নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসমূহকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ১৮ নভেম্বর ১৩ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও বুদ্ধিজীবী মহলে এখন সেসব প্রস্তাব নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ চলছে। টেলিভিশন টক শোগুলোতেও প্রধান আলোচ্য বিষয় বেগম খালেদা জিয়ার উত্থাপিত রূপরেখা।
বিএনপি চেয়ারপার্সন তার রূপ রেখায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলেছেন। সে সাথে জনগণের ভোট সুরক্ষার জন্যও একটি প্রস্তাব রেখেছেন। বেগম জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব অথবা বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকে হবেন নির্বাচন কমিশনার, চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রেও অন্যতম যোগ্যতার মাপকাঠি হবে যিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির আহ্বায়ক হবেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি। অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন এমন কোনো কর্মকর্তা বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। এমন কি তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে পদায়নেরও যোগ্য হবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবে এবং রাষ্ট্রপতি তা সার্চ কমিটিতে পাঠাবেন। তাদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য ২ জন এবং কমিশনারের জন্য ৮ জনসহ মোট ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হবে। সব দলের প্রস্তাবের অভিন্ন নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়া চারজন নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা সম্পর্কেও একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার হবেন- ন্যূনতম জেলা জজের মর্যাদাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ন্যূনতম যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষাবিদ বা সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিক।
বেগম জিয়া সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পশাপাশি নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন। সে সরকারের রূপরেখা ভবিষ্যতে তুলে ধরা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিরূপনের জন্য সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অথবা স্বাধীনতার প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্নœ সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদক অথবা মনোনীত প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রাথমিক আলোচনা করবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি নাগরিক সমাজের মধ্য থেকে সৎ, যোগ্য ও দল নিরপেক্ষ প্রতিনিধিদেরও আলোচনায় যুক্ত করতে পারবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার এসব প্রস্তাব জনমনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বলেই মনে হচ্ছে। অনেকেই বলছেন যে, বিগত সাত বছরের মধ্যে এবারের এ প্রস্তাবটি বিএনপি তথা বেগম খালেদা জিয়ার একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ। তাঁর এসব প্রস্তাবের বিষয়ে একমাত্র ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত (২০ নভেম্বর) অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। বরং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকগণ, যারা নানা জাতীয় ইস্যুতে অভিমত দিয়ে থাকেন, তারা বেগম জিয়ার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে বলেছেন- নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন না হওয়া পর্যন্ত এটি বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার ভেবে দখতে পারে। বেগম জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেছেন- সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ বা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব ইতিবাচক। বিভিন্ন সময়ে আমরাও এটা বলেছিলাম। কিন্তু দেখার বিষয় হলো এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয় কী না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন- ‘বেগম জিয়া আইন করার কথা না বলে যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন সেটি বাস্তবায়িত্ব হলে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তাই এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়নে সবার জোর দেয়া উচিত।’ সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাখাওয়াত হোসেন (অব.) বলেছেন- ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন একটি ভালো প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আমরাও বিভিন্ন ফোরামে এসব বিষয়ে বলে আসছিলাম। বিতর্ক এড়াতে ও নির্বাচন কমিশনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল ও জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিত্ব ছিল এমন রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া উচিত।’ সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন- ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আলোচনার মাধ্যমে সার্চ কমিটি বা নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন একই দাবি অনান্য রাজনৈতিক দলেরও। আমরা চাই সংবিধান মেনে নির্বাচন কমিশন গঠনের একটি আইন করতে হবে। সে আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের কী যোগ্যতা হবে তা উল্লেখ থাকতে হবে।’
অন্যদিকে গত ২০ নভেম্বর একটি দৈনিককে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিষ্টার রফিক উল হক বলেছেন- ‘বিএনপির প্রস্তাবে অনেকগুলো ভালো বিষয় আছে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বলব- শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ চাই। এ জন্য আলোচনা ও সমঝোতা দরকার। বিএনপি একটি প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যান্য দলের উচিত এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানো। কথা হচ্ছে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে; আওয়ামী লীগের এগিয়ে আসা দরকার।’
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন শেষ হতে না হতেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পৃথক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রস্তাবনা অন্তঃসারশূন্য, চর্বিত চর্বন ও জাতির সঙ্গে তামাশা। ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে নানা প্রসঙ্গ তুলে প্রকারান্তরে বিএনপির সাথে তার দলের আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন।
বুঝতে অসুবিধার কথা নয়, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব আওয়ামী লীগ আমলে নিবে না। ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যকে অফিসিয়াল বক্তব্য হিসেবে ধরে নিলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও তারা ‘একলা চলো’ নীতি অবলম্বন করতে যাচ্ছেন। হয়তো রাষ্ট্রপতি একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন এবং সে সার্চ কমিটি শেষ পর্যন্ত এমনসব ব্যক্তিদের নাম নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করবে, যারা হবেন কাজী রকীবউদ্দিন কমিশনেরই প্রতিমূর্তি; যারা আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরক্ত, অনুগত থাকবে। বলা নিষ্প্রয়োজন, সে ধরনের নির্বাচন কমিশন দেশ-বিদেশে কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না, বরং তা আমাদের নির্বাচন বা রাজনৈতিক ইতিহাসে আরেকটি খারাপ দৃষ্টান্তের সংযোজন ঘটাবে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত কেউ এখন পর্যন্ত নেতিবাচক বলেনি, বরং এ প্রস্তাবের আলোকে সরকারের উদ্যোগ নেয়ার কথাই বলেছেন সবাই।
বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তাঁর এ প্রস্তাব দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং একটি জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে উদার দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই করা হয়েছে। বেগম জিয়া তাঁর প্রস্তাবে নিজ দলের (বিএনপির) স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেননি। বরং দেশে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং সবার অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত করে তোলার পথই বাৎলে দিয়েছেন। এ জন্য বেগম খালেদা জিয়া ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। কেননা, তিনি তাঁর এ প্রস্তাবের মাধ্যমে এটাও দেখালেন যে, দলীয় প্রধান হয়েও দল নিরপেক্ষ একটি ‘রূপরেখা’ জাতির সামনে তুলে ধরা যায়।
তবে, তিনি যদি একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় সংবিধানের আলোকে একটি স্থায়ী আইন প্রণয়নের দাবি তাঁর প্রস্তাবনায় সংযুক্ত করতেন, তাহলে এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবেই পরিগণিত হতো। বেগম জিয়া সেটা করেননি সম্ভবত এ কারণে যে, ওই রকম একটি আইন প্রণীত হলে সে প্রক্রিয়ায় তাঁর দল বিএনপির অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকবে না। কেননা, বিএনপি বর্তমানে জাতীয় সংসদে নেই। সংসদীয় প্রক্রিয়ায় সেখানে প্রতিনিধিত্বহীন কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। ফলে মাঠের (প্রকৃতপক্ষে মাঠেরও না, বলা যায় কার্যালয় ও হলরুম ভিত্তিক) বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় শরীক হতে পারবে না। সে সুযোগে আওয়ামী লীগ তাদের ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দলকে সঙ্গী করে নিজেদের মন মতো একটি আইন পাস করিয়ে নিতে পারে। আর একবার আইন প্রণীত হলে তার বাইরে যাবার কোনো উপায় কারো থাকবে না। ফলে ভবিষ্যতে কোনো সুযোগ আসবে- এ ভাবনা থেকেই হয়তো বিএনপি চেয়ারপার্সন তাঁর প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়নের দাবি তোলেননি। এ দাবিটি সংযুক্ত থাকলে প্রস্তাবনাটি আরো বেশি গুরুত্ববহ হতো এবং বিএনপি যে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় রাখে না, তাও জনসমক্ষে তুলে ধরা যেতো। পাশাপাশি দেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর কাছে প্রস্তাবটি অধিকতর গ্রহণযোগ্যতা পেতো।
এখন আমরা এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোভাব তথা মনোবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করতে পারি। একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো- দলীয় স্বার্থের চেয়ে আওয়ামী লীগ অন্য কিছুকে কখনোই প্রাধান্য দেয় না। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তারা তাদের সে অŸস্থান বা দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করবে এমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র। আর যে কারণে প্রায় সবার কাছে ইতিবাচক বলে প্রতীয়মান হওয়া সত্ত্বেও বেগম জিয়ার প্রস্তাবনা উত্থাপনের প্রায় সাথে সাথে তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমার ধারণা, তারা বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রস্তাবনাটি ভালোভাবে পড়েও দেখেননি। ঘটনাটা হয়তো এমনও হতে পারে- ‘আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল, সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া যা-ই বলুন, আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করবে। আর সেজন্য রেডি হয়ে বসেছিলেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।’ ঠিক এ কথাটিই বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১৯ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না বলেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেয়া প্রস্তাব বাজেট প্রতিক্রিয়ার মতো আওয়ামী লীগ নাকচ করেছে। তাদের রিঅ্যাকশন আগেই তৈরি ছিল।’ মির্জা আলমগীরের এ মন্তব্যকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। আমাদের দেশে একটি প্রবণতা আছে। জাতীয় বাজেট বিকালে দেয়া হলে সন্ধ্যায় বিরোধী দল ‘গণবিরোধী বাজেট মানি না, মানবো না’ বলে শ্লোগান তোলে। আর সরকারি দল ‘জাতীয় উন্নয়নের ঐতিহাসিক বাজেটকে স্বাগতম’ লেখা ব্যানার নিয়ে মিছিল করে। বলা নিষ্প্রয়োজন, উভয় পক্ষই বাজেটের পর্যালোচনা বা বিশ্লেষণ ছাড়াই পক্ষে- বিপক্ষে মিছিল করে। এটা তাদের দলীয় রুটিন ওয়ার্ক। বাস্তবে ঘোষিত বাজেট কতোটা গণবিরোধী কিংবা কতোটা জাতীয় স্বার্থে প্রণীত সেটা পর্যালোচনার অবকাশ তাদের থাকে না। কে কার আগে প্রতিক্রিয়া জানাবে চলে সেই প্রতিযোগিতা।
যা হোক, আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা কোনো সমঝোতার পথে হাঁটবেন না। সংবিধান নির্দেশিত পথেই তারা এগোতে থাকবেন। সংবিধান নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিয়েছে, সে ক্ষমতার বলে তারা নিজেদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নেবেন। এটা তারা পারবেন। কেননা, সংসদে কিংবা রাজপথে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা বর্তমানে দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের যে নেই, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আর সে সুযোগে আওয়ামী লীগ এখন ‘নারীকে পুরুষ, আর পুরুষকে নারী বানোনো’ ছাড়া আর সবই করতে পার। ফলে বিএনপির প্রস্তাবনা কিংবা দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিমত বা পরামর্শ তদের কাছে একেবারেই গৌণ বিষয়। ওগুলো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলেই বা ক্ষতি কি? আওয়ামী লীগের এ ‘কুচ পরোয়া নেহি’ মনোভাবের পেছনে ‘অসামান্য অবদান’ রেখে চলেছে বিএনপি। তাদের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচির কারণে অতীতে যে শক্তি ক্ষয় হয়েছে তাতে তারা এখন সময় মতো শক্তি ব্যবহার করতে পারছে না। আর বিএনপি কতদূর যেতে পারবে বা কতটুকু কী করতে পারবে, তা যেহেতু আওয়ামী লীগ তথা সরকারের পুরোপুরিই জানা আছে। তাই বিএনপিকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখার প্রয়োজন বোধ করছে না আওয়ামী লীগ।
সুতরাং, এটা বলা নিশ্চয়ই অতিশয়োক্তি হবে না যে, বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাব দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর সে জন্য আগামী নির্বাচন নিয়ে শংকা ও সংশয়েরও অবসান হবে না। এদিকে ১৯ নভেম্বর বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে, তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে সরে আসনেনি। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, নির্দলীয় সরকার না হলে বিএনপি নির্বাচনে নাও যেতে পারে। সুতরাং যে রাজনৈতিক সংকট বাংলাদেশকে গত কয়েক বছর ধরে স্থবির করে রেখেছে তার অবসানের কোনো লক্ষণ আছে বলে তো মনে হয় না। বেগম জিয়ার প্রস্তাবনা সংকটের বরফ গলার একটা পথ তৈরির সুযোগ করে দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করে সে সম্ভাবনার শিখা জ্বলে ওঠার আগেই নিভিয়ে দিল।
তবে, আওয়ামী লীগ গ্রহণ করুক বা না করুক, আলোচনা-সমঝোতায় বসুক বা না বসুক, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের রূপরেখা উত্থাপন করে বেগম খালেদা জিয়া যে বলটাকে এবার আওয়ামী লীগের কোর্টেই ঠেলে দিয়েছেন, এ বিষয়ে দ্বিমত করার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সে বল কোন দিকে ঠেলে দেয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
য় লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সড়যড়হ৯১@ুধযড়ড়.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন