নতুন স্থায়ী প্যাভিলিয়নে ক্রমেই বাড়ছে দর্শনার্থী। তবে এখনো জমে ওঠেনি কেনাকাটা। তাই ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি হওয়ার পরও কেনাকাটা কম থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তবে দ্বিতীয় সপ্তাহের পর পুরোদমে কেনাকাটা বাড়ার আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, বৈশি^ক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এবার প্রথমবারের মতো রাজাধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল নতুন শহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারে বসেছে ঢাকা বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। ফলে বাণিজ্যমেলা নিয়ে দর্শনার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহের কোন কমতি নেই। যদিও বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মেলাকে প্রাণবন্ত করতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ।
এ মেলাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে উৎসব মূখর পরিবেশ। ঝলমল আলোয় আর ডিজিটাল সাজ-সজ্জায় সেজেছে বাণিজ্য মেলার প্যাভিলিয়ন। গত ১ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যেমে এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলার উদ্বোধন হওয়ার সময় থেকে মেলার বেশিরভাগ দোকানো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে মেলার প্রথম দিন এমনকি দ্বিতীয় দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা থাকলেও ক্রেতারা হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরেন। তবে তৃতীয় দিনে স্টলগুলো মোটামুটি প্রস্তুত হয়। দর্শনার্থীর সংখ্যাও ক্রমেই বাড়তে থাকে। তবে কেনাকাটা খুব একটা নেই বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগারওগাঁওয়ে মেলার ১০ দিনেও এতো দর্শনার্থী হয়নি। গত দুইদিনে যে পরিমাণ দর্শনার্থী পূর্বাচলের মেলায় ঘুরে দেখেছেন তাতে প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি কেনাকাটার আশায় ছিলেন তারা। যদিও স্থায়ী প্যাভিলিয়ন দেখতেই অনেকে ভিড় করেছেন। স্থায়ী প্যাভিলিয়নের উত্তরপাশে বাইরের অংশে অস্থায়ী স্টল দিয়েছেন হাজী বিরিয়ানী নামীয় প্রতিষ্ঠান। এর দায়িত্বরত কর্মকর্তা আরমান মিয়া বলেন, দর্শনার্থী বেশি থাকায় খাবার হোটেলে ভিড় রয়েছে। তবে খাবার ব্যতীত ভিন্ন পণ্য ক্রয়ের দৃশ্য এখনো দেখা যায়নি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে পরিবার নিয়ে মেলায় কেনাকাটা করতে এসেছেন গার্মেন্টস কর্মকর্তা আফসানা। তিনি বলেন, খুব আশা নিয়ে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে এসেছিলাম। তবে ভেতরের স্টলগুলোতে এখনো তেমন পণ্য নেই। আর থাকলেও তারা মূল্য চাচ্ছেন বেশি। ফলে কোন কেনাকাটা না করেই বাসায় চলে যাচ্ছি।
আবার পূর্বাচল নতুন শহর ও আশপাশের সাধারণ মানুষের কাছে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তারাও পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছেন এখানে। তাদের মাঝে পূর্বাচলের আব্দুর রউফ মালুম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে মেলা, তাই খুব আনন্দ লাগছে। প্রথম বছর হওয়ায় হয়তো প্রস্তুত হতে সময় নিচ্ছে। আশাকরি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে জমজমাট হবে এ আসর।
সরেজমিন আরো দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিড় দেখা যায় ইলেকট্রনিক্স শোরুম, বিদেশি স্টল ও খাবারের দোকান ও স্টলগুলোতে। যমুনা গ্রæপের ইলেকট্রিক শোরুমেও নতুন বাজারের আসা টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকেই কেনাকাটার জন্য দাম হাকাচ্ছেন। গত ৩ দিনে কোন বিক্রি নেই দাবি স্টলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আরো বলেন, শুরুতে মেলা দেখতে আসেন অনেকেই। তবে যারা কিনতে আসবে তারা ১ সপ্তাহ পরিস্থিতি দেখে তারপর কেনাকাটা শুরু করবেন হয়তো।
এদিকে বাণিজ্য মেলায় টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা আর শিশুদের জন্য ২০ টাকা। নারায়ণগঞ্জের বন্দর থেকে আসা দর্শনার্থী ফরিদ আহমেদ বলেন, ৪০ টাকা টিকিট কেটে এসে দেখি বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তাই মনে হচ্ছে ৪০ টাকার টিকিট কেনাই আমাদের বৃথা। তবে পুরোপুরি মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত হয়ে গেলে দর্শনার্থীদের হতাশা কেটে যাবে আশা করে স্থানীয় ঠিকাদার শামীম ভুঁইয়া বলেন, শুরুতেই হতাশার কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা তাদের স্টল সাজাচ্ছেন, ক্রেতা বিক্রেতাদের আরো জমজমাট কেনাবেচা বাড়বে। ইতোমধ্যে স্টলগুলোর ৯০ ভাগ প্রস্তুত হয়ে গেছে।
মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় দর্শনার্থী কেন্দুয়া এলাকার ওসমান গনীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪০ টাকায় টিকিট কেটে এসে যদি দেখি এই অবস্থা তাহলে খুব কষ্টই লাগে। বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে এবারের আসর বসা যেমন অনেকটা আনন্দের ব্যাপার তেমনি মেলা শুরু পরও প্রাঙ্গণ পুরোপুরি তৈরি না হওয়া ততটাই কষ্টের বিষয়। কথা হয় মেলার স্টলের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা বলেন, ইপিবি কার্যক্রম দেরি করে শুরু করার কারণে স্টল নির্মাণে সময় লেগেছে। স্টল পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হতে আরো ৩-৪ দিন সময় লাগতে পারে। তাই আগামী বছর থেকে ইপিবিকে আরো আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ করেন তারা।
ইবিপির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বাণিজ্য মেলায় মোট ২২৫টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্কয়ার ফুট হিসেবে একেক দোকানের মূল্য একেক রকম ধরা হয়েছে। এবারের বাণিজ্য মেলায় আধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের নিজস্ব জায়গায় আয়তনের ২টি হলে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল, ১৫টি ফুট স্টল দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ বছর দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ ১১টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার লক্ষ্যে কুড়িল বিশ^ রোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য বিআরটিসির ৩০টি বাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ১৬০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মেলা প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশে ৬ শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
এ ব্যাপারে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইখতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রতিবছরই মেলা শুরুর দুই-তিন দিন পর স্টল নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এখানে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর বসেছে। তাও আমরা চেষ্টা করছি বাণিজ্যমেলাকে যথাসাধ্য সাজাতে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা আগত দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিষয় দেখভাল করছেন। সাদা পোশাকেও বিশেষ টিম নিরাপত্তায় কাজ করছেন। ফলে নিরাপদ পরিবেশে এ মেলা পুরোপুরি জমে ওঠবে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত দর্শনার্থী এ মেলায় আসতে শুরু করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন