১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যাওয়া ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) ও তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরসহ সংশ্লিষ্ট ১৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটি সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ কথা জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে। জব্দ করা অ্যাকাউন্টসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন, ইশরাত আলমগীর ও সৈয়দা মেহরীন রহমান, তাদের ঠিকানা: এপার্টমেন্ট-৩০১, বাড়ি-১৬, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা। একই ঠিকানায় নাম রয়েছে সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী ও সৈয়দা শেহরীন হুসাইন। তার ঠিকানা: এপার্টমেন্ট-ডি ৫, বাড়ি ৩২, রোড-৫, ধানমন্ডি, ঢাকা। ইউএফএসের এমডি সৈয়দা হামজা আলমগীর, আলিয়া হক আলমগীর ও মাহিদ হক। তাদের ঠিকানা-এপার্টমেন্ট-১০৩, বাড়ি ১৮, রোড-১০১, গুলশান-২, ঢাকা।
পুজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪ মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে ইউএফএস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর দুবাই পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে-হাইকোর্ট জানতে চাওয়ার পরদিনই অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের কথা জানানো হয়।
গতকাল ২ জানুয়ারি বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের ডিভিশন বেঞ্চ সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা চেয়ে রুলও জারি করেছেন। আগামি ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দেয়ার কথা রয়েছে। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও আইসিবিকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ৩১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক। প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেয়ারবাজারে চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নামের একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
এই টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর। এখন তিনি সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে তহবিল সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে চক্রটি।
এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) দেখিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ৪ বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে এসব তথ্য।
ইতিমধ্যে কোম্পানিটির সঙ্গে কোনো ধরণের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। বিএসইসি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ধরণের ঘটনা নজিরবিহীন। এর ফলে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের কাজ মানুষের টাকা নিয়ে ব্যবসা কওে শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফা প্রদান। এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকলে তা নজিরবিহীন। এর ফলে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমবে। ফলে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএফএস একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির অনুমতি নিয়ে এই কোম্পানি বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এই প্রক্রিয়াকে শেয়ারবাজারে পরিভাষায় মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়। নিয়ম অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগে কোনো অনিয়ম হলে ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে হয়। কিন্তু ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের সামনেই এই জালিয়াতি করেছে ইউএফএস। ভুয়া সম্পদ দেখানো এবং অস্তিত্বহীন ব্যাংক ব্যালেন্স দেখিয়েছে তারা। এসব বিষয়ে অভিযোগ এলে ১৯ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে কমিশন। ৪ মাস ১০ দিন পর ৩০ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অর্থপাচার করছে। এক্ষেত্রে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। আবার তদন্তকালে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শেয়ার বিক্রির এই তথ্য যোগ হলে আত্মসাতের অর্থের অংক আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে কমিশন ধারণা করছে, অন্তত: ৩শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন