এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (কেসিসি) বছরের অন্যতম আলোচনার বিষয় মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ। এছাড়া নগরীতে নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন চলাচল, ময়ূর নদীর তীরে দ্বিতীয় ফেজের কাজ নিয়ে জটিলতা, পেডিস্ট্রিয়ান আইল্যান্ড নির্মাণে বিলম্ব, বিতর্কিত জনবল নিয়োগ, ডিপিএম পদ্ধতিতে স্কেভেটর ও হাইমাস্ট লাইট কেনা, ক্ষুদের খাল খনন, একাধিক কর্মকর্তার ফাইল দুদকে তলব, নদী দখলমুক্ত করতে না পারা, প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি, তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি পুনর্বহাল, রাজশাহীর আদলে মশার ওষুধ তৈরি কার্যক্রম, পানিবদ্ধতা ও কেসিসি’র টেন্ডারবাজির ঘটনা নিয়েও বেশ আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্যে আরেকটি বছর পার করলো সিটি কর্পোরেশন।
সূত্রে প্রকাশ, সাময়িক বরখাস্তের পর কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি গত ২১ নভেম্বর ফের দায়িত্ব ফিরে পান। এক বছর ১৯ দিন ছিলেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির বাহিরে। হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং ৭০৯৮/১৬ মূলে প্রদত্ত স্থগিতাদেশ বজায় থাকাকালীন সময়ে মেয়রের সাময়িক বরখাস্তের আদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারী হয়। গত ২১ নভেম্বর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব কাজী আসাদুজ্জামান প্রেসিডেন্টের আদেশক্রমে এ প্রজ্ঞাপন জারী করেন। এরপর নগর ভবনের নিজ কার্যালয়ে ঢুকে দায়িত্ব নেন মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রেখে সরকারের করা আপীল খারিজ হয়। এরপর থেকেই তার দায়িত্ব ফিরে পাওয়া নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলে নগর জুড়ে। টেন্ডার ছাড়াই দেড় কোটি টাকা মূল্যের ছয়টি ‘হাই মাস্ট’ বা উঁচুপোলের বাতি এবং দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেনের পেড়ি মাটি উত্তোলনের জন্য স্কেভেটর ক্রয় করে সংস্থাটি। যাবতীয় চুক্তিপত্র সম্পন্নের পর ওই বাতি তুরস্ক ও নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড থেকে স্কেভেটর কেনা হয়। কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতি বাদ দিয়ে ডিপিএম পদ্ধতিতে ক্রয় নিয়ে নগর জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। দীর্ঘদিন পর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় করপোরেশনে। চারজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে নিয়োগ দেয়া হয়। সাথে সাথে প্রায় সাত বছর পর শুরু হয় পদোন্নতির প্রক্রিয়াও। পদোন্নতি পেতে দৌড়-ঝাঁপ এবং কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি শুরু করেন প্রকৌশলীরা। নিয়োগ ও পদোন্নতি নিয়ে সংস্থারটির পূর্ত বিভাগে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করে। যদিও বিষয়টি এখন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অপরাধে সংস্থাটির লাইসেন্স ও যানবাহন শাখার চার পরিদর্শককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়। অপরদিকে তাদের দ্বারা কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে ফের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (অডিট) মোহাম্মদ ইমরান হোসেন তুহিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট অন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু এখনও আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করে ওই রিপোর্ট দাখিল হয়নি। ফলে এ নিয়েও নানা চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। পানিবদ্ধতা নিরসরে এক কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরী বয়রা শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ক্ষুদের খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। খননের মাঝ পথে একটি সম্মিলিত জরিপে ওই খালের দু’পাশে অনেক নতুন জমি উদ্ধার হয়। কিন্তু ওই জমি খনন না করেই প্রকল্প শেষ করা হচ্ছে। ফলে এ নিয়েও এক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া নগরীতে নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন চলাচল, ময়ূর নদীর তীরে দ্বিতীয় ফেজের কাজ নিয়ে জটিলতা, পেডিস্ট্রিয়ান আইল্যান্ড নির্মাণে বিলম্ব, বিভিন্ন কোটায় ৫০ জন জনবল নিয়োগ, কর্মকর্তাদের ফাইল দুদকে তলব, নদী দখলমুক্ত করতে না পারা, ২০০৭ সালে চাকুরি যাওয়া তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি পুনর্বহাল, রাজশাহীর আদলে মশার ওষুধ তৈরি, পানিবদ্ধতার ভোগান্তি ও কেসিসি’র টেন্ডারবাজির ঘটনা নিয়েও বেশ আলোচনা-সমালোচনায় এসেছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন