সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত দেশের প্রধান নৌপথটির উন্নয়ন ও নাব্য রক্ষায় সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় সম্বলিত এই প্রকল্প নৌপথ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সোনালি দিগন্তের সূচনা করবে।
স্বল্পব্যয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য সরবরাহ ও যোগাযোগের মাধ্যম হলো নৌপরিবহন। দেশের নৌপথের গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা-আশুগঞ্জ-চট্টগ্রাম নৌ-করিডোর বাংলাদেশের প্রধান অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্যিক রুট, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ।
৩০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রুটে বরিশালসহ অন্যান্য রুটের সংযোগ রয়েছে। এ রুটের সঙ্গে সংযুক্ত নারায়ণগঞ্জ এবং বরিশাল যুক্ত হলে মোট নৌপথের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০০ কিলোমিটারের কিছু ওপরে।
এ লক্ষ্যেই দেশের নৌ-বন্দরগুলোকে আরো আধুনিক করে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা বাড়ানো এবং সেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার নৌপথের এই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে এই উন্নয়নমূলক কর্মকা- শুরু হবে বলে জানা গেছে।
গত ২১ ডিসেম্বর প্রকল্পটি কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে একনেক অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় এই প্রকল্পটিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ থাকবে ২ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে দেয়া হবে ৪শ’ কোটি টাকা।
জানা যায়, প্রকল্পটিতে একনেক যেসব সংশোধনী আনতে বলেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সেসব সংশোধনী পাঠানো হয়েছে। এসব সংশোধনীসহ প্রকল্পটি নিয়ে প্রশাসনিক অনুমোদনের আদেশ জারির পরই কাজ শুরু হবে বলে জানান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
প্রকল্পটির আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-আশুগঞ্জ নৌপথের গভীরতা বৃদ্ধি, জেটি, ঘাট ও পন্টুন স্থাপন, বিভিন্ন স্থানে নৌবন্দর উন্নয়ন, যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ এবং সদরঘাট নৌ- টার্মিনালের ওপর চাপ কমাতে অত্যাধুনিক করে ঢাকায় শ্মশানঘাট যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এই টার্মিনাল নির্মাণ হলে সদরঘাটের ওপর চাপ অনেকটাই কমে যাবে।
এছাড়াও নৌপথে বেশ কয়েকটি লিঙ্করোড স্থাপন করা হবে। যার মধ্যে রয়েছেÑ নারায়ণগঞ্জ-ঘোড়াশাল, বরিশাল-ঝালকাঠি লিঙ্করোড। এই প্রকল্পের আওতায় যেসব স্থানে ফেরিরুট উন্নত করা হবে সেগুলো হচ্ছেÑ ভোলা-লক্ষ্মীপুর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া ও চাঁদপুর-শরীয়তপুর। আরো উন্নত করা হবে চাঁদপুর নৌঘাটটি। নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরটির আধুনিকায়ন ও বরিশাল নৌবন্দরটি এক্সটেনশন করা হবে।
প্রকল্পের সারসংক্ষেপে আরো বলা আছে, কার্গো টার্মিনালসহ ১৪টি লঞ্চঘাট উন্নত করা হবে। এছাড়াও নৌপথে যাত্রীদের যাতায়াত ও ভ্রমণ নিরাপদ করার জন্য ৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র নৌপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে নির্মাণ হবে। যাতে করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যাত্রীরা লঞ্চ ঘাটে ভিড়িয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এই প্রকল্পের পরিচালক মাহমুদ হাসান সেলিম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল ওয়াটারওয়ে ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট-১’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এই ঋণের অর্থ।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ছয় বছরের রেয়াতকালসহ ৩৮ বছরে মাত্র দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যাতে ইআরডির জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন এবং বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিওয়াও ফান স্বাক্ষর করেন।
এ ব্যাপারে গতকাল ইআরডি সচিব জানান, প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সড়কপথ অগ্রাধিকার পেলেও রেল ও নৌপরিবহন অবহেলিত ছিল। এখন সরকার রেল ও নৌপরিবহনেও গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নৌপরিবহন বিশাল অবদান রাখতে পারে। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্যই ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
এই প্রকল্পের ডিপিপিতে বলা হয়েছে, স্বল্পব্যয়ে পরিবেশবান্ধব পণ্য সরবরাহ ও যোগাযোগের মাধ্যম হলো নৌপরিবহন। গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা-আশুগঞ্জ-চট্টগ্রাম নৌ-করিডোর বাংলাদেশের প্রধান অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্যিক রুট, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ।
ডিপিপিতে আরো বলা হয়েছে, এ করিডোরের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় দুই লাখ যাত্রী চলাচল করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বছরব্যাপী ঢাকা-আশুগঞ্জ-চট্টগ্রাম নৌপথের নাব্য নিশ্চিতকরণ, করিডোরের উন্নয়ন এবং বিআইডব্লিউএর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।
আগামী ২০২৪ সালে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন