শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহান বিজয় দিবস সংখ্যা

বিজয় দিবসের পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফাহিম ফিরোজ
স্মার্টফোনে রোহিঙ্গা

স্মার্টফোনে আজ রাত ঢোকে পড়ে
মরিচের গুঁড়ো ছড়াতে ছড়াতে

দেখলাম, নাফনদের কাদায় কেমন উপুর
হয়ে আছে রোহিঙ্গা গৌরব

আণবিক চক্র একটুও দেয় না ধমক
           নানুমণি, দ্যাখ্যে দ্যাখো...
শুধু মুখের ভেতর
টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে বসে আছে তারা
               গা-জ্বলে আমার

ওই দিকে, দ্রুতলয়ে বাড়ে মগের কামড়...
সবখানে আগুন-বরফ ছড়াছড়ি যেন ভাইবোন
জড়িয়ে রয়েছে গলা। চারদিকে এলোচুল হয়ে
ছড়ানো ছিটানো মৃতাংশ, ধুয়া-ধুয়ান্তর ...
ফোনটা সবই আমার উলটে-পালটে দেখায়
বাহে! প্রাণে সহেনাতো, ওআইসিও শামুক
হয়ে আছে আজ। মিয়াভাই, শাহ সুজাকে সব কেরে নিয়ে
এরাই তো হত্যা করে ছিল। দাদাভাই, এরাইতো
শতবর্ষ ধরে আমাদের হাট-বাজারের নিঃশ্বাসসমূহ
আত্মসাৎ করেছিল। করিমুনকে কেমন চিৎ করে
ফেলে গেছিল মেঘনাকূলে। শামসু ও কার্তিকের
হাত ফুটো করে, বেত ঢুকিয়ে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল...
আজও নদীর ঢেউ ও বাতাস এসব নিয়েই
যত গল্প করে হাট-হাটান্তর, বঙ্গদেশে

কত ভাল...  বনের পাখিরা ভালো জানে।
 ১২/১২/২০১৬


আল মাহমুদের কবিতা
ছোবল

বেরিয়ে যখন পড়েছিলাম ভাবিনি তো
বুকের মধ্যে জ্বলছে আমার মস্ত ক্ষত
ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে কেবল রক্তকণা
কোথায় যেন লুকিয়ে আছে সাপের ফণা
কেবল ছোবল হানছে বুকে বিষের জ্বালা
বিষকে তুমি বলছ তোমার বরণডালা
তাহলে দাও মালাটি দাও পরিয়ে গলে
বিষের কামড় যাক জুড়িয়ে ফুলের তলে।

জলে না অশ্রুজলে

ফেরার সময় হয়েছে এ কথা জানি,
পথ ভরে আছে বর্ষার নীল পানি।
মনে হয় যেন জলে জলে একাকার,
আমার জীবন আমার অহংকার।
তবু যেতে হবে পা বাড়িয়েছি জলে,
কোথায় জীবন? মৃত্যুর অঞ্চলে।
আমি চলে যাই অস্তাচলের পথে,
যেখানে সূর্য লাল হয় কোনোমতে।
এখনই নামছে অন্ধকারের তলে
ডোবার লালিমা লাল হলো মুখখানি
বিদায় বিদায় কেবল অথই পানি
তরঙ্গ খেলে জলে না অশ্রুজলে!


সেই পথে যাব
আয়েশা সিদ্দিকা

আমি এক ডানা ভাঙ্গা ঝড়ের কপোত
এসেলার কাঁধে
সিক্ত পথে হেঁটে চলেছি, জানি না কত দূর যাব..
হোক না পথ যতই রুক্ষ্ম- আঁকাবাঁকা, সর্পিল
হৃদয়ে আছে পলিমার প্রতিবিম্ব
সেই পথে যাব, যেই পথে প্রত্যুষের
গানেরা বিজয়ে মুখর।

সভ্যতার গান
সায়ীদ আবুবকর

সভ্যতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ওঁৎ পেতে রয়েছে ঘাতক,
মানুষে মানুষে শুধু সুপ্রাচীন সাম্প্রদায়িকতা;
শুচিশুদ্ধ মনে করে কেবলি নিজেকে সব লোকÑ
কমেছে কি কোনো কালে মানুষের আদিম মূর্খতা?

মধ্যযুগের চেয়েও ভযাবহ আধুনিক যুগ:
গণতন্ত্র ধর্মান্ধতা আর উগ্র জাতীয়তাবাদ
হিংস্র হাঙরের মতো ফেলছে গিলে তাবৎ মুলুক;
মানুষের মধ্যে শুধু মানুষকে মারবার সাধ।

কার কাছে যাবে নারী, কার কাছে শিশুদের ঠাঁই?
নিরন্ন নিগৃহগণ থাকবে কোন্ আকাশের তলে?
ঘৃণার আগুনে পুড়ে আরাকান হয়ে গেছে ছাই,
আণবিক বোমা পড়ে ব্যবিলনের জলে ও স্থলে।

ছেড়েছে সকল সীমা বর্বরতা মেকি সভ্যতার;
চোখে যত আলো লাগে, তার চেয়ে বেশি অন্ধকার।
      


শ্যামল ঘ্রাণের ধূলিকণা
রোকেয়া ইসলাম

চোখ বুজলেই আমার ভেতরে ছড়ায়
মাটির সাথে আমি আত্মার দায়
নেমে আসে তের শত নদীর প্রবাহ
বঙ্গোপসাগর উত্তাল উর্মিময়
কণ্ঠপোড়া জ্বালানিতে জ্বলে উঠে অগ্নিমশাল
ঝরা পাতাসম জীবন অতিতুচ্ছ তেজস্বী সংগ্রাম
ঝলসে উঠে পিতার লাসসেফেদ শাড়িতে জননী আমার
বাতাসে বাজে বীরঙ্গনার সকরুণ আতি
আমার ভেতরে জেগে থাকে
শ্যামলে সবুজে ধূলিকণা পুষ্পসৌরভে
রক্ত¯্রােতে ¯œান সমাপনে শুদ্ধ পতাকা
 গৌরবে উড়ছে ঐ
আমার ভেতর নিরন্তর জেগে থাকে বাংলাদেশ।



বাড়ে
হাবীবুল্লাহ সিরাজী

পুবে বাড়ে, পশ্চিম-উত্তরে বাড়ে, এ শহর বেড়ে ওঠে ক্রমে।
রাস্তা বাড়ে, ঘর বাড়ে, মনুষ্য-বসতি বাড়ে
গাড়ি বাড়ে, নারী বাড়ে, বাড়ে মন্ত্রী, নেতাÑ
শিশুর ক্রন্দন বাড়ে, দল বাড়ে, মিটিং মিছিল
কালি ও কলম বাড়ে, সৈন্য বাড়ে, বাড়ে সেনাপতি
বুলেট-বন্দুক বাড়ে, ব্যবসায় আয় বাড়ে দ্রুত
টবের গোলাপ বাড়ে, বাড়ে ঈশানের কালো মেঘ
জ্ঞান বাড়ে, গর্ব বাড়ে, আন্তর্জাতিক হারে বাড়ে দ্রব্যমূল্য
বাড়ার বয়স নেই, কেবল সে বাড়ে...
রোদে রাঙা ইটের পাঁজা তার উপরে বসলো রাজা
ঠোঙা ভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।
সাল বাড়ে, কল্পনা-জল্পনা বাড়ে
গ্যাস বাড়ে, খাদ্য বাড়ে, যাবতীয় টেলি বাড়ে
কাগজ-রেডিও বাড়ে, অন্ধ বাড়ে, খোঁড়া বাড়ে
রোদ বাড়ে, রোদের চশমা বাড়ে, এ শহরে ফুটপাত বাড়ে
কাজ বাড়ে, হাড্ডি বাড়ে, ধোঁয়া-পানি সব বাড়ে
বছর বছর বাড়ে উন্নতির মোটা মোটা বইÑ
ঘুষ বাড়ে, কবি বাড়ে, রিকশা-ঠেলা-মশা বাড়ে
সার্কাস-সঙ্গীত বাড়ে, কামার-ছুতার বাড়ে
ইঁদুর-বিড়াল বাড়ে, কুকুরের ডাক বাড়ে, ধর্ম-কর্ম বাড়ে
রাজা-মায়া সব বাড়ে, সারের গুদাম বাড়ে
সদর-অন্দরে বাড়ে ক্ষুধাÑ
রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা তার উপরে বসলো রাজা
ঠোঙা ভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।


সেই থেকে আমি একা
নাহার আহ্মেদ

ফুলে ফুলে ভরা বাসর থেকে
প্রিয়জন গেল একলা রেখে
আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখি
দীর্ঘ নয়টি মাস।
ভাবিনি কখনো ফিরবে না সে
হবে না যে আর দেখা
সেই থেকে আমি একা।
মেহেদীর রঙ তখনো মোছেনি
দু’হাত থেকে আমার
সাহস দিলাম জীবন সাথীকে,
মুক্তিযুদ্ধে যাবার
এলো না ফিরে আর সে কখনো
দিয়ে গেল স্বাধীনতা,
সেই থেকে আমি একা।
সুখ পাখি আর বাঁধিনি বাসা
স্বপ্নেরা গেছে পুড়ে
স্মৃতিগুলো শুধু আপন হলো
শূন্য হৃদয়জুড়ে।


বিজয় বন্দিশে
আল মুজাহিদী

হে স্বদেশ। আজ তোমার আবির্ভাবতিথি। বিজয় বন্দিশে
বেজে ওঠে নিখিল অর্ক্সেস্ট্রা।
সূর্যকান্তি জীবন্ত প্রত্যুষ। মুক্তি সমীরন বইছে দিগ-দিগন্তরে
সমুদ্র উত্তাল। প্রকৃতি অস্থির। নাবিকের
নোঙর ছেঁড়া আবাহন।
এখন জলতরঙ্গের নৃত্যোৎভাস! পরিক্রমণের বাতিঘরও
দেদীপ্যমান। অন্তহীনতার মোহনায় মিশে গেছে
হে স্বদেশ! দিগন্ত নিচয়।
আজ তোমার মহান উৎসবÑ সব প্রতিরোধ ব্যুহ
ধ্বংস-লুপ্ত! যুগের জাহাজ জাহাজ ঘাটায় প্রতিসারণের
¯্রােতধারা ভেঙে ভেঙেÑঅতিক্রান্ত সৈকতের তীরে।
রক্তপ্রবল এবং রুধির শস্যের কণাÑ
সূর্য রশ্মিবন্ত জীবন্ত প্রত্যুষ।
স্বদেশি নাবিক কপিকলে উত্তোলন করেছে
তোমার পতাকা।
হে স্বদেশ।
আজ তোমার আবির্ভাবতিথি : স্বাধীনতা
সূর্যকান্তি জীবন্ত প্রত্যুষ। আমাদের অস্তিত্বের স্বর গ্রামে
ভেসে আসে এই উপমহাদেশে, এশিয়া, আফ্রিকা
সমগ্র পৃথিবী।




আমি ঋণী প্রতিটি ধূলিকণার কাছে
জাহানারা আরজু

আমি ঋণী প্রতিটি ধূলিকণার কাছে
রাত থেকে দিন, আর দিন থেকে রাতের
প্রতিটি কাক্সিক্ষত মুহূর্তের কাছে
ধল পহরের ফুটি ফুটি আলো ছিঁড়ে যখন
ধ্বনি ওঠে, আস্সালাতু খায়রুম মিনাননাউমÑ
ওঠ, নিদ্রা হতে সালাত ভালো, সে দুর্লভ মুহূর্তের কাছে,
প্রস্ফুটিত সকাল থেকে মধ্যদিনের কর্মকোলাহলের কাছে
সুষুপ্ত গভীর রাত আর সৌরম-লের অসংখ্য নক্ষত্রের কাছে!
আমি ঋণী আঙিনার কোণে দাঁড়ানো নিঃসঙ্গ ওই প্রাচীন
বৃক্ষটির গাঢ় সবুজ পত্রাবলীর কাছে
সু¯িœগ্ধ দোলনচাঁপার বৃষ্টি ভেজা উতাল বাতাসের কাছে,
অলিন্দে চুম্বনরত পায়রা দম্পতির কাছে এবং উঠোনে
ধূলি¯œাত খয়েরি শালিকটির কাছে।
আমি ঋণী সেই প্রতিবেশী জীবিত ছেলেটির কাছে
যার বাদামি বুকের শ্লেটে লেখা ছিল মুক্তির সনদ গণতন্ত্র মুক্তি পাক
বুলেটবিদ্ধ সেই রক্তাক্ত শহীদ তরুণ দেহটির কাছে।
ঋণী আমি প্রতিদিনের শ্রমক্লান্ত শিরা ওঠা
ইটভাঙা হাতের কাছে হাতুড়ির ঘায়ে যে বিচূর্ণ করে কঠিন  ইট
এবং পরম মমতায় যে বর্ষীয়ান মহিলা রোজ ধোঁয়া ওঠা
ভাত বেড়ে দেয় টেবিলের ওপর সে রমণীর কাছে,
প্রচ- ভিড় ঠেলে যে কিশোরী এসে তুলে ধরে তার
সযতেœ গড়া ফুলের তোড়াটি কাতর অনুনয়ে
সামান্য মূল্যের বিনিময়ে তার কাছে
আমি ঋণী দেউড়িতে বসে থাকা অভুক্ত ভিখিরিটির কাছে!
আমার অক্লান্ত কলমে ঝাঁক ধরে উঠে আসে সব,
বড় বেশি চেনা, বড় বেশি আপন আমার, আমি যে দায়বদ্ধ সর্বক্ষণ
অনেক ঋণে ঋণী ওদের কাছে নিঃসর্গের প্রতিটি পত্রলতা ধূলিকণা
আজন্ম পরিচিত প্রতিটি সুখ-দুঃখের মুহূর্তের কাছে ঋণী আমি।
যতদিন বাঁচি এ ঋণ শোধ করতেই হবে আমাকে।
তাইতো প্রত্যহ নিদ্রা হতে জাগরণের আহ্বান ধ্বনি
আমাকে তাগিদ দেয় অনন্ত ঘুমের সময় পড়ে আছে সম্মুখে এখন ওঠ, জাগ ডুবে যাও কর্মকোলাহলে
সব ঋণ শোধ করে যেতেই হবে আমাকে
নিষ্করুণ সময়ের শকটের দিকে আমরা যে সবাই দ্রুত ধাবমান!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন