শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মদ ফাহমিদুল বারী রাইয়্যান, খেজুরবাগ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : আত্মার খোরাক মোরাকাবা, এ বিষয়ে আলোকপাত করুন?
জবাব : মোরাকাবায় বসার তাগিদ কোরআনে দেয়া হয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) অতঃপর যখনি আপনি অবসর পাবেন তখনি আপনি (ইবাদতের) পরিশ্রমে লেগে যান। এবং সম্পূর্ণভাবে আপন প্রভুর অভিমুখী হউন’। (সূরা আলাম-নাশরাহ, আয়াত : ৭-৮)। জ্ঞানের দুটি জগত; একটি জাহের অপরটি হলো বাতেনি জগত। যা মানুষের লোকচক্ষুর আড়ালে থাকে। বাজারের বিক্রিত বই পড়ে শরীয়তের জ্ঞান লাভ করা যায়। বাতেনি জ্ঞান যততত্র হাটে-বাজারে পাওয়া যায় না। কোনো কামেল মুর্শিদের নিকট হইতে মোরাকাবার ছবক ও নিয়ম পদ্ধতি শিক্ষা নিতে হয়। গুপ্ত বা বাতেনি রহস্যময় জগতের জ্ঞান লাভের জন্য জগত সংসার থেকে কিছুটা সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে বসাকে মোরাকাবা বলা হয়। মোরাকাবার মূল উদ্দেশ্যে হলো প্রভুর নিকট থেকে ফায়জে নেয়ামত হাছিল করা। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং দিবা-রাত্রির আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহ পাককে মনে করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের এ সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে (এবং বলে), হে আমাদের রব, কোনো কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখনি’। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত :১৯০-১৯১)। মোরাকাবা হলো আত্মার উপলব্ধির বিষয়। নিজের ভেতরকে জাগানোর বিষয়। নিজেকে চিনার বিষয়। গবেষণার বিষয়। অনুসন্ধানী মুমিনের আত্মার খোরাক যোগায় মোরাকাবা। তারা সুযোগ পেলে দুই চোখ বন্ধ করে মোরাকাবায় বসে যান। আল্লাহর নূরী জগতে ডুব দেয়ার চেষ্টা করেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মনে প্রভু সম্পর্কে প্রশ্ন জাগার সাথে সাথে ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) হেরা পাহাড়ের গুহায় ১৫ বছর ধ্যান করেছেন। হযরত মুসা (আ.) সিনাই পর্বতে ধ্যান করেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘যিনি আপনাকে দেখতে থাকেন, যখন আপনি (নামাজে) দাঁড়ান। এবং সিজদাকারীদের মাঝে আপনার উঠা-বসাও (তিনি প্রত্যক্ষ করেন)। (সূরা শুয়ারা, আয়াত : ১৮-১৯)। নিজের আত্মার রৌশন বৃদ্ধির জন্যে মোরাকাবা করতে হয়। আত্মাকে তাজা করতে হয়। ¯্রষ্টার নূরকে আলিঙ্গন করতে হয়। মোরাকাবার মাধ্যমেই নিজের মধ্যে ¯্রষ্টার এক ধরনের উপস্থিতি অনুভব করা যায়। গরমি ভাব লক্ষ্য করা যায়। ¯্রষ্টার উপস্থিতি সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সাথেই আছেন; তোমরা যা কিছুই করছো আল্লাহ পাক তার সবকিছুই দেখেন’। (সূরা আল-হাদীদ, আয়াত : ৪)। আরো এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আপনার প্রভু কড়া দৃষ্টি রাখছেন’। (সূরা আল-ফজর, আয়াত : ১৪)।
সমগ্র সৃষ্টিজুড়েই অনেক অজানা রহস্যের ভা-ার রয়েছে। মিছে মায়া-মোহ ত্যাগ করে কিছু সময়ের জন্য নিজেকে ¯্রষ্টার সত্তার সাথে মোরাকাবার মাধ্যমে সংযুক্ত করতে পারলেই সৃষ্টির অনেক অজানা রহস্য জানা যায়। নিজের ক্বালব ¯্রষ্টার নূরের পরশে আলোকিত হয়। মৃত্যু পর্যন্ত আত্মার ক্ষুধা তৃষ্ণার প্রয়োজন হয় না। বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও ধামতী আলীয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত আজিমুদ্দিন আহমদ (রাহ.) তাঁর ‘মারেফাতের মূলতত্ত্ব’ কিতাবে জালালে আছমা ও ছিফাতের মোরাকাবা, ছামাদিয়াতের মোরাকাবা, জ্বালালী মোরাকাবা, দশ মাকামের মোরাকাবা ও নিছবাতের মোরাকাবাসহ অনেকগুলো মোরাকাবার ছবক ও তাঁর গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। মোরাকাবার উত্তম সময় হলো তাহাজ্জুদের সময়। এ সময় চারদিক নীরব থাকে। হৈ চৈ কোলাহল থাকে না। মনের একাগ্রতা ধরে রাখা সম্ভব হয়। আল্লাহ সকলকে মোরাকাবার গুরুত্ব বুঝার ও মোরাকাবার ফয়েছ বরকত হাছিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন