বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পুঁজিবাজার ফিরছে স্থিতিশীল ধারায়

প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার বিকাশে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছেন : বিএসইসি চেয়ারম্যান সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় আর্থিক খাতের জন্য জরুরি : ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সরকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। খাতভিত্তিক কোম্পানিগুলো আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইন-কানুন দ্বারা পরিচালিত। তবে সার্বিকভাবে পুুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও রেজিস্ট্রার এ্যান্ড জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মতো সংস্থাগুলোর স্ব স্ব খাতের কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারী এসব সংস্থার কাজের সমন্বয় না থাকলে কোন একটি সংস্থার সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংস্থাগুলোর মধ্যে এক ধরনের সমন্বয় জরুরী। গত কয়েক বছর ধরেই সরকারী এই সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা গেছে। যে কারণে ভুগতে হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। অথচ সরকারী নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পুুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাতে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটির ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। বিএসইসি’র আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির ব্যবসা সম্পর্কিত যে কোন তথ্য ও সিদ্ধান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। আর আইন অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে এসব তথ্য ও সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বিএসইসিকে জানাতে হয়। কিন্তু এসব নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসি’র সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ কিংবা সমন্বয় করছে না। অবশেষে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর হয়েছে। দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বৈঠকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিএসইসি স‚ত্রে জানা গেছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় দেশের অর্থনীতি যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, একইভাবে পুঁজিবাজারকেও বিকশিত করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহযোগীতায় দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ধারায় ফিরছে। ইতোমধ্যে লেনদেন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। গতকাল বুধবারও প্রায় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবারও সাড়ে ৯ শ’ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা পুঁজিবাজার এবং দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিএসইসি চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এ জন্য ডিপোজিটরি ফান্ডকে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ সীমার (এক্সপোজার লিমিট) আওতার বাইরে রাখার উদ্যোগ নেয়া হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা ফিরে পাবে আইসিবি। আইনটি দ্রæত পাস করানোর জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের অগ্রযাত্রায় যেসব পলিসিলিগত পরিবর্তন ও পদক্ষেপ দরকার, তা দ্রæত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দফতরকে সহায়তা করারও দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আর এসব বিষয় তিনি নিজে তত্ত¡াবধান করবেন বলেও জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই পুঁজিবাজারের বিকাশে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। পুঁজিবাজারের জন্য তিনি যা করছেন অতিত ইতিহাসে কখনও তা করা হয়নি। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর সবাই পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করছেন। সংস্থাগুলোর মধ্যে এ রকম সহযোগীতা ও সমন্বয় কখনও দেখা যায়নি। প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, এতোদিন নানা সমস্যা ছিল। এখন আর তা নেই। দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজার পূর্ণাঙ্গ রুপ পাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রথমবারের মতো বিকল্প লেনদেনব্যবস্থা বা এটিবি চালু হয়েছে। গত সোমবার একদিনেই অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) তালিকাভুক্ত লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। তালিকাভুক্তির পরে এদিন কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা আমাদের জন্য সুসংবাদ। সামনে সুদিনের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামী ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে পুরোপুরি সফলতা বা স্থিতিশীল বাজারে পরিণত হবে পুঁজিবাজার।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, অর্থনীতিতে তিনটি বিশেষ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রথমটি হলো ব্যাংকিং খাত, যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেটিকে নন-ব্যাংক ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন (এনবিএফআই) বা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। তৃতীয়টি হচ্ছে পুঁজিবাজার। এই তিনটির মধ্যেই আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে এবং অর্থনীতিতে এরা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ তিনটি খাতই শিল্পে অর্থায়ন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাÐে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ফিন্যানশিয়াল ইন্টারমিডিয়ারি বা আর্থিক মধ্যস্থতাকারী বলে। এদের মধ্যে সমন্বয় আর্থিকখাতের জন্য জরুরী। দীর্ঘদিন পর আর্থিক মধ্যস্থতাকারীর মধ্যে সমন্বয় অবশ্যই শেয়ারবাজারসহ আর্থিকখাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ফ্লোর প্রাইসের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। দরপতন ঠেকাতে এবং দেশের শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীলতায় ফিরাতে শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করেছে বিএসইসি। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি লেনদেন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ বা এক্সপোজার লিমিট সম্পর্কিত দীর্ঘদিনের সমস্যার ইতোমধ্যে অবসান হয়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের (মার্কেট প্রাইস) পরিবর্তে ক্রয় মূল্যকে (কস্ট প্রাইস) বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা সবসময়ই ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে এ বিনিয়োগসীমা হিসাব করার পক্ষে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইত বাজারমূল্যেই এ গণনা হোক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেয়ার পর সমস্যাটির সমাধানে পদক্ষেপ নেন। যার ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্কের অবসান হলো। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা দূর হওয়ার ফলে ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও সংরক্ষিত আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আনা সম্ভব হবে। সাম্প্রতিক বাজার বিশ্লেষনে দেখা গেছে, দেশের পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এতে লেনদেনের খরা কাটতে শুরু করেছে। প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। পুঁজিবাজারের লেনদেন প্রসঙ্গে ই-সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান-ই-মোয়াজ্জেম বলেন, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় লেনদেন বাড়ছে। আশা করা যায়, মন্দাবস্থা থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। ডিএসই’র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেছেন, পুঁজিবাজারে ইতোমধ্যে অনেকগুলো পণ্য এসেছে। সুকুক বন্ড, এসএমই এবং সরকারি বন্ড আমরা নিয়ে এসেছি। এগুলো এখন কাজ না করলেও অদূর ভবিষ্যতে এগুলোর ফল পাওয়া যাবে। এগুলো যখন কথা বলা শুরু করবে তখন পুঁজিবাজার অনেকদূর যাবে। তাই এ মুহূর্তে কবিতার লাইনের মত বলতে হচ্ছেÑমেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। তিনি বলেন, বাজারের জন্য ভালো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সুদিন ফিরবেই।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন