চিকিৎসকের অভাবে বার্ন ইউনিটের মত অতি স্পর্ষকাতর চিকিৎসা সেবা ইউনিট বন্ধের মধ্যে বরিশালের শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বার বার অগ্নি দূর্ঘটনায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতংকের সাথে ক্ষোভও বাড়ছে। আর বিষয়টি নিয়ে এ অঞ্চলের সর্ববৃহত সরকারী এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গনপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের উদাশীনতাকে দায়ী করছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। হাসপাতালটির নির্মান ত্রুটি সহ নি¤œমানের সামগ্রী ব্যাবহারের পাশাপাশি এর রক্ষনাবেক্ষনে গনপূর্ত অধিদপ্তর এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষের উদাশীনতা ও অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘ দিনের।
এক হাজার শয্যার দেশের অন্যতম বৃহত এ হাসপাতালটির বার্ণ ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে চিকিৎসকের অভাবে। ফলে গত শুক্রবার ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ ৭০ রোগীর নিয়ে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ঢাকা থেকে সাময়িকভাবে ৭ জন চিকিৎসক এনে চিকিৎসা সেবা শুরু করতে ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যায়। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের বার্ন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের সবগুলো পদই শূণ্য। ফলে এ অঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির বার্ণ ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মত কোন চিকিৎসক না থাকায় পুরো ইউনিটটিই বন্ধ হয়ে গেছে আরো মাসাধীককাল আগে।
তবে বার্ণ ইউনিট না থাকলেও এ হাসপাতালেই অগ্নি দূর্ঘটনা ঘটছে বার বার। আর যেকোন অঘটন ও দূর্ঘটনার পরে যথারিতি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে তদন্ত রিপোর্টের সে তেজস্ক্রীয় ফাইল কিছুদিন পিংপং বলের মত এ টেবিল ওটেবিলে লাফিয়ে তা ফাইলের ভীড়েই হারিয়ে যায়। ততদিনে প্রায় সবাই ঐসব অঘটনের বিষয় ভুলেও যান। তবে ক্ষত থেকে যায় রোগী এবং স্বজনদের শরীরে ও মনে।
গত বছরের শুরুতে নির্মান কাজ শেষ হবার পরে মার্চের প্রথমভাগে নতুন ৫তলা ভবনটিতে করোনা ওয়ার্ড চালু করা হয়। কিন্তু জুনের ১০ তারিখেই ৬মাস আগে নির্মিত ভবনে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উচ্চ ঝুকির এসব সংক্রমক রোগীরা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হন। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর রাতেও হাসপাতালাটির হ্রাদরোগ বিভাগের নিবিড় পরিচর্জা কেন্দ্র-আইসিসিইউ’তে একইভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে দ্রুত রোগীদের সরিয়ে নেয়ার সময় একজন মুমূর্ষ রোগীর মৃত্যু হয়। নিকটজনেরা ‘অগ্নিকান্ডের আতংকে ঐ রোগীর মৃতুর অভিযোগ’ তুললেও হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছেন, ‘ঐ রোগী অত্যন্ত নাজুক ও ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল। আতংকে নয়, হ্রদ রোগেই তার মৃত্যু হয়েছে’ বলেও দাবী হাসপাতাল কতৃপক্ষের।
এমনকি ঐ দূর্ঘটনায় আইসিসিইউ’র সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাতভর রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে রেখে পারদিন আইসিসিইউ’তে ফিরিয়ে আনা হলেও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টটি পুরোপুরি চালু করতে অঅরো কয়েকদিন চলে যায়। ফলে হৃদরোগীদের নিবিড় পরিচর্জা কেন্দ্রের মত অত্যন্ত স্পর্ষকাতর ওয়ার্ডে চিকিৎসা যথেষ্ঠ ব্যাহত হয়। এক হাজার শয্যার বিশাল এ হাসপাতলটিতে হৃদরোগের আইসিসিইউ’তে শয্যা সংখ্যা মাত্র ১০টি হলেও সেখানে প্রতিদিন গড়ে রোগী থাকছেন ২০ থেকে ৩০ জন পর্যন্ত।
কিন্তু রোগীর চাপের সাথে চিকিৎসক ও কর্মী সংকট সহ চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে এখানে সুষ্ঠু চিকিৎসা লাভ অনেকটাই দুরুহ হয়ে পড়েছে। তার ওপারে অগ্নিকান্ডের মত ভয়াবহ ও আতংকিত দূর্ঘটনা সরকারী চিকিৎসা সেবার প্রতি সাধারন মানুষের অনাস্থা আরো বৃদ্ধি করছে বলেও জানিয়েছেন একাধীক রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
এ ব্যাপারে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলামের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, পুরো বিষয়টি তদন্তে হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ইতোমধ্যে গনপূর্ত বিভাগ ও অক্সিজেন প্লান্ট রক্ষনাবেক্ষনকারী প্রতিষ্ঠানকেও চিঠি দিয়ে সব ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি দুর করতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোন ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে গনপূর্ত বিভাগকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন