ফরিদপুরে ডায়রিয়ায় গত ২৪ ঘন্টায়, নতুন করে ১১৩ জন আক্রন্ত হয়েছে এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু ব্যক্তির নাম,মোঃ জামাল মন্ডল (৬০),পিতাঃ ইলিয়াসিন মন্ডল, গ্রাম বুকাইল,বাখুন্ডা, সদর থানা ফরিদপুর।
জামাল মন্ডল ডায়রিয়া মারা যাওয়ার বিষয় মৃত্যের মেয়ে রিকতা এবং মেয়ের জামাই ইকবল ইনকিলাবকে জানান, আমরা গত কাল রবিবার (২৪ এপ্রিল)রাত ১১ ঘটিকায় ডায়রিয়া নিয়ে বাবাকে সদর হাসপাতালে বারান্দায় ভর্তি করি চিকিৎসা সেবা অবস্হায় সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে দশটায় মারা যান। রিকতারা ৬ বোন ১ ভাই আছে বলে প্রতিনিধি কে জানা।
এ নিয়ে, গত ৭ দিনে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে মোট ৮১৪ জন মানুষ ডায়েরিয়ায় আক্রন্ত ভর্ত হয়েছেন।
সোমবার (২৫ এপ্রিল), নতু করে ৮৪ জন ব্যাক্তি উপস্হিত চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।গত ৭২ ঘন্টায় হাসপাতালে সরেজমিন দেখাগেছে ৭৩ জন পুরুষ ৪৮ জন নারী এবং ৫ শিশু বাচ্চা ডায়রিয়ায় আআক্রান্তের অবস্হায় ছিল ভয়াবহ।
এই প্রতিনিধি, গতকাল সকাল ৯ টা থেকে বেলা ১১ ঘটিকা পর্যন্ত সরেজমিন উপস্হিত থেকে হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের চিকিৎসা সেবায় কোন অবহেলা দেখতে পাননি। তবে প্রচন্ড জনবল আয়া ও ক্লিনারের অভাব দেখতে পেয়েছেন।
পাশা-পাশি, ডায়রিয়ায় আক্রান্তের চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের থাকার জায়গাগুলো ছিল প্রচন্ড গন্ধ এবং নোংরা। পায়খানা বমির এবং রোগীর ও স্বজনদের আগমনে হাসপাতাল হয়ে উঠছে একটি বদ্ব কারাগারের মত।
জরুরী ভিওিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোতে জনবল সহ ক্লিনার ও আয়ায় বাড়ানো খুবই জরুরি। হাসপাতালে ২৪ ঘন্টার জন্য একজন ক্লিনার ও একজন মাত্র আয়া আছে। বর্তমান অবস্হা এমন হাসপাতালের ধারন ক্ষমতার ১০০ গুন রোগী আসার কারনে নার্সরাও সেবা দিতে হাপিয়ে উঠছেন। তবে চিকিৎসা সেবায় কারোর কোন অবহেলা দেখা যায়নি।
নার্সদের দাবি ডায়রিয়া ওয়ার্ডেই নার্স এবং তিনজন ক্লিনার ও আয়া খুবই জরুরি।
হাসপাতালে বেড না থাকার কারনে শিশু কিশোর বৃদ্ব আবার বনিতা, নারী পুরুষ ফ্লোরে, বারান্দায় গাছতলায় শুয়ে বসে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, মাত্র ২৩ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিতে রোগীর পরিমান এতটাই বেশী যে, নারীর পাশে পুরুষ, পুরুষের পাশে নারী, শিশু বৃদ্ব এক বেডে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিছানার চাদর,বেড কাভার স্যালাইন ঝুলানো লোহার ষ্টান্ড না থাকার করনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে ফ্লোরে শোয়ায়ে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। পাশা-পাশি স্যালাইন হাতে ধরে স্বজনদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
চিকিৎসা নিতে আসা সকলেই গনমমাধ্যম কে বলছেন, ফরিদপুরে প্রচন্ড গরমে হঠাৎ করে বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। জেনারেল হাসপাতালের ১০ শয্যার বিপরীতে ১০০ জন রোগীকে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা।
সিনিয়র / জুনিয়র নার্সরা চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। প্রতি ঘন্টায় ৫/১০ জন করে নতুন নতুন আক্রান্ত রোগী/ রোগীনি, শিশু কিশোর বৃদ্ব আবাল বনিতা এসে ভর্তি হচ্ছে।
হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স মার্জিয়া খানম গনমমাধ্যম কে বলেন, এইরকম অবস্হার মধ্যে পড়ছি ১৯৮৪ সালে। তখন জেলার পানির ট্যাংকিতে মানুষের মরা পঁচা লাশ পাওয়ায় এই অবস্হা হয়েছিল।
বিগত প্রায় ৩৮ বছর পর ২০২২ সালের এই এপ্রিল মাসে, ডায়রিয়া আবার মহামারি আকার ধারন করছে।
তবে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে রোজাদার নার্সরা কোন অনিহা প্রকাশ করছেন না। উপরন্ত আন্তরিকতার সহিত মানবিক হয়ে ও দরদ দিয়ে সকলেই কাজ করছেন।
রোগীরাও নার্সদের সেবায় সবাই খুব খুশী। কিন্ত অভাব শুধু বেডের। ঔষধ ও স্যালাইনের কোন অভাব নাই। ঔষাধ পাননি সেবা পাননি এরমক কেউ কোন অভিযোগ কেউ করেনি।
হাসপাতালের পাশে অলস জায়গা পড়ে থাকলেও হাসপাতাল সৃষ্টির পর ১০ বেডের ওয়ার্ড থেকে অতিরিক্ত ১৩ টি বেড বাড়ালেও কোন ভবন নির্মান হয়নি।
গত ২৪ ঘন্টায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নতুন ভর্তি হয়েছে ১১৩ জন জন রোগী। ৪৮ ঘন্টায় রোগী সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৫৫ জন। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের বারান্দা ও গাছ তলায় থাকতে হচ্ছে।
কোন কোন রোগীর বাবা খালি ফ্লোরে শুয়ে আছেন ২ ছেলে স্যালাইন উচু করে রেখেছেন।
রবিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রোগী ও স্বজনদের চাপে গিজ গিজ করছে ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে শয্যা মাত্র ১০টি। কিন্তু রোগী ভর্তি রয়েছেন ১০০ জন। অনেক রোগীকে বারান্দায় এবং কাউকে কাউকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ড ছাড়াও আশে পাঁশের সকল ওয়ার্ডে এখন ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগী। হাসপাতালটির কোথাও সিট না পেয়ে অনেকেই বারান্দায় ও গাছতলায় চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাপি বেগম বলেন, ‘আমরা এখন সাপ্তাহিক ছুটি না নিয়েও দিন রাত রোগীর সেবা করে যাচ্ছি। রোগী আসছে প্রচুর, জায়গা দিতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে অনেকেই ফ্লোর, বারান্দা আবার অনেকেই গাছতলায় সেবা নিচ্ছেন।’
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. গণেশ কুমার আগরওয়ালা গনমমাধ্যম কে জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১৪২ জন রোগী। আর গত এক সপ্তাহে এ রোগের ভর্তি রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬৪৩ জনের। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০০ জন রোগী।
তবে ভর্তি রোগী বেশি দিন থাকছে না, ভাল হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান এ চিকিৎসক।
ফরিদপুরের সির্ভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান গনমমাধ্যম কে জানান, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি না নেওয়ায় চাপ বেড়েছে জেনারেল হাসপাতালে। এই হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র ১০টি । বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০০ । এই বিপুল সংখ্যাক রোগী সেবা দিতে নার্স ও চিকিৎসকদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।
অপরদিকে, বিদ্যুতের ভেলকিবাজি খেলায় রোগীরা মিনিটে মিনিটে মৃত্যুর দুয়ারে যাচ্ছেন আবার আবার ফিরছেন। প্রকাশ থাকে যে, প্রথম রোজা থেকেই ফরিদপুরে বিদ্যুতের এই বেতাল অবস্হা চলছে। রোগীদের জীবন বাঁচাতে স্বজনের তালের পাখার বাতাস দিতে হচ্ছে।
তবে হাসপাতালে সকল রোগীদের দাবি ডায়রিয়া ওয়ার্ডের পাশে অলস জায়গায় দ্রুত একটি ভবন নির্মান করে রোগীদের ভেগান্তি কমাতে বিনয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট জোড় দাবি জানিয়েছে।
হটাৎ করে ফরিদপুর সদর এলাকায় এত ডায়রিয়ায় আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা এত বৃদ্বি পাওয়া সকলকে ভাবিয়ে তুলছে। ফরিদপুর সচেতন মহলের দাবি, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের নাম ঠিকানা ধরে এবং পৌরসভার বাসীন্দাদের খাবার পানির স্হানগুল জরুরী ভিওিতে তদন্ত করে পরীক্ষার আওতায় আনা খুবই জরুরী হয়ে পড়ছে। এত মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের কারন খুঁজে বের করতে না পাড়ালে পাড়ায় মহল্লায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন