বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মদ ফাহমিদুল বারী রাইয়্যান, রাজামেহায় মুুনশী মঞ্জিল, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ)-এর অবদান সম্পর্কে আলোকপাত করুন?
জবাব ঃ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর সবচেয়ে বড় অবদান তিনি বিশ্ব মানবকে একত্ববাদ এর মত বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন। তাঁর নব্যুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে সারাটা বিশ্ব বিশেষ করে আরববাসীরা নানা প্রকার কুসংস্কার ও পাপ কাজে নিমজ্জিত ছিল। তাওহীদের কেন্দ্রস্থল কা’বায় ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করে তারা পূজা করতো। প্রাণহীন এসব মূর্তির কাছে মানুষ তার আত্মমর্যাদা বিলিয়ে দিতে লজ্জিত হতো না। নর-নারী, নগ্ন দেহে কা’বা ঘর প্রদক্ষিণ করতে লজ্জাবোধ করতো না। খাদ্য-দ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে কোন বাচ-বিচার ছিল না। মানুষ আর মানুষ ছিল না। যার ফলে শান্তি ও রহমত বলে কিছু ছিল না। ঠিক এমন এক সময় আল্লাহ মোহাম্মদ (সাঃ) কে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করলেন। তাই বর্তমান যুগ এবং কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র যুগটা মোহাম্মদ (সাঃ)-এর যুগ, আর সর্বযুগের নেতা হলেন “হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)”।
বিশ্বনবী বিদায় হজে একলক্ষ চব্বিশ হাজার জনতার সম্মুখে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা সর্বযুগের সর্বকালের মানুষের জন্য মানব কল্যাণকর বাণী। তিনি মানব জাতিকে দুইটি একতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন একটি হচ্ছেঃ মানব জাতির ¯্রষ্টার ঐক্য, আর অপরটি হচ্ছেঃ মানব বংশের প্রতিষ্ঠাতা আদি পিতার ঐক্য। সকল মানুষের ¯্রষ্টা একজন এটি হচ্ছে আত্মিক সম্পর্ক। আর সকল মানুষ একই পিতার সন্তান এটি হচ্ছে রক্তের সম্পর্ক। বিদায় হজের ভাষণে তিনি মানুষকে সম্মান করতে শিখিয়েছেন। মানুষের মর্যাদা দান এটা মানব জাতিকে তাঁর একটা বড় অবদান। মানুষ মানুষের কাছে মাথানত করবে না, একমাত্র প্রভু আল্লাহর কাছে মাথানত করবে।
দাস-দাসী ও নারীদের প্রতি যে ব্যবহার করা হতো তা এক লজ্জা ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। তাই, সেদিন বিদায় হজের ভাষণে দাস-দাসীদের প্রতি সদয় ব্যবহার, তাদের খাদ্য ও বস্ত্রের নিশ্চয়তা দান; পর স্ত্রী, অপহরণ ও ব্যাভিচার না করা এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা না করা। এসব ঘোষণা সে সময়ের জন্য তো বটেই সর্বযুগের জন্য একটা সুন্দর যুগান্তকারী ঘোষণা।
মোহাম্মদ (সাঃ)ই একমাত্র মানুষ যিনি আধ্যাত্মিক, জাগতিক উভয় ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তিনি জানতেন মানুষের সৃষ্টি রহস্য। মানুষ জন্মগতভাবে কোথায় দুর্বল, কেন মানুষকে পৃথিবীতে আসতে হলো, মানুষের মধ্যে কিসের তাড়না সর্বদা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে, এ থেকে মুক্তির পথ কি, এসবই তাঁর জানা ছিল। তাই সর্বপ্রথম ধর্মীয় সংস্কারের মাধ্যমে মানুষকে তিনি পথে এনেছিলেন। এ জন্য ব্যক্তি মানুষকে তার মনোজগতে আমূল পরিবর্তন সাধন করেছেন। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য থেকে সংযমী হয়ে জীবন-যাপনের জন্য। কারণ ব্যক্তি মানুষ নিয়েই পরিবার; পরিবার নিয়েই সমাজ, সমাজ নিয়েই দেশ জাতি। এ কাজে তিনি যেভাবে সফল হয়েছিলেন তার তুলনা নেই। তিনি ছিলেন মানুষের মনের রোগের বড় চিকিৎসক। কারণ, তিনি জেনেছিলেন নিজেকে, জেনেছিলেন তাঁর ¯্রষ্টাকে, জেনেছিলেন সৃষ্টি রহস্যকে।
তাই তিনি মানুষের খাওয়া-পরার সমস্যা হতে শুরু করে নাগরিক ও আন্তর্জাতিক সব সমস্যার সমাধান নৈতিক ভিত্তির উপর স্থাপন করেছেন এবং জাগতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ের মধ্যে এক পূর্ণ সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। তিনি নিজ কাল ও যুগেরই নেতা ছিলেন না, তিনি সর্বকাল ও সর্বযুগেরই নেতা বলেই ইতিহাসের ক্রমবর্ধমান জাতির সাথে অগ্রসর হতে পেরেছেন। তাই, আজও তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারা চৌদ্দশত বৎসর পূর্বের মত তেমনই সুন্দর, তেমনই কল্যাণকর, তেমনই উপযোগী।
উত্তর দিচ্ছেন: নাজির আহমাদ জীবন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন