সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি সঙ্কট। কোথাও কোথাও পানি সরবরাহ থাকলেও ময়লা ও দুর্গন্ধের জন্য তা ব্যবহার করা যায় না। রীতিমতো ফুটিয়েও পানি থেকে দুর্গন্ধ দূর করা যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় এ পানি দিয়ে গোসলও করা যাচ্ছে না। পানি চোখে লাগলেই চোখ জ্বালা-পোড়া করে।
এতে করে শিশুদের ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে।
রাজধানীবাসীর এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা বেশকিছু প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার ঘোষণা দেয়। এ কর্মসূচির আওতায় নগরীতে দীর্ঘদিনের পুরনো পানির লাইন পুনরায় স্থাপন, নতুন পানির লাইন সংযোজন, বক্স কালভার্ট-ড্রেনেজ লাইনের সংস্কার ও উন্নয়ন এবং খাল পুনরায় খনন করে নগরীর সব জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। জানা গেছে, ওয়াসার এ কর্মপরিকল্পনাগুলোর বেশির ভাগই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এ বছরও ওয়াসার পানি সঙ্কট সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
গত প্রায় এক বছর ধরে ওয়াসার পানি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মাদারটেকবাসীর পক্ষ থেকে। মাঝে মধ্যে যেটুকু পাওয়া যায়, তাও দুর্গন্ধের জন্য ব্যবহার করা যায় না। ময়লা-আবর্জনা আর কাদা মাটির কারণে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় দেড় হাজার গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ পানি না পেলেও মাস শেষে ওয়াসার নির্ধারিত পানির বিল পরিশোধ করতে হয় তাদের।
ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানান, স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতে ২০১৫ সালের শুরুতে মিনিটে দুই হাজার লিটার পানি উৎপাদন সক্ষমতা সম্পন্ন ছয়টি গভীর নলক‚প স্থাপন করা হয়। কিন্তু বছর যেতে না যেতে এতে এটি ৫০০ লিটার উৎপাদন কমে এসে দাঁড়ায় এক হাজার ৫০০ লিটারে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের শুরুর দিকে হঠাৎ মাত্র ৩০০ লিটারে নামে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এই পানি দিয়ে পুরো এলাকার মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় পাম্পে পানি উৎপাদন কমে গেলেও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে দুমাস আগে মেয়র সাঈদ খোকনের জনপ্রতিনিধি জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে তারা অভিযোগ করলে উপস্থিত ওয়াসার কর্মকর্তারা দুই দিনেই সমস্যাটি সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু ছয় মাসেও সে আশ্বাস বাস্তবায়ন হয়নি।
এছাড়া এলাকার কিছু অংশে সামান্য পরিমাণ যে পানি সরবরাহ করা হয়, দুর্গন্ধ এবং ময়লার কারণে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে গৃহস্থালিসহ নিয়মিত কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। দুষিত পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া, আমাশয়, চুলকানি, পেটব্যথা, চর্মরোগসহ নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগতে হচ্ছে স্থানীয়দের। সমস্যাগুলো নিয়ে ওয়াসা এবং সিটি করপোরেশনের কাছে বারবার অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
সরেজমিন পূর্ব মাদারটেক, পশ্চিম মাদারটেক, নন্দীপাড়া, গোড়ান, বাসাবো, ত্রিমোহনী, কদমতলা, নাসিরাবাদ, শেখের জায়গা, মানিকদিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি সমস্যার কারণে এলাকার হাজারেরও বেশি ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এলাকার অধিকাংশ ফ্ল্যাট খালি। পানি সমস্যার কথা শুনে নতুন কেউ এ সমস্ত এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিতেও আসছেন না।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাদারটেক এলাকায় গত বছরের জুনের পর থেকে এ পর্যন্ত ওয়াসার লাইনে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু এলাকায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করলেও তাতে ময়লা-আবর্জনা, কেঁচো এমনকি অস্বস্তিকর দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ওয়াসার পানি খাওয়া তো দূরের কথা, নিত্য কাজে ব্যবহারেও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এই এলাকাতে শুধু পানি সমস্যা নয়, রয়েছে গ্যাসেরও তীব্র সঙ্কট। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পযন্ত এসব এলাকার গ্যাস লাইনে চাপ কম থাকে, যে কারণে মোমবাতির মতো নিভু নিভু চুলায় আগুন জ্বলে। ফলে তিন বেলার রান্না করতে হচ্ছে এক বেলায়। এলাকায় চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম। তাছাড়া পাইপে গ্যাসের সহজাত উপাদান কনডেনসেট জমে থাকায় সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। ফলে এলাকায় চুলা জ্বালাতে গিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়ছেন গৃহিণীরা।
পূর্ব মাদারটেকের ২৭/৭ এর স্থানীয় বাসিন্দা লাভলী আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ওয়াসার লাইনে কাপড়ের টুকরা, সিগারেটের প্যাকেট, পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা আসে। নলক‚পের পানি স্যুয়ারেজ লাইনের পানির মতো অবস্থা । এতে রান্না তো দূরের কথা, অজু-গোসলও করা যায় না। ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের লোকজনকে জানানো হলেও তারা এসে শুধু দেখে চলে যায়। কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না।
মাদারটেক মার্কেটের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, আমার বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি, এসব এলাকায় কখনো পানির সমস্যা ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, ওয়াসার পানিতে নানা সমস্যা। তাছাড়া রাস্তাগুলোও খানাখন্দে ভরা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে ওয়াসার পানি ফুটিয়ে অন্তত খেতে পারতাম। কিন্তু এখন এমন অবস্থা ফুটানোর পরও পানিতে দুর্গন্ধ থেকে যায়। বারবার অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাইনি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছেও অভিযোগ করে কোনো লাভ হয়নি, কারণ তিনিও একই সমস্যায় ভুগছেন।
মাদারটেকের ২৩/১ এর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মোমিন আলী জানান, পানি সমস্যার কারণে ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে চলে গেছে। তাই এরকম অনেকেরই বাসা এখন খালি পড়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে সরাসরি মাদারটেকসহ আশপাশের এলাকায় পানি সরবরাহ করতে হিমসিম খাওয়ায় ২০১৫ সালের দিকে মাদারটেক মোড়, মাদারটেক প্রাইমারি, নবাবীমোড়, গোড়ান প্রজেক্ট-৪, গোড়ান প্রজেক্ট-৫ এবং নন্দীপাড়ায় প্রায় ৫০০ ফুটের গভীর মোটর চালিত নলক‚প স্থাপন করে ঢাকা ওয়াসা।
এসব নলক‚প থেকে রিজার্ভ প্লান্টের মাধ্যমে শোধন ছাড়াই সরাসরি পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাতে দেখা দেয় পানি সঙ্কট।
স্থানীয় ওয়াসা পাম্পের তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেকটি মোটর চালিত নলক‚প থেকে ২০১৫ সালে পানি উত্তোলন হতো প্রায় ২০০০ লিটার। ২০১৬ সালে শুরুর দিকে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ১৫০০ লিটারে। বছরের শেষের দিকে আরো কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ লিটারে। বর্তমানে মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ লিটার পানি উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে। এই পানি দিয়ে এলাকার মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।
গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে মাদারটেক ওয়াসার মোটর চালিত পাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সায়েদাবাদ শোধনাগার থেকে এ এলাকায় পানি সরবরাহ করতে না পারায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৫০০ ফুট গভীরের প্রায় ছয়টি নলক‚প স্থাপন করে। এর মাধ্যমে সরাসরি সাপ্লাই সিস্টেমে পানি সরবরাহ করছে। নলক‚পের ভ‚-গর্ভে মজুদ কমে যাওয়ায় পুনরায় পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়াসার নতুন পানির লাইন টানা হয়েছে। গ্রাহকরা খুব শীঘ্রই নতুন লাইনে বিশুদ্ধ পানি পাবেন। তবে কবে নাগাদ নতুন লাইন চালু হবে সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন