শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ক্ষমতা চান ডিসিরা, দায় সরকারের উপর রাখার প্রস্তাব

আগামী ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি সম্মেলন সংসদ নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে বেশি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে এবারের ডিসি সম্মেলনই হবে বর্তমান সরকারের শেষ ডিসি সম্মেলন। আগামী ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন হবে। এ সম্মেলনের কার্য-অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এদিক বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সে কারণে জেলা প্রশাসকদের বেশির ভাগ প্রস্তাব কাট-ছাট করা হয়েছে। সংশিশ্লষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগীয় কমিশনারদের প্রস্তাব গুলোকে গুরুত্বপূণ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা থাকবে বেশি বলে জানা গেছে। এ জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ২০১৬-২০১৯ সালের অনিষ্পন্ন বাস্তবায়নাধীন প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় বেশি হবে। এবারে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সারাদেশের জেলা প্রশাসকরা প্রায় ৭ শতাধিক প্রস্তাব দিয়েছে এর মধ্যে থেকে ২৬০ থেকে ২৫০টি প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন আয়োজনে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের কার্য-অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাবের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের নিয়ে প্রতিবছরই সম্মেলনের আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রতিবারের মতো এবারও সরকারপ্রধান হিসেবে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর মন্ত্রণালয়-বিভাগ ভিত্তিক কার্য-অধিবেশনগুলো রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের ৬৪ জেলার ডিসি ও আট বিভাগীয় কমিশনার এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে মাঠ প্রশাসনের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করবেন। সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা তাদের আলোচনা ও দাবি-দাওয়ার কথা শুনে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন।

রাজস্ব আদায়ের স্বার্থ জমির পরিমান-স্থানীয় বাজার মূল্যের উপর স্ল্যাবভিত্তিক ডি.সি.আর ফি নির্ধারণ এবং হাট-বাজর সম্প্রসারণের অধিদগ্রহণ বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার। এ প্রস্তাবে বলা হয়, যা কিছু থাকুক না কেন , সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্থাপর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ (২০১৭ সনের ২১ নং আইন) এর বিধান অনুযায়ী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করিয়া উক্ত প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত তারিখ থেকে যে কোন হাট বা বাজারের দখল গ্রহণ করতে পারবে ডিসি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সে কারণে হাট বাজার দায়মুক্তভাবে সরকারের কাছে ন্যস্ত হইবে। ১৯৮২ এবং স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইনের ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের দিতে হবে। একই প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক, নরসিংদী জেলা প্রশাসক ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের স্বেচ্ছাধীন তহবিলে যৌক্তিভাবে আর্থিক সাহায্য মঞ্জুরি বৃদ্ধি প্রস্তাব দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি এবং পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকরা। জাতিসংঘ শিশনে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার।

আইপিটিভি ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে কেউ যাতে সংবাদ পরিবেশন না করে সে ব্যাপারে এবং গুজব প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন সাতক্ষীরা ও মাগুরার জেলা প্রশাসক। মোবাইল কোর্টের আপিল মামলা শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কেীশলী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণের করতে হবে প্রসাব দিয়েছে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক। যেসকল বিভাগ ও জেলায় ল্যান্ড সার্বে আপিল ট্রাইব্যুনাল নাই, সেই সকল ভিাগ ও জেলায় ল্যান্ড সার্বে আপিল ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে হবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেট,বরগুনা এবং রংপুরের জেলা প্রশাসক।

বর্তমানে সকল সরকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ই-মিউটশনের মাধ্যমে নামজারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় এ ক্ষেত্রে ডিজিটালি বিভিন্ন রেজিষ্টার চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেখা যায় ই-নামজারি চালুর ফলে অনেক উপজেলা ভূমি অফিসে ম্যানুয়ালি কিছু রেজিষ্টার ব্যবহৃত হচ্ছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ জটিলতা নিরসনে ভূমি অভিসে বিভিন্ন রেজিষ্টার ও ফর্ম সংক্রান্ত বিষয়ে কমিটি করে এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে এ প্রস্তাবটি দিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক। উদ্ধারকৃত খাস জমি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, সাইনবোর্ডে লাগানো কাজের জন্য বাজেট বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রঞন করতে হবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

বন বিভাগের নামে রেকর্ডকৃত জমি সুরক্ষা এবং বন বিভাগের জমিতে বসবাসকারীদের অন্যত্র পূণবাসনের মাধ্যমে বনভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এ সংক্রান্ত প্রস্তার দিয়েছেন ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আবাসনের জন্য কৃশি খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালার পরিবর্তে পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক। প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের থেকে এল.এ কন্টিঞ্জেন্সি খাতের অব্যায়িত অর্থের তথ্য দ্রুত সংগ্রহ পূর্বক তা বিভি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এ প্রস্তাব দিয়েছেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক।

কৃষিজমি সুরক্ষা ও পরিকল্পিত শিল্পায়ণের লক্ষ্যে বিশেষ জোনে শিল্পকারখানা স্থাপনে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিতকরণ এবং ভূম ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ১৬১ নম্বর অনুচ্ছেদের নির্দেশনার আলোকে কৃষি জমি অকৃষি কাজে ব্যবহার ও অকৃষি প্রজার কাছে হস্তান্তর সীমিত রাখার লক্ষ্যে রাজস্ব কর্মকর্তার বিবেচনাধীন বিষয়গুলো সুনিদিষ্ট করতে হবে এ প্রস্তা দিয়েছেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক।

যৌথ নদী কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্ত:দেশীয় নদী ভাঙ্গনের ফলে উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করার প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, ফেনী নদীর বাংলাদেশ অংশের বন্ধ থাকার কারণে নদীতীর সংরক্ষণমুলক কাজ বাস্তবায়নের সহায়তার করার জন্য ভারতের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে অনুরোধ করা হলে তারা কোন সারা দিচ্ছেন না। এ কারণে তীর সংরক্ষণমুলক কাজ গুলো বন্ধ আছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চার্টার অব ডিউটিজ সুনিদিষ্ট করার প্রস্তাব দিয়েছেন রাজবাড়ী, নারায়গঞ্জ এবং ঝালকাঠির জেলা প্রশাসকরা। সরকারের সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর মনোভাব প্রদর্শন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জনে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার কোনও বিকল্প নেই। আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হলে বিভিন্ন সেবা পেতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয় বটে, কিন্তু এতে দুর্নীতির সুযোগ কম থাকে। স্থানীয় প্রশাসনকে জনমুখী করার লক্ষ্যে আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাবান করার সরকারি উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। এসব দিক বিবেচনায় নতুন বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়াও এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা জেলা প্রশাসকদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন। এগুলো তাদের স্থানীয় প্রশাসন চালাতে সাহায্য করবে, এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন উঠেছে ডিসি সম্মেলনে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ এর কর্মসূচি প্রকাশ করেছে। কর্মসূচি অনুযায়ী এবার সম্মেলনে ২১টি কার্য অধিবেশনসহ মোট ২৫টি অধিবেশন থাকবে। এর মধ্যে প্রথমদিন ৭, দ্বিতীয় দিন ৮ এবং তৃতীয়দিন ১০টি অধিবেশন থাকবে। তবে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সেশন হবে। এ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন