সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন ঃ অবসরে কি মোরাকাবার তাগিদ ‘কুরআন’ দিয়েছে ?
উত্তর ঃ মেডিটেশন বা মোরাকাবা অর্থ ধ্যান করা। কোনো একটি বিষয় নিয়ে গভীর চিন্তা করা, ধ্যানমগ্ন হওয়া, গবেষণা করা, অনুসন্ধান করা, সুক্ষ জ্ঞান তালাস করা ইত্যাদি। মেডিটেশন অতীতকে শ্নরণ করিয়ে দেয় এবং সু² জ্ঞানের পথ প্রসারিত করে আত্মার বিপ্লব ঘটায়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘(হে নবী!) অতঃপর যখনি আপনি অবসর পাবেন তখনি আপনি (ইবাদতের) পরিশ্রমে লেগে যান। এবং সম্পূর্ণভাবে আপন প্রভ‚র অভিমূখী হউন।’ (সূরা আলাম-নাশরাহ, আয়াত: ৭-৮)। জ্ঞানের দু’টি জগত; একটি জাহেরী অপরটি হলো বাতেনী। অদৃশ্য কিংবা বাতেনী জগতের জ্ঞান  মানুষের লোক চুক্ষুর আড়ালে থাকে। এছাড়া বাতেনী জ্ঞান যততত্র থেকে লাভ করা যায় না। মেডিটেশনের জ্ঞান, নিয়ম ও পদ্ধতি সিদ্ধ ব্যক্তি কিংবা কোনো কামেল মুর্শীদের নিকট হতে জেনে নিতে হয়। আর গুপ্ত বা বাতেনী রহস্যেময় জগত সর্ম্পকে জ্ঞান লাভের জন্যে জগত সংসার থেকে নিজেকে কিছুটা সময় বিচ্ছিন্ন করে মহান প্রভ‚র সান্নিধ্যে বসাকে মেডিটেশন তথা মোরাকাবা বলা হয়।
ইরশাদ হয়েছে,‘নিঃসন্দেহে আসমান সমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং দিবা রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাককে মনে করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এ সৃষ্টি সর্ম্পকে চিন্তা গবেষণা করে (এবং  বলে), হে আমাদের রব, কোনো কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখোনি।’(সূরা আলে ইমরান, আয়াত:১৯০-১৯১)। ধ্যান আত্মার উপলদ্ধির বিষয়। নিজের ভেতরটাকে জাগানোর বিষয়। নিজেকে চিনার বিষয়। গবেষণার বিষয়। অনুসন্ধানী মুমিনের আত্মার খোরাক যূগায় মেডিটেশন । তাই মুমিন বান্দাগণ সময় সুযোগ পেলে দুই চোখ বন্ধ করে মেডিটেশন করেন। আল্লাহর নূরী জগতে প্রবেশ করে নিজের অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর মনে প্রভ‚ সর্ম্পকে প্রশ্ন আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হেরা পাহাড়ের গুহায় ১৫ বছর ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। হযরত মুসা (আঃ)  সিনাই পর্বতে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন।
ইরশাদ হয়েছে,‘যিনি আপনাকে দেখতে থাকেন, যখন আপনি (নামাজে) দাঁড়ান। এবং সিজদাকারীদের মাঝে আপনার উঠা বসাও (তিনি প্রত্যক্ষ করেন)।’ (সূরা শুয়ারা, আয়াত: ১৮-১৯)। নিজের আত্মার রৌশন বৃদ্ধির জন্যে মেডিটেশন করতে হয়। আত্মার জগতকে মেডিটেশন  জাগিয়ে তুলে। ¯্রষ্টার নূরী জগতের পথ দেখিয়ে দেয়। ¯্রষ্টার উপস্থিতি অনুভব করা যায়। মেডিটেশনে নিজের মধ্যে এক ধরনের গরমি ভাব আসে। ইরশাদ হয়েছে,‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন; তোমরা যা কিছুই করছো আল্লাহ পাক তার সব কিছুই দেখেন।’ (সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৪)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আপনার প্রভ‚ কড়া দৃষ্টি রাখছেন।’ (সূরা আল-ফজর, আয়াত:১৪)। সৃষ্টি জুড়েই গুপ্ত জগতের রহস্যের ভান্ডার। অবসরে কিছুটা সময় ¯্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের আশায় ধ্যান করতে পারলে সৃষ্টির অজানা রহস্য সর্ম্পকে জানা সম্ভব। ধ্যানে জ্ঞান লাভ হয়। ধ্যানে সিদ্ধি লাভ হয়।  নিজের ক্বালবে ¯্রষ্টার নূরের ছোঁয়া লাগে।
মেডিটেশন তথা মোরাকাবা সম্পর্কে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও ধামতী আলীয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত আজিমুদ্দিন আহমদ (রাহ.) তাঁর ‘মারেফাতের মূলতত্ত¡’ কিতাবে জালালে আছমা ও ছিফাতের মোরাকাবা, ছামাদিয়াতের মোরাকাবা, জ্বালালী মোরাকাবা, দশ মাকামের মোরাকাবা ও নিছবাতের মোরাকাবাসহ অনেক গুলো মোরাকাবার ছবক ও তাঁর গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। মোরাকাবার উত্তম সময় হলো তাহাজ্জুদের সময়। তাহাজ্জুদের সময় চারদিক নিরব থাকে।তখন চারপাশ কোলাহল মুক্ত থাকে। ঐ সময় মনের একাগ্রতা ধরে রাখা সম্ভব হয়। আল্লাহ সকলকে মেডিটেশনের গুরুত্ব বুঝা ও মেডিটেশনের মাধ্যমে অফুরন্ত ফয়েছ বরকত লাভের তৌফিক দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন ঃ ফিরোজ আহমদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন