শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

চিনি শিল্পের উন্নয়নে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এবিসিদ্দিক : বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের লোকসান কমিয়ে লাভজনক ও গতিশীল করার জন্য সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আখের সংকটের কারণে এই সংস্থাটি চিনি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌছাতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরই মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। গেলো অর্থবছরেও ৪০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান দিতে হয়েছে। আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) লোকসান দিয়েছিল ৪৬৩ কোটি টাকা। বর্তমানে এই সংস্থাটিতে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মরত আছেন। ১৫ টি চিনি কলের বার্ষিক চিনি উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় আড়াই লাখ টন। আখের সংকট আর কয়েকটি চিনি কল দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া এই সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠান না থাকাও লোকসানের অন্যতম কারণ। বর্তমানে বড় সমস্যার কারণ হচ্ছে যে, চিনি কল এলাকায় অবাধে গুড় উৎপাদন করা। চিনি কল এলাকায় গুড় উৎপাদন বন্ধ রাখার আইন থাকা সত্¦েও তা কার্যকর হচ্ছে না। চিনি কল গুলোতে এক মন আখ কেনা হয় ৯৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে এবং মিল গেটে দাম দেওয়া হয় ১০০ টাকা মণ। গত বছর গুড় তৈরি ওয়ালারা প্রতি মণ আখ এক’শ ২০ টাকা থেকে এক’শ ৩০ টাকা পর্যন্ত দরে নগদ টাকায় চাষিদের কাছ থেকে আখ কিনে নিয়ে যায়। এই শিল্পের উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এই মুহুুর্তে এই শিল্পের উন্নয়নে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কোন-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ¦ালানী ব্যবহারের মাধ্যমে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চিনিকলের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি সুগার রিফাইনারীও স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে ‘র’ সুগার হতে হোয়াইট সুগার উৎপাদন করে দেশে চিনির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভুমিকা রাখা হবে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত চিনিকল ও ডিস্টিলারি কারখানা কেরু এন্ড কোম্পানী(বিডি) লিঃ। এর আধুনিকীকরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিএমআর প্রকল্প। এতে ৭৩ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিনিকলটির বর্তমান আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষতি হবে। এছাড়ও সাম্প্রতিক অন্যান্য যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা হলো সনাতন পুর্জি প্রথার পরিবর্তে একটি মোবাইল এসএম এস’র মাধ্যমে সকল আখচাষির কাছে মিলে আখ সরবরাহের আগাম বার্তা পৌছে দেয়া(ই-পুর্জি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর একযোগে সকল চিনি কলে ই-পুর্জি কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন। এরফরে লাখ লাখ চাষির দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল সেবা। নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ই-পুর্জির সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভারতের মস্থন এওয়ার্ড সাউথ এশিয়া ২০১০ পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এ ই-সেবা ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরষ্কার সহ বিভিন্ন পুরষ্কার লাভ করে। ই-পুর্জি ব্যবস্থাপনায় সফলতার পর সেবার পরিধি আরো বিস্তৃতি করতে চালু করা হয়েছে ই-গেজেট। এর মাধ্যমে চাষিরা ই্উনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে পুরো মৌসুমের কেন্দ্র ও ইউনিট ভিত্তিক আখ ক্রয়ের আগাম কর্মসূচি দেখতে পারেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আখমাড়াই মৌসুমে ফরিদপুর চিনিকলে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয় এবং চলতি ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মৌসুমে সকল চিনিকলে চালুর কর্মসূচি নেয়া হয়। ই-পুর্জি ও ই-গেজেট প্রচলনের পর চিনিকল গুলোতে এবার মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করার যুগান্তকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। করপোরেশন এখন ভোক্তা যাতে সহজে চিনি পান সে লক্ষ্যে ১ ও ২ কেজির প্যাকেটজাত চিনি বাজারজাত করা হচ্ছে। তাও আবার কম মূল্যে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ২৮ মে’ এই কর্মসূচির উদ্ধোধন করেন। চিনিকলের প্রেসমাড ও ইথানল প্লান্টের বজ্য হতে বায়োকম্পোস্ট উৎপাদনপূর্বক রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করতে কেরু এন্ড কোম্পানীতে স্থাপন করা হয়েছে জৈব সারকারখানা। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল এর উদ্ধোধন করেন। করপোরেশনের চেয়ারম্যান জানান, শিল্পায়নে অগ্রগতির মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ চলায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন দেশের সকল আখ চাষি এবং চিনি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সাধারণ মানুষের ভাগ্যেন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
লেখক : সাংবাদিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন