বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রস্তাব বাস্তবায়নে গরমিল ডিসিদের

জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং আজ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মাঠ প্রশাসনের জন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জেলার ডিসিরা এ সম্মেলনে সরকারপ্রধান ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সরকারের অন্যান্য পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে নিবিড় ও সরাসরি খোলামেলা মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। প্রতিবারের মতো এবারও স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের অগ্রগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি,আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার সমস্যাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জাতিসংঘ মিশনে বিএসএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যাগ গ্রহণ করতে হবেও জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে এবং েেদশীয় প্রজাতির মৎস্য চাষে চাষিদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হোক, গত বছরের ডিসি সম্মেলনে এ প্রস্তাব দিয়েছেলেন, কুমিল্লা, রংপুর ও বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসকরা। পর্যালোচনা শেষে প্রস্তাবটি যৌক্তিক মনে করে কার্যকরের করতে নিদের্শনা দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। এ প্রস্তাবনা কার্যকর করতে অর্থ বিভাগে চিঠিও দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু অর্থ বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নেতিবাচক অভিমত জানিয়ে চিঠি পাঠায়। ফলে প্রস্তাবগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি বলা হয়েছে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধিন রয়েছে। তবে বেশিভাগ ডিসি পাঠানো প্রস্তাবের উপর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি দিলেও সম্মেলন শেষ হলেও তার পরের বছরে আর বাস্তবায়ন হয় না। কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা ও আনুতোষিক ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছেন। গত বছরও এ প্রস্তাব উত্থাপন করে একাধিক জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়োজিত গ্রাম পুলিশদের দেওয়া বেতন এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বিবেচনায় একেবারেই কম। তাই বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের বাইসাইকেল, মোবাইল ফোন এবং পুলিশ বাহিনীর মতো রেশন দেওয়া হোক।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতবারও প্রস্তাবটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠায়। কিন্তু এ প্রস্তাবও গত এক বছরে অনুমোদন বা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এখনও এ প্রস্তাবনাটিকে নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রতিবছরই ডিসি সম্মেলন হয় আর তাতে এ রকম নানা জনগুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নেওয়া হয়। কিন্তু বছর শেষে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলছে না। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটছে না।

গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ডিসিদের দেওয়া অনেক প্রস্তাবের মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ২৪২টি আমলে নিয়ে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে ১৭৭টি বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ৬৫টি প্রস্তাব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আবারও আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩ উপলক্ষে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন প্রেস ব্রিফিং করবেন।

গত বছরের ডিসি সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব-সম্পর্কিত কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২০২২ সালে ৫০টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিন ধরনের প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৭২টি স্বল্পমেয়াদি, যেগুলোর ৫৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। মধ্যমেয়াদি প্রস্তাব ১০৫টি, বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৭টি। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি ৬৫টি প্রস্তাবের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ৪২টি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তৈরি করা ডিসিদের প্রস্তাব বাস্তবায়ন-সম্পর্কিত বুকলেট থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে অন্য একটি সূত্রমতে, যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশও কাগজকলমেই সীমাবদ্ধ।

গত বছরের ডিসি সম্মেলনে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রস্তাব করেছিলেন, বিধিবিধান সংশোধন করে পার্বত্য এলাকায় জমির মালিকানার সিলিং নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সেটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নির্দেশনা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু এ ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে মতামত জানানো হয়নি। গত বছর একাধিক ডিসি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কৃষিঋণ বিতরণসহ ব্যাংকিং সেবা দিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অনীহা রয়েছে। যা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এসব প্রস্তাব এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকাগুলোতে টেলিটকের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণের জন্য টেলিটকের প্রকল্পগুলো গ্রহণসহ ১৫টি নতুন বিটিএস টাওয়ার স্থাপনের শুধু পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নের চিত্র দৃশ্যমান নয়। যদিও দায়সারা অগ্রগতির একটি প্রতিবেদন দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এটি বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। একইভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে কৃষককে ধানের মূল্য পরিশোধের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে ডিসি সম্মেলনে প্রস্তাব দিয়েছিলেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক। সেটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে যে, প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত চাওয়া হয়। চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া সব বিভাগই এ ব্যাপারে মতামত দিয়েছে। এখন চট্টগ্রাম বিভাগের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এসব প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সব মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্যও সুনির্দিষ্ট বিধিমালা করার প্রস্তাব এসেছে ডিসিদের পক্ষ থেকে। এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এখন মূল বেতনের পুরোটা সরকার থেকে পান। এর সঙ্গে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয় তাঁদের। তবে বেসরকারি হওয়ায় তাঁরা সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান। এই সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি)।

ডিসি সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের স্বাগত বক্তব্যের পর মাঠ প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের ভিডিওচিত্র দেখানো হবে। বক্তব্য দেবেন জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা ছাড়াও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। এরপর বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। মাঠ প্রশাসনসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনা করবেন তারা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনের পর করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থাগুলো নিয়ে কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে ২০টি কার্য অধিবেশনসহ ২৬টি অধিবেশন থাকছে। এর মধ্যে প্রথম দিন ৬টি, দ্বিতীয় দিন ৯টি এবং তৃতীয় দিন ১১টি অধিবেশন হবে। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করবেন ডিসিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন