেন ২০ লাখ টাকা। তবে বাড়ি থেকে কেউ গরুটি ক্রয় করলে ১৫ লাখে তা বিক্রি করে দেবে বলে জানিয়েছে পরিবারটি।
কোরবানির ঈদের জন্য মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় লালন পালন করা বিশাল আকৃতির গরুগুলো গত কয়েক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে আসছে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও আলোচনায় সাটুরিয়ার বিশাল আকৃতির গরু মানিকগঞ্জের সাহেব নামের ষাঁড়টি।
সোমবার (৫ জুলাই) হরগজ নয়াপাড়া মোল্লাকান্দি গ্রামের নোমাজ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাহেব গরুটিকে মোটর চালিয়ে পাইপ দিয়ে পানি দিয়ে গোসল করাচ্ছে তার মালিক। সাহেবের থাকার ঘরের মেঝে দেওয়া হয়েছে পাকা করে, চলাচলে কষ্ট দুর করতে মেঝেতে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে নরম প্লাস্টিকের ফোম। গরম থেকে রক্ষায় উপরে অবিরত চলছে বৈদ্যুতিক ফ্যান।
কৃষক নোমাজ আলীর পুত্র মো: হাবিবুর রহমান জানালেন গরুটির নাম মানিকগঞ্জের সাহেব রাখার গল্প। গরুটি তাদের বাড়ির গাভির বাচ্চা। ৪ বছর পূর্বে জন্মের পর কিছু দিন গরুটি একা একা খাবার খেলেও কয়েক মাস পর থেকে গরুটিকে খাবার মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। আবার একই ধরনের খাবার সে খায় না। তাই গরুটির সাহেবী স্বভাবের কারনে গরুটির নাম দেওয়া হয় মানিকগঞ্জের সাহেব। গরুটিকে প্রতিদিনি খাদ্য হিসেবে খৈল, ভুট্টা, বুট ও ছোলার ভুসি, চিটাগুড়, ভেজানো চাল, খুদের ভাত, খড়, নেপিয়ার ঘাস ও কুড়া খাওয়ানো হয়। মাঝে মাঝে খাওয়ানো হয় মাল্টা ও কলা। প্রতিদিন ১২০০ টাকার খাবার খায় গরুটি। দিনে ৩/৪ বার গোছল করাতে হয় গরুটিকে।
কৃষক নোমাজ আলী বলেন, ৪ টি বছর ধরে অনেক কষ্ট করে গরুটি লালন পালন করছি। গরুটি পালন করতে গিয়ে আমার পালের কয়েকটি গরু বিক্রি করে খরচ চালিয়েছি। গত বছরও কোরবানির ঈদে গরুটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি থাকায় গরুটি বের করতে পারিনি। এবারও করোনা ও লকডাউন চলছে গরুটি বিক্রি করা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। এবার গরুটির দাম চাচ্ছি ২০ লাখ তবে বাড়ি থেকে কেউ গরুটি কিনলে ১৫ লাখে বিক্রি করবো।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: মানির হোসেন বলেন, সম্পুর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মানিকগঞ্জের সাহেব নামে ষাঁড়টি লালন পালন করেছেন। গতকাল ৪ জুলাই পর্যন্ত গরুটি লম্বায় সাড়ে ৮ ফুট, পেটের ভেড় ৯০ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ৬ ফুট, এর দাত রয়েছে ৬টি। গরুটির বর্তমান ওজন প্রায় ৩০ মণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন