এবারের বিপিএল আসরের সাকুল্য বিবেচনায় ভালোই খেলেছে বালাদেশের ক্রিকেটাররা। আসর জুড়েই আলো ছড়িয়েছেন তারা। দল ফাইনালে পৌঁছালে হয়ত তামীম ইকবাল অথবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরাই হতেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। আবার কেউ কেউ হঠাৎ করেই জ্বলে উঠেন কোন এক ম্যাচে। আদতে বিপিএল এবার বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগে পরিণত। তেমনি কিছু পারফর্ম্যান্সের ওপর আলোকপাত করেছেন ইমামুল হাবিব বাপ্পী
দূর্দান্ত সাব্বির
গেইল নামক দানব প্রতিবারই জমিয়ে দেন বিপিএল উত্তাপ। টি-২০ ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা সেনশেসনের অনুপস্থিতিটা প্রথম দিকে এবার ভালই টের পাচ্ছিল দর্শক। তার শূন্যতা পূরণ করবে কেউ, তেমন কাউকেও পাওয়া যাচ্ছিল না। চার-ছক্কার বাহারী প্রদর্শনী দেখতে এসে একটার পর একটা ম্যাচে হতাশ দর্শকরা। তবে গেইলের দানবীয় ব্যাটিং আগ্রাসী রূপ যে মনে-প্রাণে ধারণ করেন, ক্যারিবিয়ান সুপার স্টারের সেই কার্বন কপি হয়েই শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হাজির হন সাব্বির রহমান রুম্মান। মাঠের এক প্রান্ত থেকে উদ্দীপক গান, সঙ্গে কান ঝালাপালা করে দেয়া বাদ্য-বাজনাÑটুয়েন্টি-২০ বিনোদনের এসব অনুষঙ্গও হার মানে সাব্বির রহমান রুম্মান ঝড়ের (৬১ বলে ৯ চার ৯ ছক্কায় ১২২ রান) কাছে। ২২ গজি পীচটা বার বার প্রকম্পিত হয়েছে সাব্বিরের বিশাল চার ছক্কায়! রিখটার স্কেলে সেই ভুমিকম্পের মাত্রাও যে নিরূপন হয়ে পড়ে অসাধ্য!
বরিশাল বুলসে’র দুই অভিজ্ঞ বাংলাদেশি শাহরিয়ার নাফিস (৪৪ বলে ৬৩) ও মুশফিকুর রহিমের (৫২ বলে ৮১ নট আউট) ব্যাটিংয়ে ১৯৪/৪ রানের জবাবে তার চেয়েও বড় কিছু করতে হত রাজশাহী কিংসকে। এমন ম্যাচে অন্য এক শিহরণ জাগানিয়া রোমাঞ্চ উপহার দেন সাব্বির। বিপিএএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১২২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। দুখের বিষয় হল ৬১ বলে ১২২ রানের ইনিংসের পরও শেষ ওভার থ্রিলারে ৪ রানে হেরে যায় সাব্বিরের দল। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেট তার নিজস্ব ফরমেট, তা জানিয়ে দিতেই চারের সঙ্গে সমতালে ছক্কা হাকান সাব্বির (৯টি করে চার ও ছক্কায় ৬১ বলে ১২২ রান)। ২০১২ সালে বিপিএল অভিষেকে বরিশাল বার্নাসের হয়ে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে গেইলের ৬১ বলে ১১৬ রান এতদিন ছিল বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। গেইলের সেই ঝড় ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি এখন সাব্বিরের দখলে!
তার ১২২ রানের মধ্যে চার-ছক্কায় আসে ৯০ রান! গেইল ছাড়া বিপিএল টি-২০তে এক ম্যাচে কারো ইনিংসে চার-ছক্কা থেকে আসেনি এতো রান! এই ইনিংসে চার-ছক্কায় সর্বোচ্চ ৯২ রানের রেকর্ডটি এখনো অক্ষত গেইলেরÑ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বিপিএল টু তে সিলেট রয়্যালসের বিপক্ষে ১১৪ রানের ইনিংসের মধ্যে ৯২ রানই নিয়েছিলেন তিনি চার ছক্কায় (৫ চার ১২ ছক্কা)। বিপিএল’র ইতিহাসে প্রথম সেঞ্চুরির ইনিংসে (ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের বিপক্ষে বরিশাল বুলসের হয়ে) ১১৬ রানে চার-ছক্কায় ৯০ রানেও বিস্ময়টা ছিল এতোদিন গেইলকে ঘিরে। গেইলের সেই দ্বিতীয় রেকর্ডকে ছুঁয়ে ফেলেন সাব্বির।
সানির বিশ্বরেকর্ড
যে ফরমেটের ক্রিকেটে চার ছক্কা-চার দেখতে দর্শক মাঠে আসেন, বোলারদের উপর ব্যাটসম্যানদের ছড়ি ঘোরানোর সেই ফরমেটের ক্রিকেটেই ১৬ বলের বোলিং ইনিংসে কোন রান না দিয়ে তিন তিনটি শিকার (২.৪-২-০-৩)! সবচেয়ে হিসেবি বোলিংয়ে সাফল্য, ৩ উইকেটÑএমন বোলিংয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন আরাফাত সানি। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে এতোদিন ইনিংসে ৩ উইকেটে সেরা স্ট্রাইক রেট ছিল বাঁ হাতি স্পিনার দিনুকা হিতিয়ারাচির (০.৫-০-০-৩)। ২০০৭ সালে কলোম্বোর ব্লুমফিল্ডে চিলাও’র হয়ে বার্গারের বিপক্ষে ৫ বলের ওই ইনিংসে ৩টি শিকারে উড়েছেন হাওয়ায় ওই বাঁ হাতি স্পিনার। রানহীন একাধিক উইকেট টুয়েন্টি-২০তে আছে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২০১১ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের সুরেশ রায়না (০.৩-০-০-২) এবং এ বছর ওভালে সারের হয়ে হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে অফ স্পিনার হাসান রাজার (০.৩-০-০-২)। ১২ বলের ইনিংসে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে শ্রীলংকার কুলাসাকেরার রানহীন ২ উইকেটের ম্যাজিক ফিগার (২-২-০২) ও মেনেছে হার আরাফাত সানির বোলিংয়ের কাছে। কারণ, সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেট টুয়েন্টি-২০তে ১২ বলের বেশি বলের ইনিংসে রানহীন উইকেটে বিশ্বরেকর্ড আরাফাত সানিই একমাত্র!
অথচ বিশ্বরেকর্ডের কথা মাঠে নয়, জেনেছেন খেলা শেষে আরাফাত সানি। ম্যাচ শেষে সেদিন সানির কথাতেই তার প্রমাণ মেলেÑ ‘রেকর্ডের ব্যাপারে জানতাম না। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো আমার সেরা বোলিং ফিগার। প্রথম ওভারটা যে মেডেন হয়েছে, তা বুঝতেই পারিনি। আমার প্রথম ওভারে যে রানআউট হলো, আমি ভেবেছিলাম ওই বলে রান কাউন্ট হয়েছে। আর শেষ বলে যে দুই রান হলো,তা লেগবাই তাই ওই ওভারটি যে মেডেন ছিল,তা বুঝতে পারিনি।’ লো স্কোরিং ম্যাচে সেদিন দুর্দান্ত বোলিং করেন অফ স্পিানার সোহাগ গাজী (১/৬) ও লেগ স্পিনার আফ্রিদিও (৪/১২)। খুলনা টাইটান্স ইনিংসে সেদিন ৬৪ বলের মধ্যে ৪৫টিই হয় ডট!
অ্যাকশন সংশোধন করে, ব্রিসবেনে বায়ো মেকানিক্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে, আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বোলিংয়ে ফিরেই সানির এই সাফল্য। টুয়েন্টি-২০তে নিজের এই বিশ্বরেকর্ড ইনিংসের দিনে বিপিএল ইতিহাসে খুলনা টাইটান্সকে দিয়েছেন আরাফাত সর্বনিন্ম স্কোরের লজ্জা (৪৪/১০)। মাত্র ৬৪ বলে অল আউট খুলনা টাইটান্স! খেলেছে দলটি সর্বমোট ৫৬ মিনিট! সেদিন শুরুটা করেছিলেন আফ্রিদি (৩-০-১২-৪), শেষটা আরাফাত সানি (২.৪-০-০-৩)! বিপিএলএ এর আগে সর্বনি¤œ ৫৮/১০ স্কোর ছিল বরিশাল বুলসের, গত বছর সিলেট সুপার স্টারসের বিপক্ষে বরিশাল বুলসের সেই বিধ্বস্ত চিত্রও হার মেনেছে গতকাল। ৬৪ বলে খুলনা টাইটান্সকে ৪৪ রানে অল আউট করে রংপুর রাইডার্সকে ৯ উইকেটে জিততে খেলতে হয়েছে মাত্র ৫০ বল!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন