১। মোহাম্মাদ ফাতহুল বারী ফাইয়্যাজ, রাজামেহার, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : আদিকালে তেল ছিল কি-না এবং শেষকালে তেল থাকবে কি-না, জানতে চাই এবং কিভাবে আমরা জান্নাতি হতে পারব?
জবাব : আদিম মানুষরা পাহাড়-পর্বত ও গুহায় বাস করতো। তারা কাঁচা গোস্ত ও ফলমুল খেয়ে জীবনধারণ করতো, আমরা তা সমাজ বিজ্ঞান বইতে পড়েছি। আসলে এসব তথ্য পুরোপুরি সত্য নয়। কোনো কারণে বসতিস্থল থেকে আচমকা মানুষ বনে-জঙ্গলের নিকটবর্তী বা নদীর তীরে উপনীত হওয়ার কারণে রন্ধন সামগ্রীর অভাবে কাঁচা গোস্ত ও গাছের ফলমুল খেয়ে হয়তবা জীবনধারণ করতেন। আল্লাহতায়ালা হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)কে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করার পর কি খেয়ে জীবনধারণ করছিল তা অজানা। তবে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা বলা যায় নিশ্চিতভাবে। হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)কে পৃথিবীকে নিক্ষেপ করার সময় তাদের দুজনের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন তোমাদেরকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হ”েচ্ছ, সেখানে তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা রয়েছে। সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য নবী রাসূল পাঠানো হবে। শয়তানকেও এ পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে যাতে মানুষকে বিপদগামী করতে পারে। আবার মানুষকে দিয়েছে শয়তানের শক্তি নির্মূল করে সৎ পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য অত্যধিক শক্তি। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে গম ও যব চাষ করতেন, পশু পালন করতেন। আমরা এসব জেনেছি কোরআন শরীফ থেকে। বিশেষ একটি কারণে আদম (আ.) এর দুই পুত্র কোরবানী দিয়েছিলেন। এক পুত্র দিয়েছেন শস্য দিয়ে আরেক পুত্র দিয়েছেন পশু দিয়ে। তাহলে আমাদের বুঝতে আর বাকি রইল না পৃথিবীর প্রথম মানুষ কৃষি কাজ করতো এবং পশু পালনও করতো। যেহেতু কৃষি কাজ করতো সেহেতু তেলও তখন ছিল বলা যায় নিশ্চিতভাবে। জৈতুন তেলের কথা কিতাব থেকে জানা গেছে। তেল যেহেতু ছিল, আগুনের ব্যবহারও হয়েছিল। কাজেই আদিম মানুষ একমাত্র কাঁচা গোস্ত খেয়েই জীবনধারণ করতো তা বলা যাচ্ছে না। আল্লাহ হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)কে একমাত্র পাঠিয়েছিলেন এই দুনিয়ায়। সাথে ফেরশাতারাও ছিল তাদের সেনাবাহিনী ও হিসাব নিকাশ কাজের জন্য। অদৃশ্য থেকে আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে সাহায্য করা হয়েছিল। সাহায্যের একটি উপকরণ তেল। এই তেল হযরত আদম (আ.) রন্ধনকার্যে ও শরীরে ব্যবহার করতেন। তেল আদি থেকে ছিল, এখনও আছে এবং থাকবে। রন্ধন কাজে তেলের বিকল্প নেই। শাকসবজি, মাছ, গোস্ত রান্না করতে তেল লাগবে। তেলবিহীন শুধু সিদ্ধ করে খাওয়া তেমন স্বাদ হবে না। রন্ধন কাজের জন্য তেল পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে। আর জ্বালানি হিসেবে তেল পাওয়া যাচ্ছে প্রাকৃতিক খনি থেকে। রন্ধন ও জ্বালানি হিসেবে তৈল যেভাবেই পাওয়া যাক না কেন সকল কিছুই আল্লাহ থেকে। এই পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকল কিছুই অকৃত্রিম। কৃত্রিম বলতে কিছুই নেই। মানুষ অবশ্য পরিশ্রম করে তেল সংগ্রহ করে। সকল কিছুই আল্লাহর তরফ থেকে। মানুষ পরিশ্রম করে তা ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে। তেল আছে বলেই মানুষ অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে। তেল দ্বারা গাড়ি চলে, কলকারকাখানাও চলে। আবার তৈলবিহীন সৌর বিদ্যুতের দ্বারা মানুষ চলন্ত যান ও আলো আবিষ্কার করেছে এবং আলোর সন্ধানও পেয়েছে। তবে রান্নার কাজে তেল অবশ্য প্রয়োজন হবে। তেলের কদর থাকবেই। আর এই জন্য আল্লাহতায়ালা তেলের খনির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যখন আল্লাহতায়ালা তেলের ব্যবস্থা বন্ধ করে দিবেন তখন মানুষ তেল ছাড়া সৌর বিদ্যুৎকে আরো বলিষ্ঠভাবে কাজে লাগিয়ে চাল চলন করতে পারবে। কিন্তু রান্না করার জন্য যে তেল সে তেল গাছ থেকে সৃষ্টি। সে তেল অবশ্য আল্লাহ রাখবে। এ পৃথিবীতে মানুষ চালচলনের জন্য যা দরকার তার বিহিত ব্যবস্থা করে রেখেছেন এবং করতে থাকবে। আল্লাহ যা সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করে তা বলার সাথে সাথেই হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা এসব সৃষ্টি করেন আমাদের কল্যাণের জন্য, আমাদের চালচলনে ব্যাঘাত না ঘটার জন্য। আল্লাহতায়ালা আমাদের চলার জন্য যা যা করার দরকার তা সকল কিছুই সৃষ্টি করে রেখেছেন। গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলে বোধগম্য হয় যে, এই দুনিয়াতে কেনো আমাদের পাঠিয়েছেন? আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে পারি আর তা হলো তাঁর আদেশ নিষেধ মানা হলে আমরা বেহেশতে যেতে পারবো। বেহেশতে যেতে পারলে আমরা হবো সার্থক। আল্লাহ আমাদের ভালোমন্দ বুঝার জ্ঞান দিয়েছেন। এই জ্ঞানকে যদি আমরা সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারি, তাহলে শত ভাগ সার্থক হবো আমরা। না হয় আমাদের যেতে হবে বেহেশতের বিপরীত দোযখে। দোযখ এক অশান্তিময় স্থান। আল্লাহ পৃথিবীতে আমাদের চালচলনের জন্য অনেক কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সাথে দিয়েছেন কোরআন ও হাদিস। কোরআনে ও হাদিস মানা হলে আমরা বেহেশতে যাতে পারবো। আর যদি কোরআন ও হাদিস না মেনে শয়তানের কুচক্রী জালে আবদ্ধ হয়ে দুনিয়ার সময় শেষ করি তাহলে আমাদের পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। তাই হে মানুষ আমরা যারা পৃথিবীতে আছি আমাদের অবশ্যই কোরআন ও হাদিস মেনে চলতে হবে। ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা এবং যদি সম্ভব হয়ে তাহলে হজ ও যাকাত পালন করে বেহেশতবাসী হওয়া একান্ত কর্তব্য। ভুলে গেলে চলবে না, আল্লাহ এ পৃথিবীতে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, এই স্বাধীনতাকে সঠিক পথে যদি নিতে না পারি তাহলে জাহান্নামে পতিত হবো। গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে এই দুনিয়াতে আমাদের জীবনটাকে সার্থক করার জন্য আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে। আমাদের সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এই নবীর পর আর কোনো নবী পাঠাবেন না। নবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) সকল নবীর শ্রেষ্ঠ। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবে না। নবী যা বলে গেছেনে তা আমাদের অবশ্য পালন করতে হবে। নবীর আনুগত্য মানে ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, রোজা, হজ ও যাকাত পালন করতে হবে। কোরবানী করতে হবে। জিহাদ করতে হবে। তাহলেই আমরা বেহেশতে যেতে পারবো। তবে এখানে বলা একান্তই আবশ্যক যে, যা যা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব তা করতে হবে। কারোর নামাজ পড়ার শারীরিক ক্ষমতা নেই, রোজা, হজ ও যাকাত পালন করার সামর্থ্য নেই কিন্তু তাদের ঈমানী শক্তি আছে। এই ঈমানী শক্তির দ্বারা তারা বেহেশতে যেতে পারবে। আর যাদের নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, কোরবানী ও জিহাদ করার ক্ষমতা আছে তাদের একটিও বাদ দেওয়া যাবে না। অবশ্য পালন করতে হবে। না হয় বেহেশতে যাওয়া যাবে না। আমাদের অবশ্য মনে রাখতে হবে নামাজ বেহেশতের চাবি। নামাজ যাদের পড়ার শক্তি আছে, সামর্থ্য আছে তারা যদি নামাজ আদায় না করে তাহলে বেহেশতের চাবি পাবে না। কাজেই বেহেশতে প্রবেশ করতে হলে নামাজ অবশ্যই পড়তে হবে। যিনি আন্তরিকতার সাথে নামাজ সম্পন্ন করেন তার দ্বারাই সম্ভব ইসলামের অন্যান্য স্তম্ভগুলো পালন করা। তেল যদি না থাকতো তাহলে দুনিয়াটা অন্ধকার থাকতো। তেলের কারণে আমরা দুনিয়াটা আলোকিত করেছি এবং রন্ধন করতে পারি। এখন যদি তেল না থাকে তাহলে সৌরচুল্লির মাধ্যমে আমাদের চালচলন হবে কিন্তু রন্ধন কাজের জন্য তেল আবশ্যক। সকল প্রকার তেল আছে এবং থাকবে। তেলের কারণে দুনিয়া আলোকিত। এই আলোকিত দুনিয়ায় আমাদের একান্ত অপরিহার্য ইসলামের পাঁচ স্তম্ভ পালন এবং কোরবানি ও জিহাদ পালন করা। না হয় পরকাল জীবন হবে ভয়ানক অন্ধকার। এখানে ভয়ানক অন্ধকার মানে অতলান্তিক কষ্ট ভোগ করা।
উত্তর দিচ্ছেন : কাজী খোরশেদ আলম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন