মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

জাতীয়ভাবে সম্মান পাব কিনা জানি না, তবে এটা আমার শেষ ইচ্ছা-এ কে এম জাহাঙ্গীর খান

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের অপরিসীম অবদান রয়েছে। সত্তর-আশি দশকে যেসব সিনেমা দর্শক হৃদয়-মন আকূল করে তুলেছিল তার অধিকাংশই জাহাঙ্গীর খানের প্রযোজনায় নির্মিত। শিল্পপতি হয়েও তিনি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে বিনোদনের মাধ্যমে সিনেমায় তুলে ধরার জন্য এগিয়ে আসেন। এখানে ব্যবসা মুখ্য ছিল না। শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগই তাকে এ পথে নিয়ে আসে। তিনি জানতেন মানসম্মত সিনেমা দর্শক দেখলে এমনিতেই ব্যবসা হবে। এ ব্রত নিয়েই তিনি একের পর এক সুপারহিট সিনেমা দর্শকদের উপহার দেন। খ্যাতি পান মুভি মোগল হিসেবে। চলচ্চিত্রে তার অসামান্য অবদান জাতীয়ভাবে স্বীকৃত হওয়া প্রয়োজন বলে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করছেন। আবদুল জব্বার খানের প্রেরণায় সিনেমায় আগ্রহ। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও চলচ্চিত্র প্রযোজনা-পরিবেশনা করেছেন। ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘শুভদা’, ‘রূপবান’ ‘তুফান’, ‘নয়নমণি’, ‘বাদল’, ‘রাজকন্যা’, ‘সওদাগর’, ‘পদ্মাবতী’,‘রাজ সিংহাসন’, ‘কাঞ্চনমালা’, ‘রাখাল বন্ধু’ ‘রূপবান’ ‘কুদরত’ ‘সাগর কন্যা’, ‘নাগজ্যোতি’, ‘মা’ ‘বাবার আদেশ’ ইত্যাদির মতো দর্শক নন্দিত সিনেমা তিনি প্রযোজনা করেছেন। এই চলচ্চিত্র প্রেমী ও শিল্পমনস্ক গুণী ব্যক্তির সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে আমার শিক্ষক বলতে গেলে আবদুল জব্বার খান। তার পেছন পেছন ঘুরতাম। তিনি চিত্রনাট্য লিখতেন, বসে থাকতাম। গান করতেন, নায়িকাকে চিত্রনাট্য বোঝাতেন এসব দেখে দেখে শিখেছি এবং চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি। তিনি যখন ‘মুখ ও মুখোশ’-এর শুটিং করেন, তখন নাইন-টেনে পড়ি। শূটিং দেখার খুব শখ ছিল। ২৪ ঘণ্টা জব্বার সাহেবের পেছনে লেগে থাকত। সুলতানা জামান, সুমিতা, জহরত আরা, শবনম তাদের দেখতাম। সেই থেকে চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ জাগে। ১৯৭৩ সালে বাবা মারা গেলেন। তারপর সিনেমা প্রযোজনার সুযোগ পেলাম। তখন আমি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তবে আগে থেকেই পরিবেশক হিসেবে ছিলাম। প্রযোজনা-পরিবেশনা দুটোই একসঙ্গে করেছি। বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ সিনেমা দিয়ে ডিস্ট্রিবিউশন শুরু করি। মূলত ‘মা’ সিনেমাটি দিয়ে আমার প্রযোজনা শুরু। এরপর পুরোদমে প্রযোজনা শুরু করি। শিবলী সাদিককে দিয়ে বানালাম ‘নোলক’। তারপর ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, আমজাদ হোসেনকে দিয়ে ‘নয়নমণি’, অশোক ঘোষকে দিয়ে ‘তুফান’ ও ‘বাদল’, এফ কবীরকে দিয়ে ‘রাজকন্যা’, সওদাগর, পদ্মাবতী, মমতাজ আলীকে দিয়ে ‘কুদরত’ সহ ৩০টি সিনেমা প্রযোজনা করেছি। সিনেমাগুলো দারুণ দর্শকপ্রিয়তা পায়। সিনেমাগুলোর সাফল্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, যেহেতু আমি জানি, আমার দেশের দর্শক কী চায়, তা মাথায় রেখে সিনেমা করলে সেগুলো হিট হয়। কোন সিনেমা ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেতে পারে, তাও বুঝতাম। তবে ওসব সিনেমা করে সুনাম পাওয়া যায়, পয়সা পাওয়া যায় না। যেমন আলমগীর কবির ‘সূর্যকন্যা’, ‘সীমানা পেরিয়ে’ করেছেন, তিনি সুনাম পেয়েছেন, আমিও পেয়েছি; কিন্তু তিনি পয়সা পাননি, আমিও পাইনি। অশোক ঘোষ ‘তুফান’, আমজাদ হোসেন ‘নয়নমণি’ করেছে; এগুলো সুপারহিট হয়েছে। এগুলো টিমওয়ার্ক ছিল। সবার সঙ্গে আলোচনা করে, সবাই মিলে যে সিনেমা বানিয়েছি, সেগুলোই সাকসেসফুল হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ধারারগুলো সাফল্য পেয়েছে। প্রযোজক-পরিচালক আর শিল্পীর টিমওয়ার্কে একটি সিনেমা হিট করে। ক্রিকেটের মতো এখানেও দুইজন ভালো খেললে হবে না, ১১ জনই ভালো খেলতে হবে। আমার নেশা ছিল ফিল্ম। ছোটবেলা থেকেই সিনেমা বানাব, নায়ক হবো, পরিচালক-প্রযোজক হবো এ ইচ্ছা আমার ছিল। যার যা নেশা, সে সেটিই করে। আমার বয়স ৭৭। সাংবাদিক, দেশের জনসাধারণের কাছ থেকে অনেক সম্মান পেয়েছি। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘আলমগীর পিকচার্স’ প্রায় ১৬ বছর ধরে বন্ধ, কিন্তু এর কথা মানুষ এখনো মনে রেখেছে, এটিই আমার জীবনের সাফল্য। ব্যবসা, সিনেমা প্রযোজনার মাধ্যমে আমি ও আমার পরিবার দেশের সেবা করেছি, এখনো করছি। তিনি বলেন, দর্শকের মনের মতো সিনেমা নির্মাণ করলে, তা না দেখার কারণ নেই। আমার এক তুফান সিনেমাটি মানসী সিনেমা হলে এক বছর চলেছিল। ‘নয়নমণি’ও এক হলে এক বছর চলেছিল। আমার সাফল্যের আরেকটি কারণ হলো আমি পরিচালকদের পেছনে লেগে থাকতাম। আসলে লেগে থাকলে যে কোনো কাজই ভালো হয়। লেগে থাকার বিকল্প নেই। তবে এ লেগে থাকাটা হতে হবে পরিকল্পিতভাবে। আমি কী করতে চাই, কী অর্জন করতে চাই-এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। সিনেমা একটি বিরাট শিল্প। এতে মেধা ছাড়া সফল হওয়া যায় না। কেবল সিনেমা বানানোর জন্য বানানো মানসিকতা থাকলে কোনো দিনই ভাল সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়। আজ সিনেমার দুর্দশার অন্যতম কারণই হচ্ছে, মেধার সংকট। চিন্তা নেই, পরিকল্পনা নেই, দূরদৃষ্টি নেই। সিনেমা তো সহজ বিষয় নয়। দর্শক কী দেখতে চায়, তা অনিশ্চিত। এই অনিশ্চয়তাকে সামনে রেখেই সিনেমা নির্মাণ করতে হয়। একজন প্রযোজক-পরিচালকের এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে যে, দর্শক কী চায় তা অনুমাণ করা। সময়কে ধারণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে এর কোনো কিছুই দেখা যায় না। ফলে দর্শক সিনেমা প্রত্যাখ্যান করবে, এটাই স্বাভাবিক। জীবনের এই সময়ে এসে নিজের চাওয়া সম্পর্কে এ কে এম জাহাঙ্গীর খান বলেন, আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট দিয়েছেন। অর্থ, সম্মান সবই পেয়েছি। তবে মনের মধ্যে একটা আফসোস মাঝে মাঝে উঁকি দেয়, যদি জাতীয়ভাবে সম্মান পেতাম, তাহলে এ জীবন পূর্ণ হতো। জীবনের শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হতো। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমি তো আমার দেশের শিল্প-সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করেছি। আমি যদি চলচ্চিত্রের সেই সময়টায় না থাকতাম, তাহলে কি দর্শক এতগুলো সুন্দর সিনেমা পেত। একটা শূন্যতা তো থেকেই যেত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন