রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

গভীর রাতে শীতল পাটির হাট ভোরের আলো ফোটার আগেই শেষ

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার শীতল পাটি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাদের চরম দুর্দিন চলছে। গ্রীষ্মকালে এই শীতল পাটির চাহিদা থাকে সর্বাধিক। তবুও শীত-বর্ষা-শরতেও নিরন্তর ক্ষুধাকে চেপে রেখে এ পরিবারগুলোকে বাঁচতে হচ্ছে। এই সময় এই ক্ষুধা ও অভাবের সুযোগ নিয়ে পাটিশিল্পের সাথে জড়িত মহাজন কম দামে পাটি কিনে মজুদ করে মৌসুমে বিক্রয় করে আর্থিক ফায়দা নেয়, কিন্তু পাটি শিল্পের শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনাহারেই দিন কাটাতে হয়।
ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিত মাঝারি শ্রেণির একটি পাটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় পাইকারদের কাছ থেকে পাটি বুননকারীদের বিক্রয় করতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মীরসরাইয়ের এই শীতল পাটির চাহিদা ও কদর ব্যাপক। তবে প্রচার না থাকায় এ অঞ্চলের পাটি শিল্পের বাজার নড়েচড়ে বসতে পারছে না। উপজেলার মিঠাছরা হাটে সপ্তাহে দু’দি রোব ও বৃহস্পতিবার এখানে পাটির হাট বসে ভোর ৪টা থেকে। মুয়াজ্জিনের ফজর আজানের সময় জমজমাট পাটির হাট। আবার ভোরের আলো ফুটে ওঠার পর থেকে হাটে কমতে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতা। ৭টার মধ্যেই সব শেষ। ভোরের হাটে পাটি ওঠা এখানকার আদিকালের ঐতিহ্য। কিন্তু তা দিনের আলোয় কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় না কেন তা নিতান্তই রহস্যজনক। দূর-দূরান্ত থেকে অন্তত ১৫-২০ কিলোমিটার দূর থেকেই পাটি বিক্রেতা নারী-পুরুষরা ভোর ৩টায় রওনা হয় বাড়ি থেকে। ততক্ষণে দূরের পাইকাররা এসে পৌঁছায়ও না। স্থানীয় কিছু পাইকার সিন্ডিকেটের কারসাজি কি-না এটি তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন অনেকে। ভোরের মৃদূ আলোতেই এই হাট না সেরে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বিক্রেতারা ও কিছু দাম হয়তো বাড়তি পাওয়ার সুযোগও হতে পারে।
কিছুটা বিলম্ব হয়ে গেলেও সেদিন ভোরে এই পাটির হাটের রহস্য জানতে গেলে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পাওয়া গেল পেয়ারা বেগম নামের ৫৮ বছরের এক বৃদ্ধ মহিলার। তিনটি পাটি বিক্রি করতে এসেছেন বাজারে। কত বিক্রি করলেন? জানতে চাইলে পেয়ারা বেগম বললেন, দুইটা ৬০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। আর একটার দাম ৬০০ টাকা দিতে চাইছে না। তাই দেরী হচ্ছে। কতদিন লাগল, আর খরচ বাদে আয় কত হলো জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেয়ারা বেগম বললেন, এক পাটিতে এক পন করে পাটি পাতা লাগে। এক পন পাতা ২০০ টাকা দিয়ে কিনে পাতা বেত করা ও রং করা মিলিয়ে তিনটি পাটি বুননে সময় লেগেছে এক সপ্তাহ। আবার খেটেছে মেয়ে নাতিনরাসহ চার-পাঁচজন। আবার বাজারে আসা-যাওয়ায়ও খরচ আছে ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে খাটুনি আর খরচ মিলিয়ে কোনোভাবে জীবনযুদ্ধ। তাও ডাল-ভাত জোগাড় করতেই মুশকিল হয়। কিন্তু অভাবের সংসারে কি করবে আর।
এভাবেই চলছে উপজেলার মিঠানালা, মঘাদিয়া, মায়ানী, দুর্গাপুর, কাটাছরা, তেমুহানি, হিঙ্গুলী, খৈয়াছরা, আমবাড়িয়া, তালবাড়িয়াসহ অন্তত ২৫টি গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার পাটি বুননকারীর জীবনচক্র।
মিঠাছরা হাটবার ভোরবেলায় হাটে গিয়ে বিক্রি ৫০০-৬০০ টাকা পাটি হিসেবে আয় তাদের। এর চেয়ে আর লাভের মুখ কি দেখবে না তারা? অথচ মধ্যস্বত্বভোগী পাইকাররা বহন করে নিয়েই লাভ করছে প্রতি পাটিতে কয়েক’শ টাকা করে। কোনো কোনো পাটি বিক্রি করছে দ্বিগুন দামে। এমন লাভের মুখ দেখছে না হাঁড়ভাঙা খাটুনি করা সেই পাটিশিল্পীরা। তবে হাটের জনৈক পাটি পাইকার শাখাওয়াত বেপারী বলেন, আমাদেরও প্রতি পাটিতে যাতায়াত ও আড়ৎ খরচ গিয়ে প্রতি পাটিতে ১০০ টাকাই টিকে।
তবে আগত পাইকারদের অধিকাংশই স্থানীয় দেখা গেছে। জনৈক বিক্রেতা বললেন, দূরের পাইকারদের এরাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাটি সরবরাহ করে। কিন্তু ওইসব পাইকার হাটে এলে হয়তো দাম আরো বেশি পাওয়া যেত। সপ্তাহে দুই দিন মিঠাছড়া বাজারে ২০ লক্ষাধিক টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এরপর ও কয়েকজন আগের দিন বারইয়ারহাট আবাসিক হোটলে এসে অবস্থান নিয়ে অনেক কষ্টে আসেন এখানে। এতো ভোরে না হয়ে হাট একটু পরে হলে পাইকারদের আসায় অনেক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, এইসব পাটি বুননকারী শিল্পীরা আমাদের মনিটরিংয়ের আওতার বাইরে। তবে এদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়েও আমরা বিশেষ উইং করার কথা ভাবছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
কাওসার ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:৪১ পিএম says : 0
পাটি বুননকারী শিল্পী যেন ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন