শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

আক্রমণাত্মক মানসিকতায় খেলতে চায় বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

লাল বলের সঙ্গে বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের সম্পর্কটা টক আঙ্গুরের মতো! দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি যে সর্বাঙ্গীকভাবেই সাদা বলমুখী। চলমান সফরে ভারত যখন ওয়ানডে সিরিজ হারে, তখন টাইগারদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল টেস্টে প্রতিপক্ষের টুঁটি চেপে ধরার। কিন্তু গ্রামবাংলার সেই প্রচলিত প্রবাদের মতোই বলতে হয়, ‘যেই মাথা সেই কপাল’। হতশ্রী ফিল্ডিং এবং আত্মসমর্পণ করা ব্যাটিংয়ে প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামে সত্যিকার অর্থেই হলো না তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আজ থেকে মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্টের আগে বাংলাদেশ দলের প্রধান লক্ষ্য তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা। বাংলাদেশ বোলিং কোচ অ্যালেন ডোনাল্ডের মতে, টিগারদের মানসিকতা হওয়া উচিত চ্যাম্পিয়ন দলের মতোই। সেই লক্ষ্যেই আজ বছরের শেষ ক্রিকেট পরীক্ষায় ভারতের বিপক্ষে লড়াই করতে যাচ্ছে।
ঐতিহ্যগতভাবেই মিরপুরের উইকেট মারাত্মক ধীরগতির ও নিচু বাউন্সের। তবে এই মাঠে অনুষ্ঠিত সবশেষ টেস্ট ম্যাচ দারুণ কার্যকরী ছিল পেসাররা! দুঃখিত, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যে কার সেই টেস্টে অসম্ভব সফল ছিল লঙ্কান পেসাররা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৯টি উইকেটই নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই পেসার। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এটি ব্যতিক্রমী ঘটনাই। ১৪ বছরের মধ্যে ইনিংসে পেসারদের সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ছিল সেটি। টাইগাররা বোলিং করেছিলেন যথারীতি সেই স্পিনের মন্ত্র মেনে। তবে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড চান বোলাররা সেই কৌশল থেকে সরে এসে ইংল্যান্ডের পেসারদের মানসিকতা অনুসরণ করে। আজ ভারতের বিপক্ষে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক বোলিং করতে পারেন বলেও মনে করেন এই বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে ডোনাল্ড বলেন, ‘আমি সবসময়ই পাকিস্তানে ইংল্যান্ড পেসারদের মানসিকতার উদাহরণ দিয়েছি। কীভাবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। তিন স্পিনার থাকলেও আপনার একটু উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে, পেসার হিসেবে আপনি ব্যয়বহুল বোলিংও করতে পারেন। আপনি শর্ট বা ফুললেংথে দীর্ঘসময় বোলিং করতে পারেন, অথবা ধরুন ৪ ওভারে সব কিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন।’
চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টে ভারতের দুই পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও উমেশ যাদবের বোলিংয়ের উদাহরণও টেনেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান, ‘আমার মনে হয় শেষ টেস্ট থেকে এ শিক্ষাই পেয়েছি। সিরাজ ও উমেশ যাদব যেভাবে করেছে। পেসারদের কাছ থেকে আমি সেধরনের আক্রমণাত্মক মানসিকতা চাই।’ তাছাড়া ডোনাল্ড দিলেন একটি সুসংবাদ, আজকের ম্যাচে তাসকিন আহমেদ ফিরবেন বলে জানিয়ে গেলেন। তবে চোটের কারণে এ টেস্টে খেলা হচ্ছে না ইবাদত হোসেনের। দ্বিতীয় পেসার হিসেবে থাকবেন খালেদ আহমেদই। তরুণ এ পেসারের বোলিং নিয়ে ডোনাল্ডের ভাবনা, ‘খালেদের জীবনীশক্তি দারুণ। শক্ত মানসিকতার ছেলে, যে শিখতে চায়। প্রতিদিনই জানতে চায়।’
পেস বোলিং কোচ হিসেবে এক্সপ্রেস বোলারদের কাছে বাড়তি চাওয়া থাকাটা খুবই স্বাভাবিক ডোনাল্ডের জন্য। তবে তিনিও জানেন, কাজটা শুধু বোলারদের করলেই হবে না। চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিং যথেষ্টই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। এ টেস্টে অমন ভুল আর করা যাবে না, ডোনাল্ড মনে করিয়ে দিয়েছেন সেটিও, ‘বোলিং লাইনআপ হিসেবে আমরা সুযোগ তৈরি করেছিলাম। রান রেট তিনের আশপাশে রেখেছিলাম। চট্টগ্রামে দীর্ঘসময় খেলা হবে, এটা জানা কথা। ফলে যখনই সুযোগ আসবে, নিতে হবে। ক্যাচ ফেলার ভুল আসলে করা যাবে না। চাপ তৈরি করতে অনেক সময় লাগে, ধৈর্য লাগে, একাগ্রতা লাগে, সৃষ্টিশীল হতে হয়। যখন জুটি বড় হয়, কিছুই পক্ষে আসে না তখন। ফলে অমন সুযোগ এলে নিতে হবে। এখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।’
অন্যদিকে মিরপুর টেস্টের আগে গতকাল ভারতের ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। সবার আগে মাঠে আসলেন ঋষভ পান্থ। একটু রানিং করেই ব্যস্ত হয়ে গেলেন ব্যাটিংয়ে। সেখানে তার সঙ্গে যোগ দিলেন দলটির ব্যাটিংয়ের বাকি দুই স্তম্ভ বিরাট কোহলি ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। পরে একে একে আসলেন অক্ষর প্যাটেল, শ্রীকর ভরত, কুলদীপ যাদব, সৌরভ কুমাররা। মিরপুর একাডেমি মাঠের মাঝের নেটে ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরের একটি থ্রো ডাউনে খেলতে গিয়ে ডান হাতে চোট পান রাহুল। সাথেসাথেই ফিজিওর শুশ্রূষা পান এই ডানহাতি ব্যাটার। পরে তাঁবুতে গিয়ে সেখানে বরফও দিতে দেখা যায়। অবশ্য পরে ব্যাটিং কোচ রাঠোর জানিয়েছেন, ‘না, গুরুতর নয়। দেখে তেমন মনে হচ্ছে না। তাকে দেখে ভালোই মনে হয়েছে। আশা করি, সে ঠিক হয়ে যাবে। ডাক্তাররা দেখছেন।’ রাহুল শেষ পর্যন্ত না খেলতে পারলে অভিষেক হতে পারে অভিমন্যু ঈশ্বরণের। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে আগেই বাংলাদেশ সফরে আসা এই ব্যাটসম্যান ভালো একটা সময়ই কাটিয়েছেন। রোহিতের চোটের পর চট্টগ্রামেই দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ১২ টেস্ট খেলে ১০টিতেই হেরেছে ভারতের বিপক্ষে, জয় নেই একটিতেও। তবে টাইগাররা তাদের শেষটা করতে পারে দারুণ বছর প্রথম টেস্টের মত দারুণভাবে। বেই ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় দিয়ে বছর শুরু করু হয়েছিল টেস্টে। কথায় আছে যার শেষ ভালো তার সব ভালো। বেই ওভালের কৃতী কি মিরপুরে ফেরাতে পারবেন টাইগাররা?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন