১। মোহাম্মদ ফাতহুল বারী ফাইয়্যাজ, খেজুরবাগ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : সৃষ্ট জগতে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী কে?
জবাব : হযরত মোহাম্মদ (সা.)কে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে বিশ্ব মানবের শান্তি ও মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসাবে, মানবীয় গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে মানুষ হয়ে দুনিয়া হতে ফিরে যাবার পথ দেখাতে। তিনি ছিলেন ‘বিশ্বের রহমত’। আল্লাহ বলেন, “হে নবী। আমি আপনাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।” (আল কোরআন) কখন হতে তিনি রহমত? যখন হতে সৃষ্টির সূচনা। তিনি কতদিন পর্যন্ত রহমত? তা হল যতদিন এ সৃষ্টি জগৎ থাকবে ততদিন। মানব চরিত্রে যত প্রকার গুণ থাকা দরকার তা তার চরিত্রে পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল। আল্লাহ বলেন “হে নবী। নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” (আল কোরআন)
তিনি আভিজাত্যের গৌরব ও বংশ মর্যাদার মূলে কুঠারাঘাত করেন। মানুষ মানুষে সকল প্রকার অসাম্য ও ভেদাভেদ দূর করেন এবং শুধুমাত্র মানবতার ভিত্তিতে সমাজবন্ধন দৃঢ় করেন। তিনি ঘোষণা করেন, “সকল মানুষ সমান, মানুষের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে আল্লাহর প্রতি সর্বাধিক অনুগত এবং মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী।”
দাস প্রথার মত নিকৃষ্ট প্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি ঘোষণা করলেন, “গোলামকে আযাদী দানের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কাজ আল্লাহর কাছে আর নাই।” তিনি নিজে অনেক দাসকে মুক্তি দিয়েছেন। ক্রীতদাস যায়েদকে সেনাপতি করে এবং হাবসী ক্রীতদাস হযরত বেলাল (রা.)কে প্রথম মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করে তাদের মুক্তি ও পদমর্যাদার উন্নতির পথ সুপ্রশস্ত করেন।
সভ্যতা গর্বিত গ্রিক হতে শুরু করে আরব ও বিশ্বের সর্বত্র নারীরা ছিল অবহেলিত ও পুরুষদের দাসী ও ভোগের বস্তু। ইসলাম নারীকে অভূতপূর্ব নাগরিক অধিকার দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “পুরুষের নারীর উপর যতটা অধিকার আছে, নারীরও পুরুষের উপর ঠিক ততটা অধিকার আছে।” রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার করে।” তিনি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ও মৃত স্বামীর সম্পত্তি ভোগ দখলের অধিকার ও বিবাহে নিজ মতামত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা দেন। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত একথা ঘোষণা করেন।” শিশুকন্যা হত্যার মত জঘন্য প্রথাও তিনি বন্ধ করেন।
হযরত মোহাম্মদ (সা.) আরবের রাজনৈতিক জীবনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করেন। ইসলাম-পূর্ব যুগে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে দলীয় কোন্দল ও যুদ্ধ লেগে থাকত। বহু দলে বিভক্ত আরববাসীকে তিনি এককেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে এনে শক্তিশালী জাতিতে পরিণত করেন।
শাসনকার্যের সুবিধার জন্য আরব দেশকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও বিচারক নিযুক্ত করেন। মদীনার মসজিদে বসে তিনি প্রধান বিচারপতি ও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন কোরআনের নির্দেশ, নিজ বিচার-বুদ্ধি এবং সাহাবাদের সাথে আলোচনা করে। এভাবে ঐশীতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের সমন্বয়ে একটি সুন্দর শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
ইসলাম-পূর্ব আরবে কোনরূপ সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ছিল না। বেশিরভাগ লোক পশু পালন অথবা লুটতরাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। চড়া হারে সুদ গ্রহণ প্রথা প্রচলিত ছিল। হযরত ধনবৈষম্য দূর করে সঞ্চয় ও বণ্টনের সামঞ্জস্য বিধান করেন। তিনি নীতি সম্মত উপায়ে অর্থ উপার্জন করে তা সাদকা ও যাকাতের মাধ্যমে সেই অর্থের কিছু অংশ গরীবদের মধ্যে বণ্টন করার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পদে, যাকাতে, জনসাধারণের অধিকার ও ভোগ করার সুযোগ-সুবিধা থাকে তা বিবেচনা করে তিনি পাঁচ প্রকার রাজস্বের প্রবর্তন করেন। যথা-(১) আল গনিমাহ, (২) যাকাত, (৩) খারাজ, (৪) জিজিয়া, (৫) আল’ফে। ঐগুলি আয়ের উৎস ছাড়াও সাদকা নামে ইচ্ছাধীন এক প্রকার আয়ও রাষ্ট্রের ছিল। এভাবে যে রাজস্ব সংগৃহীত হত তা বায়তুল মালে জমা দেয়া হত এবং নির্দিষ্ট হারে জনগণের মধ্যে বণ্টন করা হত। তিনি আরববাসীকে কৃষিকার্য ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেন। এর ফলে নিতান্ত দরিদ্র আরব দেশ একটি সম্পদশালী দেশে পরিণত হয়।
তিনি ছিলেন ‘বিশ্বশান্তি’ প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন।’ সমগ্র সৃষ্টির জন্য আল্লাহর রহমত। পরধর্মে তিনি যেমন ছিলেন পরম সহিষ্ণু, তেমনি পররাষ্ট্রের প্রতি তার বাণী ছিল শান্তি-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের। এ উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন রাজদরবারে দূত প্রেরণ করেন। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে নীতিতে মহানবী ছিলেন আস্থাবান। এই নীতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আন্তর্জাতিক বিবাহকে স্বীকৃতি দেন। উদার এবং সহনশীলতার পরিচায়ক মদীনা চাটারে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ নীতিতে তিনি একটি সুসংগবদ্ধ জাতিই গঠন করেন নাই বরং এমন একটি সর্বপ্রথম অলিখিত সংবিধান তৈরী করেন যা পরবর্তী কালের সংবিধানগুলোর অগ্রদৃত ছিল। ঐতিহাসিক গীবনের মতে, ‘মহানবী, ধর্মনেতা, রাজনীতিজ্ঞ এবং প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেন। উপরন্তু আল্লাহর উপর প্রগাঢ় আস্থা ও বিশ্বাস ব্যতীত মানব জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অলিখিত থেকে যেত।”
উত্তর দিচ্ছেন ঃ নাজীর আহমাদ জীবন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন