শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সীতাকুন্ডে কোটি টাকার টমেটো করলা-বাঙ্গি পানিতে

টানা বৃষ্টিতে হাজারো কৃষকের মাথায় হাত

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : কৃষক আইয়ুব আলীর সব হিসাব-নিকাশ উল্টে দিয়েছে বৃষ্টি। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তার লাখ লাখ টাকার সবজি এখন পানির নিচে। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে বেশিরভাগ সবজি পচে-গলে গেছে। এতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু হা-হুতাশ করা ছাড়া তো আর কিছুই করার নেই। তাছাড়া এ দুরবস্থা তার একার নয়। এলাকার আরো বহু কৃষক এই বৃষ্টিতে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। ফলে হতাশায় নিমজ্জিত প্রায় সবাই। হতভাগ্য এ কৃষকের বাড়ি সীতাকুন্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী গ্রামে। তিনি ঐ এলাকার আতাউল হক মেম্বারের ছেলে। জানা যায়, গুলিখালী গ্রামটি বরাবরই কৃষিতে সমৃদ্ধ। এখানে সব মৌসুমেই নানারকম সবজি ও ফল উৎপাদন করেন কৃষকরা। এ মৌসুমেও প্রতিটি জমি ছিল সবজিতে পরিপূর্ণ। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছিলো টমেটো, পোরল, করলা, বরবটি, মরিচ, কাঁকলোল, ঝিঙ্গে, বাঙি প্রভৃতি। গত এক-দেড় মাস ধরে গ্রীষ্মকালীন সব সবজিই বিক্রি করছিলেন কৃষক। ফলে তাদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছিল। এসব সবজি নিয়ে কৃষকদের অনেক স্বপ্নও ছিল। কিন্তু সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে কয়েক দিনের বৃষ্টি। সরেজমিনে গুলিয়াখালী গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টিতে সব সবজিই এখন পানির নিচে। অনেক রকম সবজি জমিতে পচে ভাসছে। পরিদর্শনকালে এ এলাকার কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, সারাবছর সবজি চাষ করেই তার দিন চলে। এ মৌসুমে তার জমিতে প্রচুর টমেটো ও করলা ছিল। যার মধ্যে টমেটো ছিল ২৪০ শতক ও করলা ৮০ শতক জমিতে। ২৪০ শতক টমেটো চাষ করতে তার চারা, সার-বীজ, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরি, জমি পরিচর্যাসহ তার ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২ লাখ টাকা। প্রতিবছর এই জমি থেকে ৬/৭লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হয়। এবারো একই পরিমাণ বিক্রি হবে এমনই প্রত্যাশা ছিল তার। ইতিমধ্যে ১লাখ টাকার টমেটো বিক্রিও হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কৃষক আইয়ুব আলী তার জমি দেখিয়ে বলেন, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তার সব টমেটো গাছ মরে গেছে। জমির টমেটোগুলোর ৯০ শতাংশই পচে গলে গেছে। ফলে তুলে আনার পর অধিকাংশই ফেলে দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে শুধু গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ থেকে তার ক্ষতি হয়েছে ৬/৭ লাখ টাকা। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি দরে মাত্র ৭/৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু তবুও আমরা হতাশ হইনি। কারণ, প্রচুর টমেটো জমিতে রয়ে গেছে। কখনো দাম বাড়বে আবার কখনো কমবে। লাভ হবেই এমন আশা ছিল আমার। কিন্তু এ বৃষ্টিতে ব্যাপক হারে ফসলহানি হওয়ায় বর্তমানে সবজির আকাল চলছে এখানে। এ কারণে এখন প্রতি কজি টমেটো পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪/১৫ টাকায়। তবুও আমরা হতাশ। কারণ, ৯০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তার করলার জমিতেও একই অবস্থা জানিয়ে তিনি বলেন, ৮০ শতক জমিতে করলা চাষ করে যা লাভ হবে বলে মনে করেছিলাম বর্তমানে তা তো হচ্ছেই না বরং প্রচুর ফলন নষ্ট হয়েছে। তার মতো এ এলাকার প্রায় সব কৃষকই বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। হতাশার কথা জানান, একই এলাকার কৃষক হাসান আলী। বৃষ্টিতে ফসলহানি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এই কৃষক জানান, তিনি ক্ষুদ্র কৃষক। মাত্র ২৪ শতক জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন। এ জমিতে চাষ করতে তার ৩০ হাজার টাকার মতো খরচও হয়েছে। তিনি আশা করেছিলেন কমপক্ষে ৬০/৭০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হবে। কিন্তু এ বৃষ্টিতে সব ফসল ভেসে গেছে। তিনি মাত্র ২০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। লাভ তো দূরের কথা, আরো ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা জানান, এ এলাকার সবচেয়ে বড় কৃষক মোহাম্মদ আলীর টমেটো, করলা, বরবটি, মরিচ ও অন্যান্য সবজি নষ্ট হয়ে ৭/৮ লাখ টাকার ফসল হানি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে অনেক কৃষকের লাখ লাখ টাকার বাঙ্গি-তরমুজ। কৃষকরা আরো জানান, এবার যারা শীতকালীন টমেটো ও সবজি চাষ করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন সবজিতে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। সীতাকুন্ডে সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, বাড়বকুন্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরাসহ সমগ্র উপক‚লীয় এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতায় কৃষকদের কোটি কোটি টাকার সবজি নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। কৃষকদের দাবির সাথে একমত পোষণ করেন গুলিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী মো. জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে বিক্রি করি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ গাড়ি টমেটো সংগ্রহ করি আমি। এছাড়া অন্য সবজিও নিই। তবে এ কয়েকদিন এক গাড়ি টমেটো যোগাড় করতেই হিমসিম খাচ্ছি। বৃষ্টিতে জমিতেই সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়ে গেছে। এদিকে বৃষ্টিতে কৃষির ক্ষতি বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা প্রতিবেদককে বলেন, এ মহূর্তে ১২০ হেক্টর সবজি দুর্যোগ কবলিত বলে রিপোর্ট দিয়েছি আমরা। কিন্তু এখনো ক্ষতির কোন হিসাব করিনি। আরো ১০/১৫দিন পরে ক্ষতি নিরুপন করা হবে। কারণ, অনেক সময় পানি নেমে গেলেও সবজি আবার ঘুরে দাঁড়ায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রকিব ২৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৩৪ পিএম says : 0
প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো আর মানুষের হাত থাকে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন