শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ধুলায় মিশে আছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঈদ আনন্দ

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে : রাত পোহালেই ঈদ। একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। প্রতিবছর এভাবে মুসলিম বিশ্বে আসে ঈদ। কিন্তু বরাবরই নিরানন্দে কাটে পাশ^বর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঈদ। দেশের দক্ষিণ পূর্ব সীমান্তের উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী শিবিরগুলোতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নিরানন্দে ঈদ উদযাপন করে আসছে যুগের পর যুগ। একইভাবে মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারাও মিয়ানমার সরকারের নানা বাধার কারণে উপভোগ করতে পারেনা ঈদের আনন্দ। যেন ধুলায় মিশে আছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঈদ আনন্দ। ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলামানরা ব্যাপক হারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। বিভিন্ন সময় সেদেশের মগদস্যু এবং সরকারী বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান উখিয়া-টেকনাফের কয়েটি জাতিসংঘ স্বীকৃত শিবিরে অবস্থান করলেও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবনের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান। এরা ১৯৭৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতার কারণে তারা মিয়ানমারের নাগরিক হয়েও দেশে ফিরতে পারছে না।
তবে স্বদেশে ফেরার সুযোগ সৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন রোহিঙ্গারা। অথচ রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি দীর্ঘ ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও এর কোন সমাধান হচ্ছে না। এতে কক্সবাজারে অনিয়ন্ত্রিত রোহিঙ্গা বসবাসের ফলে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিশাল অঙ্কের রোহিঙ্গাদের যেমন চাপ পড়ছে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে, তেমনি প্রভাব পড়ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পরিবেশে। তবে রোহিঙ্গারাও চায়, সম্মানজনকভাবে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে। এজন্য দরকার আরো জোরদার কূটনৈতিক যোগাযোগ। ২০ জুন আন্তর্জাতিক শরনার্থী দিবস উপলক্ষে গত মঙ্গলবার উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়দের নিয়ে আয়োজিত এক অলোচনা সভায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। এক অনুন্ধানে দেখা যায়, উখিয়ায় কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়ায় অবস্থিত দু’টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজার। এর বাইরেও কুতুপালং ও বালুখালীতে অনিবন্ধিত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ছাড়াও দেশের এই অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। তবে কোন সংস্থার কাছেই নেই এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান। পাশাপাশি, মিয়ানমারে সহিংসতাসহ নানা কারণে প্রতিবছরই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ও শরণার্থীর সংখ্যা।
এদিকে রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন তরান্বিত করার দাবিতে উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তায় এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে করেছে। এতে উপস্থিত ছিলেন, উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী, সদস্য মুজিবুল হক আজাদ, সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, এম.এ মনজুর, সাংবাদিক রতন কান্তি দে, নুরুল হক খান, ইলিয়াছ কাঞ্চন, মৌলভী বখতিয়ার আহামদ, আবুল হোছন মাঝি, ডাঃ মুজিব, মাহমুদ উল্লাহ মেম্বার প্রমুখ। এসময় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আজ জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়েছে। এই সমস্যা মিয়ানমারের হলেও চাপ পড়ছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারকে সমাধান করতে হবে। যুগযুগ ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারে বসবাস করে আসছে। তারা ঐদেশেরই নাগরিক। স¤প্রতি মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে সেনা ও রাখাইন উগ্রাবাদিরে হাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা নতুন করে সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে। সরকার তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তরিক হলেও মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বিগত ১৯৭৮ সালে ১ম দফায় এদেশের রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে এসময় প্রায় ২লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু মিয়ানমারের বরাবরাই একটি কথা ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়’। তাই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনো ঝুলে আছে। ঐতিহাসিকভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের নাগরিক হলেও মিয়ানমার সরকার অযৌক্তিভাবে এই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করে আসছে। স্থানীয় অনেকের মতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধার কারণে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করছে বলেও তাদের অভিযোগ। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াতেই যেন আটকে আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন। দীর্ঘ সময় ধরে নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে। তবে সম্প্রতি জাতিসঙ্গের কফি আনান কমিশন রোহিঙ্গা শিবির পরির্দশনের সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্বসহ সম্মানজনক প্রত্যাবাসন হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় বলে জানিয়েছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ্ব মুসলিম সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও ধুলায় মিশে আছে যেন নির্যাতিত, ঘর ছাড়া, দেশ ছাড়া এসব রোহিঙ্গাদের ঈদ আনন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন