সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

চা চাষ খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার এক নতুন দ্বার

পঞ্চগড়ে দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আবু তাহের আনসারী, পঞ্চগড় থেকে
সিলেটের চা কে হার মানিয়ে দার্জিলিং মানের চা উৎপাদিত হচ্ছে এখন পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে মাটি ও আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় পঞ্চগড়ে সবুজ মাঠে পরিণত হয়েছে চা বাগান। পঞ্চগড় জেলায় ১৯৯৯ইং সালে চা চাষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং সে মোতাবেক ২০০০ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ড তথা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের সার্বিক তত্ত¡াবধায়নে পঞ্চগড়ে সর্বপ্রথম কাজী এন্ড কাজী চা বাগান ৬২৭.০০ একর জমিতে অর্গানিক চা চাষ শুরু করে যা পরবর্তীতে মীনা নামে পরিচিতি লাভ করে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) পঞ্চগড় জেলায় ২০০১ ইং সালে একটি উপকেন্দ্র স্থাপন করে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে পঞ্চগড় জেলায় সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষ শুরু করেন তেঁতুলিয়ার মতিয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলাম, পেদিয়াগজের ইসাহাক আলী মন্ডল, দর্জিপাড়ার আ. রহমান এবং আবুল হোসেন। তারা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে সর্বপ্রথমে নিজস্ব জমিতে চা নার্সারী তৈরি করেন এবং সেখানকার উৎপাদিত চা চারা দিয়ে মাঠ পর্যায়ে চা চাষ শুরু করেন। এতে স্থানীয় অন্যান্য চাষীরা উৎসাহিত হয়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর কারিগরি সহায়তায় চা চাষ শুরু করেন যা ২০০২ সালে ১৮৪.২১ হে: জমির চা আবাদিতে পরিণত হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে পঞ্চগড়ে চা আবাদি দাড়ায় ২০০৩ সালে ৩৪২.১৯ হে: জমিতে এতে চা আবাদি জমির বৃদ্ধির পরিমান ২০০২ সালের তুলনায় বৃদ্ধি পায় ৩৪৭.৯৭ হেক্টর। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিবন্ধিত ক্ষুদ্র চাষী ১৭৮ জন, মাঝারি ১০ জন, টি এস্টেট এর সংখ্যা ছিল ০৬টি এবং তাদের চা আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৪,১৫৩.৬৫ একর ও রোপিত চা আবাদির পরিমাণ ছিল ১১৩৮.৪৮ একর।
পঞ্চগড় এ চা চাষের যে বিপ্লব ঘটেছে তা মূলত বাংলাদেশ চা বোর্ডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এ নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের নিরলশ কর্ম প্রচেষ্টায়। এতে করে এই উত্তরের জনপদটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কর্মকান্ডে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখে আসছে তেমনি এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিক ভাবে অন্যতম চালিকা শক্তিতেও রূপান্তরিত হয়েছে। পঞ্চগড়ের এই ক্ষুদ্র পর্যায়ের চা চাষকে আরও বিকশিত ও ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ চা বোর্ডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) সাম্প্রতি পঞ্চগড়ের চা চাষীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক পন্থায় চা চাষের কলাকৌশল হাতে কলমে শেখানোর জন্য বিভিন্ন প্রকারের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকেন। এতে করে চা চাষীরা যেমন উপকৃত হচ্ছেন তেমনি পঞ্চগড়ের চা চাষ আরও বেগমান হচ্ছে। ফলে এর উপকারিতা পঞ্চগড়ে চা চাষে জড়িত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ১২,০০০ লোক সহ হত দরিদ্র প্রায় ২,০০০ নারী ও পুরুষ সকলেই পাচ্ছে। সে কারণে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিটিআরআই) এর এই উপকেন্দ্রটি পঞ্চগড়ের লোকজনের নিকট চায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তখনও পঞ্চগড়ে চা চাষীরা তাদের চয়নকৃত সবুজ চা পাতা লিফ চা প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানা না থাকার দরূণ বিক্রয় করতে পারত না। সে সময়ে পঞ্চগড়ে চায়ের উৎপাদনের ব্যাপকতা দেখে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এর আর্থিক সহযোগিতায় এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড এর কারিগরি সহযোগিতায় তেঁতুলিয়া টি কোম্পানী (টিটিসিএল) নামক বট লিফ চা প্রক্রিয়াজাত করণ কারখানা ২০০৪ সালে তেঁতুলিয়ায় স্থাপিত হয়। এতে করে পঞ্চগড়ের চা চাষে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়। এরপর হতে চা চাষীরা তাদের চয়নকৃত সবুজ চা পাতা ২০০৫ সাল হতে তেঁতুলিয়া টি কোম্পানী (টিটিসিএল) এর নিকট বিক্রয় করতে শুরু করে। ২০০৮ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষে ব্যাপক সাড়া পরে, যার ফলে এই বৎসরে আরও চা চাষী তথা চা আবাদি বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক ভাবেই স্থানীয় চা চাষীদের পক্ষ থেকে পঞ্চগড়ে আরও একটি বট লিফ চা প্রত্রিয়াজাত করণ কারখানা স্থাপনের দাবি এসেছিল। যার প্রেক্ষিতে উক্ত বছরে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরামর্শক্রমে পঞ্চগড়ে করতোয়া বট লিফ চা কারখানা স্থাপিত হয়। এর ফলে পঞ্চগড়ে ক্ষুদ্র পর্যায়ে চা চাষে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। ২০১১ সালে এ বৎসরে পঞ্চগড়ের চায়ের উৎপাদনের উপর লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরামর্শক্রমে পঞ্চগড়ে আরও দুটি বট লিফ চা কারখানা গ্রীণ কেয়ার এগ্রো লিঃ ও গ্রীণ এনার্জি টি ফ্যাক্টরী স্থাপিত হয়। ২০১৩ সালে পঞ্চগড়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পরামর্শক্রমে নর্থ বেঙ্গল সেন্ট্রাল টি ফ্যাক্টরী নামক আরও একটি বট লিফ চা কারখানা স্থাপিত হয়। ২০১৬ সালে ৯টি চা বাগানের ৭৯৮.৪৩ হেক্টর জমিতে ৫০,১৬,৩৫২ কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়াও পঞ্চগড়ের ক্ষুদ্র টি এস্টেট, ক্ষুদ্রায়তন চা চাষী ও ক্ষুদ্র চা চাষীদের মোট ১০৪৬.৮৪ হেক্টর জমিতে ৯৫,৫৬,৫৮৫ কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। পঞ্চগড়ে সর্বমোট ১৮৪৫.২৭ হেক্টর জমিতে ১,৪৫,৭২,৯৩৭ কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৬ সালে ৭টি ফ্যাক্টরীতে মোট ৩২,০৬,০৪৬ কেজি তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৮ সাল নাগাদ পঞ্চগড়ে ১৩টি চা কারখানা চালু হওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। ২০১৭ সালে উৎপাদিত চায়ের বিপরীতে উৎপাদনের পরিমান দ্বিগুণ হওয়ার কথা জানিয়েছেন, পঞ্চগড় চা বোর্ডের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
জামাল আহমেদ ২১ অক্টোবর, ২০১৮, ১১:৩৮ পিএম says : 0
আমার অনেক ভালো লেগেছে কারণ আমাদের দেশে এমন শিল্প খুব দরকা আমাদের দেশকে আর উন্নতির দিকে নিতে হলে আমাদের অনেক কাজ করা দরকার তাই আমি খুশি হয়ে আমার মতামত জানালাম ভুল হলে ক্ষমা করবেন খোদা হাফেজ।
Total Reply(0)
Jibon hajong ৩১ অক্টোবর, ২০১৮, ১:৩৭ পিএম says : 0
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন