বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

এ সপ্তাহের পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এখন ঘুরে দাঁড়াবার সময়
হাসি ইকবাল
এখন ঘুরে দাঁড়াবার সময়
নিজের পায়ে নিজে অনেক কুড়াল মেরেছি
আর কত?
শিশিরেভেজা কান্নার প্রলাপ
রৌদ্দুওে রৈরী আভার অস্তিত্ব ছটপট করে
অবরুদ্ধ সময়ের কালো ধোঁয়ায়।

জীবিতের ভান করে আমরা আসলে একেকটি মৃত লাশ
মেঘবিলাসী মন বিশুদ্ধ হবার আশায়
দ্রোহী চেতনায় ফিসফিস করে গায় আক্রোশের গান।

উদ্বিগ্ন মনোবল চুপসে যায় শরীরের শৈথিল্যে
প্রতিবিম্বের অবয়বে ক্রুদ্ধ কালপেঁচা
চিন্তার সূদুরপ্রসারী অধ্যায়ে রচিত করি চলো নিরাপদ কালজয়ী ইতিহাস।

লেখার বিষয়
আকিব শিকদার
আঙুলে চিত্রার্পিত কলম, কি লিখবো নিথর খাতায়
ভাবি একটি শুকনো বকুল
গুড়িয়ে নিয়ে নাকের কাছে গন্ধ শুকতে শুকতে।
পথ ছেয়ে আছে
কৃষ্ণচূড়া ফুলে, বৃষ্টির শীতল ছোঁয়া এখনও তাদের গায়ে
পারদ বিন্দুর মতো দৃশ্যত। একটি চড়–ই ভেজা পালকে
খুব করছে তালাশ তার সঙ্গীকে
কার্নিশে, ছাদে, বৈদ্যুতিক খাম্বায়। জলকণা
জমে আছে মাকড়শার ঝালরে শিশির সমান।
    
ধুত্তুরী ছাইÑ এসব কী খোর বিষয়!
ভাবনা করতে গিয়ে
ছিঁড়বো না চুল, কতোবার করেছি পণ তবু হাত চলে যায় ঘাড়ে।
কী লিখি, কী লিখি তবে? পিথ্বীরাজের ডালে বসা পাখিটির
সুলম্ব নীলাভ পুচ্ছ আমার চাই কলমদানিতে
গুজে রাখা, টেবিলের মৃৎ-ফুলদানিতে
সুগন্ধি মৃগনাভি, কাগজ চাপার কাজে সাপের মাথার মণি, আর...

আর... আর... ভাবছি কেন একচেটিয়া
লিখতে ওসব নিজস্ব প্রত্যাশা। আঙুলে চিত্রার্পিত কলম
কী লিখবো, নিথর খাতায়! ও... ও... আচ্ছা লিখিÑ
আশ্চর্য সুন্দর নীলিমায় উড়ছে শকুন ঝাঁকে ঝাঁকে, শপাত শপাত
চাবুক পিঠে ছটফটানি নির্যাতিতের
আহত জন্তুর মতো। মুক্তোমালা ছিঁড়ে প্রবণতা দেখি
হারিয়ে যাবার বড়ো বেশি মুক্তোগুলোর।
আর হুঁ... পাগলাঘণ্টি বাজে নিত্যÑ
জনজীবনে, চোখের সম্মুখে সুখ খুটে খায় আস্তাকুঁড়ের কাক।

অং সান সু চি, তোমাকেই বলছি
সায়মন স্বপন

রক্তাক্ত রক্তজবা কিংবা ধর্ষিত বালিকা-যুবতীর বোবা কান্না ছুঁয়ে যাচ্ছে
আকাশের তলপেট। কেবল, তোমার বন্ধ দরোজার ওপাশে পৌঁছায় না সে
আর্তনাদ।

দরোজা খুলে চেয়ে দেখোÑ
সহিংস সংলাপগুলো খোলা পায়ে দাঁড়িয়ে আছে তোমার জন্য। আর খুবলে
খাওয়া স্তনের লজ্জাটুকু মিলিয়ে যেতে যেতে বাতাস ভারী হচ্ছে শিশুর
চ্যাপ্টাপেটের কান্নায়।

তোমার হাত মেলে দেখোÑ
হাতের ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে কত শত পীড়নের জল। যে নুনজলে মিশে
আছে ঘুম আর ঘামের সংসার।

সু চি, ভাঙো তোমার স্বপ্নঘুম; হয়তো-বা ভুলে গেছো তোমার অতীতের
ইতিকথা। পেছনে তাকিয়ে দেখোÑ সময়ের শরীর পাশ ফিরে শুয়ে আছে
অভিমানে।

সু চি, তোমাকে বলছি শোনোÑ
তোমার উষ্ণ হাত ধরে ওরা উঠে আসতে চায় কুয়াশার রুক্ষতা ছেড়ে।


কাব্যিক পদাবলী
শেখ হামিদুল হক

তোমার ঠোঁটে ছড়িয়ে থাকা জোছনার হাসি, দৃষ্টির
মাঝে সীমাহীন গভীরতা, লাবণ্যের বৃষ্টির ছোঁয়ায় তুমি হয়েছো
অপরূপা, স্বপ্নের বিলাসী কাননে তোমায় দেখি বার বার।

তোমার অম্লান হাসির মাঝে খুঁজে ফিরি শান্তির
সুবাতাস, মধুর কণ্ঠধ্বনিতে অনাস্বাদিত তৃপ্তির স্বাদ।
তোমার সৌন্দর্যের কাব্যিক দর্শনে পুলকিত হৃদয়, চেতনার নদীতে
উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছুটে যায় অনির্ধারিত গন্তব্যে, বুকের গভীরে
পুঞ্জীভূত ভালবাসার নিবিড় আলিঙ্গনে সুখের প্রজাপতি
ডানা মেলে উড়বে শরতের নীল আকাশে।  
যেখানে চলবে দুধেল মেঘের মিলনমেলা।

তোমার ছন্দায়িত আগমনে থমকে যাওয়া চোখে
চোখ রেখে বলব, দেখ সমস্ত প্রকৃতি আজ তোমার
পদানত, সোহাগী প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে বলছি,
ভালবাসার অদৃশ্য বন্ধনে যদি আমায় বাঁধো,
তাহলে শান্তির শীতল পরশে হারিয়ে যাবে
কষ্টের নীল যন্ত্রণা। ধারাবাহিক কাব্যের তুমি
হবে কাব্যিক পদাবলী।


প্রেম    
শাওন আসগর

প্রেম। প্রতিদিন চাষ করো হিংসার ভ্রƒণ
ঈর্ষার চারাগাছে ভরছে বাগান
শত্রুর শ্যন দৃষ্টি হামলা-ভেতরের ক্ষত
মর্যাদা আত্মসম্মান সে তো পুষ্পহীন গাছ
বয়সের জোয়ারে ভাসে রটনার শ্যাওলাগুলো
প্রেম। হায় প্রেম। প্রতিদিন চাষ করো হিংসার ভ্রƒণ।

শুভ অশুভ না বুঝেই খ-িত হয় শরীরের প্রত্যঙ্গ যতো
অস্তিত্ব ফালি ফালি করে যাও বিরহের দিনে
চূড়ান্তভাবেই চলে মৃত্যুকে তুচ্ছ তুড়ি মেরে শেষ ঠিকানায়
হায় প্রেম। এই-ই প্রেম পরিণত উপাখ্যান!

অসময়ের আগন্তুক হয়ে দাঁড়াও নিলাজ ভূষণে
এলোমেলো উসকো খুসকো উড়– মন
স্থান নির্বাচন নেই
         বিপদ নির্বাচন নেই
কথনের বেহিসেবী ব্যস্ততায় করমর্দন
নদী ও অরণ্য দৃশ্যমান দৃষ্টির লেন্সে
আকাশ নক্ষত্রই উপমা কেবল
রোদ ঋতুর অসুন্দর ছায়াটুকু হয়ে ওঠে সৌন্দর্যের তিলক
অগ্র পশ্চৎ আলো অন্ধকার ভুলে
দৃঢ়তার ফটকে খিল মেরে সবটুকু বিস্মৃত হয়ে অধীন হও প্রেম।

প্রেম। প্রতিদিন ভেতরে ভেতরে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে ওঠো
এই বুঝি প্রেম। প্রেম উপাখ্যান !

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন