শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

জিজ্ঞাসার জবাব

প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মদ লাবীবুল বারী উসাঈদ, উত্তরা, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : আশুরার ইতিহাস ও তাৎপর্য কি?
জবাব : মহররম মাসের দশ তারিখ ইতিহাসে আশুরা নামে অভিহিত। প্রাচীনকালের নানা জনগোষ্ঠীর কাছে ‘আশুরা’ পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। ইহুদিদের কাছে ‘আশুরা’ জাতীয় মুক্তি দিবস হিসেবে পরিচিত। আশুরার মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত। মুসলমানরা রোজা পালনের মাধ্যমে আশুরার মাহাত্ম্য স্মরণ করে থাকে। আশুরার দিনে পৃথিবীর বহু চাঞ্চল্যকর ঘটনা সংঘটিত হয়। আসমান-জমিন, আরশ-কুরসি ও আদি পিতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি এ দিনে, ধরা পৃষ্ঠে প্রথম বারি বর্ষণ হয়, হযরত নুহ (আ.)-এর জাহাজ মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ, ফেরাউনের নির্যাতন থেকে হযরত মুসা (আ.) কর্তৃক ইহুদিদের উদ্ধার, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে হযরত আইয়ুব (আ.)-এর সুস্থতা লাভ, মৎস্য উদর থেকে হযরত ইউনুস (আ.)-এর নির্গম, হজরত সুলায়মান (আ.)-কে পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজত্ব প্রদান, নমরুদের অগ্নিকু- থেকে ইব্রাহিম (আ.)-এর নিষ্কৃতি, হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর চক্ষু জ্যোতি পুনঃপ্রাপ্তি, কূপ থেকে হযরত ইউছুফ (আ.)-কে উদ্ধার, হযরত ইদ্রিস (আ.) ও হযরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে উত্তোলন, কারবালায় হোসাইন (রা.)-এর শাহাদতসহ বিপুল ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী আশুরা (মুফতি আশফাক আলম কাশেমী, ফাজায়েলে মহররম, পৃ.৩৫-৩৬)। মদিনায় হিজরতের সফর করে রাসূল (সা.) লক্ষ্য করেন যে, ইহুদিরা ‘আশুরা’ দিবসে রোজা রাখছে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা রাখছ? তারা বলল, এটা এমন এক মহান দিবস, যেদিন আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি প্রদান করেছিলেন, ফেরাউনকে তার সম্প্রদায়সহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। তাই হযরত মুসা (আ.) কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এদিন রোজা রাখেন। এ কথা শুনে রাসূল (সা.) বলেন, আমরাও রোজা রাখি। ‘তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রাসূল (সা.) রোজা রাখেন অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন’ (সহি মুসলিম, ১/৩৫৯)। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেন, রমজানের পর সব রোজার চেয়ে আশুরার রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ (জামে তিরমিজি ১/১৫৬)। পবিত্র আশুরার দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরা দিবসে রোজা রাখবে তার এক বছরের রোজার কাফফারা (মাফ) হয়ে যাবে (মুসলিম ১/৩৬৭)। আশুরার দিন রোজা রাখলে ইহুদিদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যায় বিধায় রাসূল (সা.)-এর এক দিন আগে বা একদিন পরে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন (মুসনাদে আহমদ) ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ১০ই অক্টোবর (৬০হিজরির ১০ মহরম) কারবালার প্রান্তরে মহানবীর দোহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত আশুরাকে তাৎপর্যম-িত করে। খিলাফত ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবন ছিল হোসাইন (রা.) এর মূল লক্ষ্য। মুসলিম জাহানের বিপুল মানুষের সমর্থন ছিল তার পক্ষে। মদিনার পরিবর্তে দামেস্কে রাজধানী স্থানান্তর, উমাইয়াদের অনৈসলামিক কার্যকলাপ, কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতা। সর্বোপরি ইহুদি আবদুল্লাহ ইবনে সাবার যড়যন্ত্র কারবালার হত্যাকা-ের জন্ম দেয়। ইয়াজিদের বিরুদ্ধে কুফাবাসীদের সাহায্যে আশ্বস্ত হয়ে হজরত হুসাইন (রা.) সপরিবারে রওনা হলেন। ফোরাত নদীর তীরে কারবালা নামক স্থানে পৌঁছালে কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ তাকে বাধা প্রদান করে। রক্তপাত বন্ধের জন্য হোসাইন (রা.) তিনটি প্রস্তাব দেন। প্রথমত তাকে মদিনায় ফিরে যেতে দেয়া হোক। দ্বিতীয়ত, তুর্কি সীমান্তে অবস্থান করতে দেয়া হোক। তৃতীয়ত, ইয়াজিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দামেস্কে প্রেরণ করা হোক। কিন্তু ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নিঃশর্ত আত্মসর্মপণ করে তার হাতে আনুগত্যের শপথ নিতে আদেশ দেন। হযরত হোসাইন (রা.) ঘৃণাভরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। অবশেষে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ৪ হাজার সৈন্যের একটা বাহিনী হযরত হোসাইন (রা.)-এর যাতায়াতের পথ বন্ধ করে অবরুদ্ধ করে ফেলে এবং ফোরাত নদীতে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়। ১০ মহররম ইয়াজিদ বাহিনী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই অসম যুদ্ধে একমাত্র পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদিন ছাড়া ও ৭০ জন পুরুষ শহীদ হয়। ইমাম হোসাইন (রা.) নির্মমভাবে শহীদ হন। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ছিন্ন মস্তক বর্ষা ফলকে বিদ্ধ করে দামেস্কে প্রেরিত হয়। ইতিহাসবিদ গিবন বলেন, ‘সেই দূরবর্তী যুগে ও পরিবেশে হজরত হোসাইনের মৃত্যুর শোকাবহ দৃশ্য কঠিনতম পাঠকের হৃদয়ে সমবেদনা সঞ্চয় করবে।’
উত্তর দিচ্ছেন : এইচ এম আবদুর রহিম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন