সরদার সিরাজ : যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের প্রধান আর্থিক ও সামরিক শক্তি। চীন ও রাশিয়া সা¤প্রতিক সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, বিভিন্ন স্থানে আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করছে। কিন্তু এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সমতূল্য হয়নি। তাই দু’চারটা দেশ ছাড়া বেশিরভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রকে সমীহ করে চলে। তদ্রæপ জাতিসংঘ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহ এবং আন্তর্জাতিক অন্যসব প্রতিষ্ঠান/সংস্থাও। কারণ, এসবের প্রায় সবগুলোরই প্রধান অর্থদাতা যুক্তরাষ্ট্র। তাই যুক্তরাষ্ট্র যে সংস্থায় অর্থ প্রদান বন্ধ কিংবা হ্রাস করে দেয়, সে সংস্থা বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সর্বপরি সৃষ্টিশীলতায়ও দেশটি এক নম্বরে। ভোক্তা হিসেবেও। কথিত আছে, সমগ্র বিশ্ববাসী যা ভোগ করে, তার প্রায় সমান ভোগ করে মার্কিনীরাই। এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের এক নম্বর দেশ বলে খ্যাত। সে দেশের প্রেসিডেন্টও বিশ্বের সর্বাধিক শক্তিশালী ব্যক্তি। তার অঙ্গুলি হেলনিতে বহু দেশের অনেক কিছু ঘটে যায়। অথচ সেই পরাক্রমশীল ব্যক্তিই স্বদেশে চরম অসহায়! সব কিছুতেই হাত-পা বাঁধা। যেমন: আদালতের কাছে, কংগ্রেসের কাছে, সিনেটের কাছে, সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে, মিডিয়ার কাছে, নাগরিক সমাজের কাছে। তাই তিনি ক্ষমতা বলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। কখনো বা হুকুমজারি করলেও তা দেশের জন্য কল্যাণকর না হলে আদালত কিংবা কংগ্রেস কিংবা সিনেট কিংবা সরকারী অন্য প্রতিষ্ঠান তা বাতিল করে দেয়। প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করে। কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হয়। এছাড়া, ব্যাপক প্রভাবশালী মিডিয়া চরম বিরুদ্ধাচারণ করে। তাতে জনমত ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী বলে কোন প্রতিষ্ঠানই বিন্দুমাত্র ভয় কিংবা সংকোচ কিংবা স্বজনপ্রীতি অথবা সমীহ করে না। অর্থাৎ কেউই ছাড় দেয় না। একই অবস্থা সে দেশের অন্য ক্ষমতাবান ব্যক্তির কিংবা সাধারণ মানুষেরও। অর্থাৎ কোন মার্কিনীই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কেউ ভুল করে অথবা গায়ের জোরে কোন বে-আইনী কাজ করলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ধরে ফেলে। কারণ, দেশটির প্রত্যেক প্রতিষ্ঠাই পূর্ণ স্বাধীন ও মহাশক্তিশালী এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনও পূর্ণ স্বাধীন, যোগ্য ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। কেউ সরকারের দলদাস-দালাল-পাচাটা-অনুগত নয়। প্রত্যেকেই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, সরকারের নয়। তাই তারা কোন কর্তাব্যক্তিকেই তোয়াক্কা করে না। যুক্তরাষ্ট্র বহির্বিশ্বে যতই দখলবাজ-সাম্রাজ্যবাদী-জুলুমকারী-ঘৃণিত বলে খ্যাত হোক না কেন, দেশের অভ্যন্তরে তারা সকলেই খুবই আইনানুগ। তাই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পদে পদে চরম নাস্তানুবাদ হচ্ছেন। কারণ, তার বেশিরভাগ নির্দেশ বিতর্কিত এবং রাষ্ট্রের জন্য অকল্যাণকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে মনে করে আদালত তা বাতিল স্থগিত করছেন। কংগ্রেস-সিনেট অনুমোদন করছে না। এমনকি তার দলের অনেক প্রতিনিধিও তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন। তবুও তার সদস্য পদ খারিজ হচ্ছে না। সে ব্যবস্থাও নেই সেখানে। সরকারি আমলারা দ্বিমত পোষণ করে বিবৃতি দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থা-এফবিআই তার বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে। এমনকি তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালে রাশিয়ার সাথে যোগসাজশের বিষয়ে। শেষাবধি তিনি নানাবিধ অভিযোগে অপসারিতও হতে পারেন। সে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। উল্লেখ্য, এর আগে প্রেসিডেন্ট নিক্সন, সম্ভবত: ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে ওয়াটার গেট কেলেংকারীর অভিযোগে অপসারিত হন। আর এখন ট্রাম্পের ভাগ্যেও তাই ঘটতে চলেছে ‘পাগল দি গ্রেট’ অভিযোগে। যাহোক, বর্ণিতভাবেই চলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বাধীনতাত্তোর কাল থেকেই। দেশটিতে গণতন্ত্র ও সুশাসন খুবই শক্তিশালী। আর এটাই হচ্ছে দেশটির সবদিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার এবং বিশ্বের শ্রেষ্টত্ব অর্জনের মূল রহস্য।
স্মরণীয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় শক্তিশালী গণতন্ত্র ও সুশাসন বিশ্বের অন্য বহু দেশেও বিদ্যমান। যেমন: ইউরোপের সব দেশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ দেশ, এশিয়ার ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ। এমনকি আদিকাল থেকেই বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত তথা ক্ষুধা, মহামারি, দুর্যোগ, হানাহানি, যুদ্ধ, জঙ্গিপনা, পরাধীনতা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য ইত্যাদি সম্পন্ন অঞ্চল তথা আফ্রিকার অনেক দেশেও গণতন্ত্র ও আইনের শাসন খুব শক্তিশালী। সেখানেও কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যেমন: মাত্র দুই দশক যাবত স্বাধীন ও গণতন্ত্র প্রবর্তনের দেশÑ দক্ষিণ আফ্রিকা, তার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরীর অধিক মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন, আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। কারণ, সেখানে আইনের শাসন শক্তিশালী। তাই প্রেসিডেন্ট কেন, অন্য কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এছাড়া, জঙ্গিপনার জনক দেশ নাইজেরিয়া এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট পরাজিত হন এবং তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নিকট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বিনা দ্বিধায়। কারচুপির কোন অভিযোগ তোলেন না এবং তা করলেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, সেখানকার নির্বাচন কমিশন পূর্ণস্বাধীন ও শক্তিশালী। তাই ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের আওতায়ও পরবর্তী প্রেসিডেন্টের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েও তার বিজয়ের জন্য বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। তদ্রæপ রাষ্ট্রের অন্যসব প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। কারণ, সেসবও পূর্ণ স্বাধীন এবং খুবই শক্তিশালী। সা¤প্রতিক সময়ের আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানকার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে বন্ধুর এক কোম্পানীর দুর্নীতিতে সহায়তা করার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন। উপরন্তু কারাগারেও নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমারও অপসারিত হয়েছেন দুর্নীতির অভিযোগে। তার বিচার চলছে। পাশের দেশ ভারত। সেখানে বহু ভাষার, বহু গোত্রের, বহু জাতির, বহু বর্ণের, বহু ধর্মের মানুষের বসবাস। সর্বপরি দেশটি দরিদ্র। এখনো অর্ধেকের বেশি মানুষ গরীব। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র ও সুশাসন খুবই মজবুত স্বাধীনতাত্তোর থেকেই। তাই একের পর এক মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত হচ্ছেন, জেল খাটছেন। প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অভিযুক্ত হয়ে বিভিন্ন শাস্তি ভোগ করছেন। হিন্দু মৌলবাদী দল- বিজেপি এখন ক্ষমতায়। দলটির ক্যারিসমেটিক নেতা নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েই ঘোষণা করেন, সবকা সাথ, সবকা উন্নতি। কিন্তু তার সেই দেশের সার্বিক উন্নতি ও শান্তির মধুরবাণী বিলীন হয়ে যাচ্ছে দলের চরম উগ্রবাদী নেতা-কর্মীদের গরু আর ঘর আপসা কেলেংকারীতে। এমনকি এটা গলায় কাটা হয়েও বিঁধতে চলেছে। তবুও সেখানে আইনের বরখেলাপ হচ্ছে না। তাই বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার অভিযোগে দলটির শীর্ষনেতা এল কে আদভানী, মুরলী মনোহর যোশি, উমা ভারতীসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। গুজরাট হত্যাকাÐের হুকুমদাতার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী মোদিও বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলেন। তবুও সরকার দলীয় সভার সিদ্ধান্তে এই দু’টি মামলাসহ দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত অন্যসব মামলা আদালত থেকে প্রত্যাহার করে নেয়নি। আর তা সম্ভবও নয়। কারণ, সেখানে আইন-আদালতের কর্মে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ, এ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী। তদ্রæপ রাষ্ট্রের অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও। এমনকি প্রচার মাধ্যমেও। তাকে নানা কালা-কানুনে বন্দি করা হয়নি। কিংবা সেলফ সেন্সরশীপে যেতে বাধ্য করা হয়নি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। সেখানেও দলীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আদালতের বিচারাধীন মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীন। এরূপ আরো বহু নজির আছে বিভিন্ন দেশের। নিবন্ধের কলেবর সীমিত রাখতে তা বলা সম্ভব নয়।
কিন্তু বাংলাদেশে? এ দেশে বর্ণিত বিষয়গুলোর চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, দেশটি স্বাধীন হলেও তার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো পূর্ণ স্বাধীন নয়। স্বাধীনতা অর্জনের অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই দেশের সংবিধান রচিত এবং তা ১৯৭৩ সাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। তাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের পরিষদগুলোকে পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ অহরহ পবিত্র সংবিধান রক্ষার কথা বলেন। কিন্তু তার বিধানসমূহ বাস্তবায়ন করেন না কেউই। এমনকি সরকারও। সকলেই সবকিছুই নিজের স্বার্থমত ব্যবহার করেন। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টে’ এর সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্ট স্মরণীয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঐ সংস্থা প্রতিবছর বিশ্বের কোন দেশে আইনের শাসন কেমন তার তালিকা প্রকাশ করে। তাঁদের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ সালের অক্টোবরে। তাতে বলা হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ চতুর্থ। এই অঞ্চলের ছয়টি দেশের উপর গবেষণা চালায় মার্কিন ঐ সংস্থা। অন্য দেশগুলো হচ্ছে : আফগানিস্তান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। এর মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিক দিয়ে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। আর শীর্ষে আছে নেপাল। স্মরণীয় যে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেন বিচার বিভাগ। সংবিধান রক্ষা করার পূর্ণ কতৃত্বও এই বিভাগের। আর সে প্রতিষ্ঠানই পরাধীন, নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন রয়েছে। তাই বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রধান বিচারপতি প্রায়ই আহাজারি করছেন। এ প্রত্যাশ্যা সমগ্র। তবুও তার এবং সমগ্র দেশবাসীর সে আকাক্সক্ষা পূরণ হচ্ছে না। বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানেই উল্লেখ নেই, এ ব্যাপারে মাননীয় উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা আছে। মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এই রায় দেন ২/১২/১৯৯৯ তারিখে। তবুও এখনো এই রায় বাস্তবায়ন হয়নি। একই অবস্থা রাষ্ট্রের অন্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের আওতাধীন পরিষদগুলোরও! ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। উন্নতি যা হয়েছে, তার বেশিরভাগ জুটেছে নগণ্য কিছু মানুষের ভাগ্যে। তাও অবৈধ পথে। এভাবে তারা দেশের অধিকাংশ সম্পদের মালিক বনে দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে। অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যে জোটেনি স্বাধীনতার সুফল। ফলে আয় বৈষম্যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন না হলেও রানার্সআপ হয়েছে। উপরন্তু এই লুটেরা গোষ্ঠি দেশের সব অপকর্মেরও গডফাদার। এমনকি রাজনৈতিক কতৃত্বও দখল করেছে। কিন্তু কৃত অপরাধের তেমন বিচার হচ্ছে না কারোরই। দ্বিতীয়ত: দেশের যেটুকু উন্নতি হয়েছে, তাও টেকসই নয়। এই হচ্ছে সুশাসনের হাল-হকিকত। গণতন্ত্রের চিত্রও প্রায় একই। আর এসব কারণেই দেশের সার্বিক উন্নতি ও শান্তি হচ্ছে না।
না! আর এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। দেশ স্বাধীন হয়েছে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। স্বাধীনতার প্রধান আকাক্সক্ষা ছিলÑ অবাধ গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সকলের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু সে আকাক্সক্ষাগুলো আজও পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি পূর্ণ গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়। সমগ্র দেশবাসীর কামনা-বাসনা হচ্ছে মহান স্বাধীনতার প্রধান আকাক্সক্ষাসমূহ পূরণ। এ জন্য প্রয়োজন পূর্ণ গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সে লক্ষ্যে সংবিধান অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের পরিষদগুলোকে পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালী করা অপরিহার্য। আর এর সাথে প্রয়োজন ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবীদের জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি বন্ধ এবং বিদেশে রাজনৈতিক দলের শাখা স্থাপন ও দেশীয় রাজনীতির চর্চা নিষিদ্ধ করা। এসব যত তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হবে, ততই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। তাই দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে এসব পূরণ করার জন্য একযোগে কাজ করা আবশ্যক। আর এটাই হচ্ছে দেশের বর্তমানের প্রধান কর্ম। অবশ্য সরকার ইচ্ছা করলে নিমিষেই এসব বাস্তবায়ন করতে পারেন। আইনগতভাবে সেই সক্ষমতাও আছে। তাই এটা করা উচিত যথাশিগগিরই। কারণ, এই সরকারের প্রধান দল স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল। সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে অহরহ বলা হচ্ছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান বিষয় হচ্ছে: অবাধ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা, সকলের ন্যায় বিচার প্রাপ্তি ও অর্থনৈতিক মুক্তিÑ এসব পূরণ হওয়া ছাড়া কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়? আর এসবের জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও স্থানীয় পরিষদসমূহ পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালীকরণ। অপরদিকে, সরকার যদি এসব না করেন; তাহলে, বিরোধী দলগুলোকে এসব করার জন্য সরকারের নিকট প্রবল দাবি জানানো উচিৎ এবং তা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রæতি দেয়া দরকার ও ক্ষমতায় গেলে কতদিনের মধ্যে তা করা হবে সেই ঘোষণা দেয়া আবশ্যক। বিশেষ করে প্রধানবিরোধী দলের। কারণ, দেশবাসী এতোদিন শুধু বহু আশার বাণী, বক্তৃতা ও প্রতিশ্রæতি শুনেছে। বাস্তবায়ন দেখেনি। তাই তারা আর আশার বাণী আর বক্তৃতা কিংবা সরকারে গেলে হস্তক্ষেপ করা হবে না এসব শুনতে চায় না। তারা চায় কল্যাণময় কর্মের পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং তা স্বল্প সময়ের মধ্যেই।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন