দেশ স্বাধীনের আগে থাকিই এই হাখম (সাঁকো) দিয়া চাইর (চার) গাঁওর (গ্রাম) লোকজন চলাফেরা করে আসছেন। দেশ স্বাধীন হলেও আমরাতো স্বাধীন নায়,স্বাধীনর পর থাকিয়া এইখানে একটা পুলর (সেতুর) লাগি সকল এমপি,ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরে লিখিত দাবি জানাইছি। সবেউ (সকলে) আমরারে আশ্বাস দিছইন পুল (সেতু) করিয়া দিবা। বিশেষ করে ভোটর সময় আইলে (এমপি-চেয়ারম্যান) পুল (সেতু) করিয়া দেয়ার আশ্বাস বেশি দিছইন। কিন্তু পরে তাঁরা ভুলি যাইন, আর কোন খোঁজ নেইননা (নেননি), এ পুল(সেতু) আইজও (আদৌ) হইবোনি, না কিতা পুল (সেতু) নির্মাণের স্বপন (স্বপ্ন) নিয়া মরতে হইবো।
সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষোভের সাথে এ কথাগুলো বলেন আবুতালিপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. বশির মিয়া(৬৫) ও মিঠুপুর গ্রামের শফিক খান(৭০)। এ ক্ষোভ শুধু তাদের নয়, কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের আবুতালিপুর, রামপাশা, মিঠুপুর ও বেগমানপুর সহ চারটি গ্রামের ১৫ সহস্রাধিক মানুষের মাঝে বিরাজ করছে এমন ক্ষোভ।
জানা যায়, স্থানীয় লোকজন গোগালীছড়া নদীর উপর স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁশের সাকো তৈরি করলে প্রায় ৫০ বছর থেকে এই সাঁকোর উপর দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার পথচারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের পারাপার হতে হয়। বাঁশের ওই সাঁকোটি প্রতি বছর খরা ও পানির স্রোতে ভেঙে পড়লে পুনরায় এলাকাবাসী তা সংস্কার করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে তুলেন। চার গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে একটি পাঁকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে বাস্তবায়ন হবে সেই প্রতিশ্রুতির আশায় এখনো পথ চেয়ে আছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় শিক্ষার্থীরা বলেন, একেতো ভাঙা সাঁকো,তার উপর বর্ষাকাল একটু বৃষ্টি হলেই নদীতে পানি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সাঁকো পার হতে আমাদের খুব ভয় লাগে। মিঠুপুর জামে মসজিদের ইমাম হাফিজ আমির আলী বলেন, আমি এ মসজিদে প্রায় ১৭ বছর থেকে ইমামতি করছি। প্রতিবছর বর্ষার সময় আসলেই সাঁকোটি ভেঙে যায়। এসময় বয়স্ক মুসল্লিরা নামাজ পড়তে এবং সকালে মক্তবের শিক্ষার্থীরা আসতে পারেনা। দিলদারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুপিয়া বেগম বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। এই সাঁকো পারাপারের ভয়ে প্রায় দিন অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে যায় না।
জয়চন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু জানান, গোগালিছড়া নদীতে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না। কুলাউড়া উপজেলা এলজিডি কর্মকর্তা খোয়াজুর রহমান বলেন, আমি কুলাউড়ায় নতুন যোগদান করেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে পাকা সেতুর বিষয়ে শিগগিরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন