শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নাসুমেই শেষ বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০২ এএম

জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ১৩তম ওভারে মুস্তাফিজের বলে ব্যাট রায়ান বার্লের ব্যাট ভাঙলে নিতে হয় নতুন ব্যাট। আবার সেই ওভারের শেষ বলে শুম্বা ফিরলে স্বাগতিকরা ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৭ রান নিয়ে রীতিমত ধুকছে। দলীয় সংগ্রহ তিন অংকে পৌঁছতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে তখন আলোচনা শুরু। এমন অবস্থায় নাসুম আহমেদের আসলেন ১৫ তম ওভার করতে। কোন জাদুকাঠি লাগল না, বার্লের ব্যাট তলোয়াড়ের মতন কাটল নাসুমের বলকে, একই সাথে বাংলাদেশকে। সেই ওভারেই ৩৪ রান তুলে ধবংসস্ত‚পে পড়ে থাকা জিম্বাবুয়ের ইংসকে মুহ‚র্তেই বদলে দিলেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। সোহানের পরিবর্তে প্রথমবারের মতন বাংলাদেশেকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক মোসাদ্দেকের হাত থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ঠিক সেই জাগাতেই ফসকে গেল। সেই সাথে ম্যাচটাও। বার্ল ও জঙ্গুয়ের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাড়াল ৮ উইকেটে ১৫৮ রান। স্পোর্টিং উইকেটে এই রান তাড়া করা খুবই সম্ভব। কিন্তু টাইগারদের পুরনো ব্যাধি, ম্যাচের লাগাম একবার ছুটলে সেটাকে আর বশে আনতে না পারা। সেই ধারা অক্ষত রেখ, পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং করে তৃতীয় ম্যাচ ও একই সাথে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ। টাইগারদের বিপক্ষে যা তাদের প্রথম।
হারারেতে স্বাগতিকরা টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে। শুরুতে বাংলাদেশ দলের প্রত্যেক বোলারই দারুণ বোলিং করে বেকায়দায় ঠেলে দেয় অরভিন বাহিনীকে। সেখান থেকে দলের ত্রান কর্তার ভ‚মিকায় হাজির হন বার্ল ও জঙ্গুয়ে। এই দুইজনের সাহসী ব্যাটিংয়ে তছনছ হয়ে যান ম্যাচের প্রথম উইকেট পাওয়া নাসুম। ১৫ তম ওভারেই ৩৪ রান দিয়ে বনে যান এক ওভারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান দেওয়া বোলারে। এর আগে ২০০৭ সালের প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপে ব্রডের এক ওভারে যুবরাজ নিয়েছিল ৩৬ রান। গত বছর আকিলা ধনঞ্জয়ার এক ওভারে পোলার্ড হাকিয়েছিলেন ৬টি ছক্কা। নাসুমের ওভারটি থেকে যথাক্রমে আসে ৬,৬,৬,৬,৪,৬। ভারতীয় বোলার শিবাম দুবের সাথে যৌথভাবে আছেন সর্বোচ্চ রান দেওয়ার দ্বিতীয় তালিকায়। ১৪ থেকে ১৮ ওভার- এই ২৪ বলে বাংলাদেশী বোলাররা দিলেন ৭০ রান। বার্ল ও জঙ্গুয়ে ৭ম উইকেটে ৩১ বলে ৭৯ রানের জুটিতে ভর করে লড়াকু ১৫৮ রানের পুঁজি পেয়ে যায় স্বাগতিক দল।
জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ দল শুরুতেই হারিয়ে বসে লিটনের মূল্যবান উইকেটটি। তামিমতো অনেক আগেই ছেড়েছেন এই সংস্করণ। তাই এখন তাকিয়ে থাকতে হয় লিটনের ব্যাটের দিকে। সেই লিটনের ভালো ইনিংস ব্যতীত বাংলাদেশও সদা মলিন। দশম ওভারে মাত্র ৬০ রান তুলতে পারে টাইগার ব্যাটাররা। হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের ৪ উইকেট। বরাবরের মতন এদিনও বিজয় ভাল শুরু করে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। শান্তর ব্যাটিং ছিল পরিস্থির জন্য একদম বেমানান। এরপর মাহমুদউল্লাহ, আফিফ ও মেহাদি চেষ্টা করলেন বটে তবে সেটাকে পূর্ণতা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৮ রান। কিন্তু বাংলাদেশ থামলো ১৪৬ রানেই। হারল ১০ রানে। জুটল সিরিজ হারের কলঙ্ক। বাংলাদেশ তো বটেই, যে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষেই এই প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল জিম্বাবুয়ে। ঘরে-বাইরে মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণের ক্রিকেটে ২০১৩ সালের পর তাদের এই প্রথম সিরিজ জয়। এক সময় যে বাংলাদেশকে তারা বলে-কয়ে হারাত, অনেক বছর ধরেই সেই বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বাংলাদেশকে তারা ফিরিয়ে দিতে পেরেছে পুরোনো স্বাদ। হারের কারণ ব্যাখ্যায়ও ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মোসাদ্দেক দায় দিলেন এই ওভারকেই, ‘প্রথম ১৪ ওভারে আমরা খেলায় আধিপত্য দেখিয়েছি। কিন্তু এক ওভার খেলা বদলে দিয়েছে।’
৬৭ রানে প্রথম ৬ ব্যাটারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। এরপর সপ্তম উইকেটে খেলা ঘুরিয়ে দেন রায়ান বার্ল আর লুক জঙ্গুই। সপ্তম উইকেটে মাত্র ৩১ বলে তুলেন ৭৯ রান। এই ঝড়ের যাত্রা শুরু হয় নাসুমকে দিয়ে। তার ওভারে ৫ ছক্কা আর এক চারে ৩৪ নেন বার্ল। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা বাংলাদেশি কোন বোলারের সবচেয়ে খরুচে ওভার।
তবে শেষ ৬ ওভারে ৮০ রান তুলেও ১৫৬ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে যা তাড়া করা ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু দিকহারা পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ডুবেছে। চার ও পাঁচ নম্বর ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে ৪৭ বল খেলে তুলেন ৪২ রান। ২০ বলে ১৬ করেন শান্ত। ২৭ বলে কেবল ২৭ করেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। তাদের মন্থর ব্যাটিংয়ে তৈরি হওয়া রানের চাপ আর মেটানো যায়নি। আফিফ হোসেন ২৭ বলে ৩৯ করে অপরাজিত থাকলেও লাভ হয়নি। অধিনায়ক অবশ্য শুরুর উইকেট হারানোকেই রান তাড়া করতে না পারার কারণ বলছেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে উইকেট হারালে তাড়া করা কঠিন।’
জিম্বাবুয়েতে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও প্রিয় সংস্করণ ওয়ানডেতে সব পুষিয়ে দেওয়ার আশা মোসাদ্দেকের। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ২০১৪ সাল থেকে জিম্বাবুয়ের কাছে অজেয় বাংলাদেশ এবারও ধরে রাখতে চায় সেই ধারা, ‘সবাই জানে ওয়ানডেতে আমরা কত ভালো দল। আশা করি ঘুরে দাঁড়িয়ে সেখানে সেরাটা দেখাব।’

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন