পুঁজি যখন খুব বেশি নয়, ম্যাচ জিততে তাই শুরুতেই চাই উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদের হাতে বল তুলে দেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান প্রথম দুই বলে দুই উকেট নিয়েই যেন দিলেন এই পেসার। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে বিশ্বকাপের মূল আসরে জয় খরা ঘোচাল বাংলাদেশ। গতকাল হোবার্টে নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারাতে তাসকিন ছিলেন সবচেয়ে ঝাঁজালো। ৪ ওভার বল করে ২৫ রান দিয়ে তুলেছেন ৪ উইকেট। বল হাতে দারুণ অবদান রাখেন হাসান মাহমুদও। ৪ ওভারে একটি উইকেট মেডেনসহ ১৫ রান দিয়ে তরুণ এই পেসার নেন ২ উইকেট। সাকিব ও সৌম্য সরকার নেন একটি করে উইকেট। তাদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশের ১৪৪ রানের জবাবে ১৩৫ রানে আটকে যায় ডাচরা। বৈশ্বিক আসরে সুপার টুয়েলভ পর্বে তুলে নেয় নিজেদের প্রথম জয়। সুপার এইট, টেন বা টুয়েলভ পর্বে মিলিয়ে আগের ১৬ ম্যাচেই হেরেছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশের এই সাফল্যের মূল কারিগর তাসকিন। ইনিংসের প্রথম দুই বলে শিকার ধরে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন তিনি। পরে আরও দুই উইকেট নিয়ে এই পেসারের বোলিং বিশ্লেষণ, ৪-০-২৫-৪। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম ৪ উইকেট পেলেন তাসকিন। সঙ্গে ৪২ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন ২৭ বছর বয়সী ক্রিকেটার। এই সংস্করণে তাসকিনের আগের সেরা ছিল ১২ রানে ২ উইকেট, গত বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে।
২০ ওভারের বৈশ্বিক আসরে ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার তিনি। দেশের একমাত্র বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট আছে কেবল মুস্তাফিজুর রহমানের। এই পেসার চার উইকেট নিয়েছেন একবার। তিন বার এই কীর্তি গড়েছেন সাকিব আল হাসান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য এর আগে চারবার চার উইকেট নিয়েছেন তাসকিন। অভিজ্ঞতা আছে ৫ উইকেট নেওয়ারও। সেটি ২০১৬ সালের বিপিএলে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে চট্টগ্রাম ভাইকিংসের হয়ে।
এদিন বেলেরিভ ওভালে সতীর্থদের ব্যর্থতায় ১৪৪ রানের সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। এই পুঁজিই পরে বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট করে তোলেন তাসকিন অসাধারণ বোলিং করে। তার ২৫ রানে ৪ উইকেটের সৌজন্যে বাংলাদেশ পেয়ে যায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে প্রথম জয়। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে তাসকিন বলছিলেন, ‘এই জয়টা আমাদের খুব দরকার ছিল। দল হিসেবে আমরা খুবই ভালো খেলেছি। আমি নিজে অবদান রাখতে পেরেছি। ভালো লেগেছে।’ নিজের বোলিংয়ের প্রসঙ্গে তাসকিন যোগ করেন, ‘আমি মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক মতো করার জন্য চেষ্টা করেছি। প্রথম ইনিংসে নেদারল্যান্ডসের বোলিং দেখছিলাম। ভালো মুভমেন্ট ছিল। ক্যারিও ছিল। সে জন্য আমি টেস্ট ম্যাচ লেংথে বল করেছি। দুই দিকে বল মুভ করাতে চেয়েছি। এটাই কাজে দিয়েছে।’ একটি ক্যাচ নিয়ে ফিল্ডিংয়েও অবদান রেখেছেন তিনি, ‘হ্যাঁ, আমি চেষ্টা করেছি যে কোনো জায়গা থেকে যেন দলের জয়ে সাহায্য রাখতে পারি।’
সাধারণত স্পিন নির্ভর দল হিসেবেই পরিচিত বাংলাদেশ। তবে উপমহাদেশের বাইরে খেলতে গেলে স্পিনারদের প্রভাব থাকে না তেমন। তাই স্পিনিং আক্রমণের ধারা থেকে বেরিয়ে গত কয়েক বছরে ফাস্ট বোলিংয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। যার সুফলও মিলছে প্রায় নিয়মিত। তাসকিনের এক একটি উইকেটের সময় টিভি ক্যামেরা ঘুরে ফিরে বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের দিকে যাচ্ছিল। ম্যাচ সেরার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ডের প্রসঙ্গও এল। প্রোটিয়া কিংবদন্তির প্রসঙ্গে তাসকিন যোগ করেন, ‘বোলিংয়ের সময় আমার কব্জির অবস্থান ভালো হচ্ছে। আমি দুই দিকেই বল মুভ করাতে পারি। আমি উন্নতিতে মনোযোগ দিচ্ছি। আমি বিশ্বমানের বোলার হতে চাই।’
বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য এ জয় অন্যরকম স্বস্তির। কেননা সেই প্রথম থেকে শুরু করে সবগুলো আসর খেলেছেন সাকিব। দলের দীর্ঘ জয়খরার একমাত্র প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। এবার তার অধিনায়কত্বেই বাংলাদেশ পেয়েছে মূল পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় জয়। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে সাকিব বলেন, ১৫ বছর ধরে জয় না পাওয়ার বিষয়টি মাথায় কাজ করছিল বলেই ব্যাটিংয়ে কিছুটা নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ, ‘একটি জয় পাওয়া আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০০৭ থেকে শুরু করে আমি সবগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি। কিন্তু (ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর) জয় পাইনি। এটি আমাদের ভাবনায় ছিল। যে কারণে ব্যাট হাতে আমরা কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। আমাদের শুরুটা ভালো ছিল। কিন্তু মাঝের ওভারে উইকেট হারিয়েছি যা আমাদের কোনো সাহায্য করছিল না। তবে আমরা জানতাম এই পিচে আমাদের বোলিং আক্রমণের জন্য ১৫০-১৫৫ রান যথেষ্ট। আমরা ১০ রান কম ছিলাম। তবে আমাদের পেসাররা যেভাবে বোলিং করেছে, দুর্দান্ত।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন