ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা ২৬৪ হেক্টর জমির বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
এ পরিস্থিতিতে ফরিদপুর সদরের পদ্মা নদী অববাহিকার নর্থচ্যানেল, চরমাধবদিয়া এবং ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বাদাম চাষ করা কয়েক শ’ কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে নতুন করে পদ্মা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার শূন্য পয়েন্ট ৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এখানে বিপৎসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। এতে জেলার পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এতে নতুন করে আরও বাদামের জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার পদ্মাসহ কয়েকটি নদীতে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫২৬৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০০১ হেক্টর জমির বাদাম ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ায় বাকি ২৬৪ হেক্টর জমির বাদাম তলিয়ে গেছে।
ফরিদপুর সদরের চরঅধ্যুষিত নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিনের ডাঙ্গী এলাকার সালমা বেগম (৫৫) নামে এক কৃষাণী বলেন, ‘বাদাম চাষ করে এবার আসলই উডবো না। এমনিই একজন কামল্যা (শ্রমিক) নিলে তাকে ৮ থেকে ৯শ’ ট্যেহা (টাকা) দিয়োন লাগে। এরপর হঠাৎ পানিতে সব তলিয়ে গেছে। কী অবু আমাগো এহন?’
একই এলাকার কৃষক মোকছেদ সরদার (৫০) ও নবাব খাঁ (৬০) বলেন, হঠাৎ পদ্মার পানি বাড়ায় তাদের দুই বিঘা করে মোট চার বিঘা জমির বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বাড়া অব্যাহত থাকলে আমাদের মতো অনেক বাদাম চাষীকে পথে বসতে হবে। ’
ফরিদপুরের পদ্মা-সংলগ্ন চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম বলেন, হঠাৎ পানি বাড়ায় ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকের বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে অনেক বাদামচাষীকে পথে বসতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. হজরত আলী বলেন, সারা বছরই বাদাম চাষ হয়। তবে, বাদাম যখন জমিতে চাষ হয়, তার ফলন পেতে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফলে অনেক সময় কিছু নদীর চর জাগতে দেরি হওয়ায় কৃষকরা একটু দেরিতে বাদাম চাষ করেন। এ কারণে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে বাদামের ফলন। তবে কখনো কখনো নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ায় তলিয়ে যায় বাদাম ক্ষেত।
তিনি বলেন, কয়েকদিনের পানিতে বাদাম চাষীদের তেমন ক্ষতি হয়নি। কারণ, ৯০.৫ শতাংশ কৃষক এরই মধ্যে বাদাম ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি কিছু কৃষকের বাদাম ক্ষেত হয়তো তলিয়ে গেছে। তবে এ পানিতে বাদামচাষীদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে না বলে ধারণা এ কৃষি কর্মকর্তার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন