ষক দলের মনোনয়ন লাভই বিজেয়ের একমাত্র পথ মনে করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা
আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় শাষক দলের মনোনয়ন লাভের দৌড়ে প্রায় ৪০ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে ব্যাপক তৎপড়তা শুরু করেছেন। দলের প্রভাবশালী পর্যায়ে নানামুখি তদবিরের পাশাপাশি এদের অনেকেই ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অনেকে তা জমাও দিয়েছেন। অবশিষ্টরা পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে এগুতে চাইছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই প্রথমে প্রশাসক এবং পরে মৌলিক গনতন্ত্রের আদলে ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হলেও আবার প্রশাসক নিয়োগ করে ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। বিধান অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, পৌর মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যন ও ভাইস চেয়ারম্যানরা ভোট দেবেন এ নির্বাচনে। জেলা পরিষদে সর্বশেষ চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হয় গত ১৭ এপ্রিল। তাদেরকেই আবার অন্তবর্তীকালীন প্রশাসকের দায়িত্ব দেয় সরকার। গত ৩১ আগষ্ট জেলা পরিষদের নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ইতিমধ্যে এ নির্বাচন বর্জন করায় ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মানেই নিশ্চিত বিজয়’ হিসেবে ধরে নিয়েই সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ভোটাররাও প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের। ফলে দলীয় মনোয়নকে বিজয়ের একমাত্র পথ ধরেই দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন। এমনকি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে বেশ কয়েকজন সাবেক এমপি’ও নানামুখি তৎপড়তায় থাকলেও প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
বর্তমানে ৬টি জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে দায়িত্বপালনকারী সাবেক চেয়ারম্যানগনও সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে। গত সপ্তাহেই পিরোজপুরে জেলা পরিষদের ভোটারদের নিয়ে সমাবেশ করেছেন বর্তমান প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজ। সেখানে ৭৪৭ ভোটারের ৬৮০ জন উপস্থিত হয়ে বর্তমান প্রশাসক মহিউদ্দিন মহারাজকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবী জানান উপস্থিত ভোটারগন।
বরিশালে জেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু, বর্তমান প্রশাসক ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক এমপি মাইদুল ইসলাম সবচেয় আলোচিত হলেও আরো ৪ জনের নাম রয়েছে মনোনয়ন প্রার্থীর আলোচনায়। এদের সবাই ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে সবাই অপেক্ষায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ-এমপি’র সিদ্ধান্তের। বরিশালে দলীয় মনোনয়নে তার কথাই যে শেষ কথা তা অলিখিতভাবে সত্যি বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাড. তালুকদার মোঃ ইউনুস, চেম্বার সভাপতি ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এ্যড. আফজালুল করিম দলীয় মনোনয়নের লক্ষে নানামুখি তৎপড়তা চালাচ্ছেন। বিষয়টি সর্ম্পকে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র সাথে সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। তবে তার ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন, ‘এবিষয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বোর্ডে প্রধানমন্ত্রী ও দল নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই হবেন দলীয় প্রার্থী।’ এখানে কারো দ্বিমত নেই। আর প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে খোজ খবর নিয়েই দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সাথে সভা করেই সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করবেন বলেও জানিয়েছেন আবুল হাসনাতের ঘনিষ্ঠজন।
ভোলা ও ঝালকাঠীতে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা তোফায়েৎল আহমদ ও আমীর হোসেন আমুর পছন্দের বাইরে যে দল যাবে না তা সবারই জানা। তাই তাদের কাছেই তদবীর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের।
ভোলাতে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক সাবেক চেয়ারম্যান পদে ৪ বার দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল মোমিন টুলু ছাড়াও মনোনয়নের আশায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি হামিদুল হক বাহালুল।
ঝালকাঠীতে চেয়ারম্যান এবং প্রশাসক মিলিয়ে ৪ মেয়াদ ধরে দায়িত্বে থাকা বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরদার শাহ আলম ছাড়াও সাধারন সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য ফয়জুর রব আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. জিকে মোস্তাফিজুর রহমান এবং সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আরেক সহ সভাপতি সালাউদ্দিন আহম্মেদ সালেক মনোনয়ন লাভের দৌড়ে আছেন।
পিরোজপুরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ৬ জনের নাম শোনা গেলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় মহারাজ’র জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হওয়া সময় ব্যাপার বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তবে এ জেলা পরিষদের মনোনয়ন লাভের দৌড়ে সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল নিজে ছাড়াও তার সহোদর পিরোজপুর সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবর রহমান খালেকের স্ত্রী সালমা রহমান হ্যাপী, আউয়ালের আরেক সহোদর যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান মহারাজ’ও রয়েছেন। আছেন সাবেক এমপি প্রিন্সিপাল শাহ আলম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ছাত্র নেতা ইসাহাক আলী খান পান্না’র নাম শোনা গেলেও এখনো প্রকাশ্যে কিছুই বলছেন না।
পটুয়াখালীতে মনোনয়ন চাইছেন আওয়ামী লীগের ১০ নেতা। বর্তমান প্রশাসক খলিলুর রহমান মোহন, জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর, সাবেক এমপি লুৎফুন্নেসা বেগমের স্বামী সাবেক উপজেলা ও পৌর চেয়ারম্যান সুলতান আহম্মেদ মৃধা, আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদক ভিপি আব্দুল মান্নান, যুবলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, এ্যাড. শাহিন মিয়া, তসলিম সিকদার, জেলা সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর মিয়া, ঢাবি’র সিনেট সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন এবং জেলা সহ সভাপতি প্রিন্সিপাল সৈয়দ বাবুল মনোনয়ন শাষক দলের প্রাপ্তির চেষ্টায় রয়েছেন।
বরগুনায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন বর্তমান প্রশাসক ও সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক দলের জেলা সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হোসেন মৃধা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা, দুই বার পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালনকারি এ্যাড. শাহজাহান মিয়া, দলের জেলা তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. মজিবুল হক কিসলু, এ্যাড হিমু মোল্লা এবং দল থেকে বহিস্কৃত এ্যাড. মোতালেব মিয়া।
তবে এবার দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাতেই দলের ত্যাগী ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করে মনোনয়নের দাবী উঠেছে। স্থানীয় এমপিদের তুষ্ট করে যাতে কেউ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না পায়, সে দাবী এবার তৃনমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন