৪০০ কোটি টাকার দেনা মাথায় নিয়ে দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে পাবনা চিনিকল। প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও এখন অকেজো হওয়ার পথে। আখচাষি, চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষি ফেডারেশনের নানামুখী আন্দোলনের পরও চিনিকল চালু করা সম্ভব হয়নি। কবে মিল চালু হবে সেই আশায় দিন পার করছে কর্ম হারানো শ্রমিকরা। আখচাষিরাও মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। অনেকে আখ চাষের জমিতে ধান চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন । মিলটিতে স্থায়ী, অস্থায়ী ও মৌসুমভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। বর্তমানে মিলটিতে প্রশাসনিক কাজ চালু রাখতে এমডি, কয়েক জন কর্মচারী ও গার্ড ছাড়া অন্য কারো দেখা নেই। গত দু’বছর আগেও চিনিকল এলাকায় কর্মব্যস্ততা ছিল, মিলটির আশপাশের গড়ে উঠেছিল দোকান, হোটেল। এখন সব বন্ধ। প্রাণহীন পড়ে আছে মিল। মিলের ভেতরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে আখ পরিবহনের প্রায় দুই শতাধিক ট্রলি। মাড়াইয়ের যন্ত্রপাতিগুলোও মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চিনিকল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আখ মাড়াই প্ল্যান্টসহ চিনিকলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি রয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় মাড়াই যন্ত্রের ডোঙ্গা, নাইফ, ক্রাসার, বয়লার হাউজ, রুলার, ড্রায়ারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হতে বসেছে। চিনিকল ও স্থানীয় আখচাষিরা জানান, চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর জেলার ৯ উপজেলায় ব্যাপকভাবে আখ চাষ শুরু হয়। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে চিনিকলটি। ফলে ২০২০ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় চিনি আহরণের হার, আখের জমি, লোকসানের পরিমাণ এবং ব্যবস্থাপনার খরচ বিবেচনায় পাবনা চিনিকলসহ ছয়টি চিনিকলে আখমাড়াই না করার প্রস্তাব দেয়। এর পর থেকেই পাবনা চিনিকলে আখমাড়াই বন্ধ হয়ে যায়। এতে আখ নিয়ে ভোগান্তি শুরু হয় চাষিদের। বর্তমানে মিলটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে।
দাপুনিয়া গ্রামের আখচাষি আক্কাস আলী মোল্লা বলেন, বন্ধ ঘোষণার সময় চিনিকল কর্তৃপক্ষ তাদের উৎপাদিত আখ কাছের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল ও নাটোর চিনিকলে বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। তবে তা এখনোও আলোর মুখ দেখেনি। পাবনা জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আনছার আলী ডিলু জানান, তাদের আন্দোলন চলাকালে মিল বন্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ চিনিকল আখচাষি ফেডারেশনের মহাসচিব এবং পাবনা জেলা আখচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, কৃষকদের স্বার্থে বন্ধ মিল চালু করা দরকার। এ বিষয়ে পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন বলেন, চিনিকলটি এখনো পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এটি চালুর প্রক্রিয়া চলছে। তবে যতদিন পর্যন্ত চালু না হচ্ছে তত দিন পাবনা জেলার আখচাষিদের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল বা অন্য মিলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পাবনা চিনিকলের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে। আর মিলটিতে কর্মরতদের অন্য চিনিকলে সংযুক্ত করা হচ্ছে। ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজায় ৬০ একর জমির উপর পাবনা চিনিকল সরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে তৎকালীন সরকার মিলটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন