বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সুবীর ভৌমিক ও তার সহযোগীরা রাষ্ট্র ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলতে চায়-রুহুল কবির রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্র, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভুতি সুবীর ভৌমিক চক্ররা মেনে নিতে পারছে না। আজকে রোহিঙ্গা প্রশ্নে জনগণের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তা নজীরবিহীন। জনগণ তাদের শক্তি, সামর্থ ও সংগতি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ তৎপরতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যখন গুরুদায়িত্ব পালন করছে তখন সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে চৌকষ ইউনিট এসএসএফ কে টার্গেট করার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে কারোই কষ্ট হয় না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের রাজনীতি, বিরোধী দল ও দলের নেতানেত্রীসহ নানা বিষয়ে অলীক মনগড়, ভিত্তিহীন কাব্যকাহিনী রচনা করে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছেন সুবীর ভৌমিক। এই অপপ্রচার ও মিডিয়া সন্ত্রাস চালাতে ওই বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে দেশীয় কিছু সাংবাদিকও জড়িত। সুবীর ভৌমিক কখনো বাংলাদেশে এসে অথবা নিজ দেশ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইন্সটিটিউশন, বিরোধী নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে অবাস্তব ষড়যন্ত্রগাঁথা গল্প তৈরী করে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী তা প্রচার করছেন। দেশ-বিদেশের মানুষের মধ্যে একটা ভয়ানয় বিভ্রান্তি তৈরী করাই এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য। এটা বুঝতে কারও কষ্ট হয় না। এর জন্য কাউকে ব্যারিস্টারিও পাস করতে হয় না, বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রিও নিতে হয় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার খবরের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত মিজ্জিমা ইংলিশ সাপ্তাহিকে খুবই চাঞ্চল্যকর খবর প্রচার করেছেন। সেটি হলো যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জীবননাশের আরেকটি অপচেষ্টা। বিষয়টি অসত্য বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেও তিনি লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছেন বলে গালগল্প প্রচার করেছেন। এই সমস্ত গল্প রচনার মূল টার্গেটটি কী তা সহজেই বোঝা যায়। সুবীর ভৌমিক তার লেখায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ষড়যন্ত্রকারীরাই প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। গাঁজাখুরী মিথ্যা গল্প সাজিয়ে তারপর সেটিকে বিভিন্ন মিডিয়ায় রিসাইকেল করে এরা বাংলাদেশের রাষ্ট্র, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভেঙ্গে ফেলতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, সুবীর ভৌমিক এর আগেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্ন তুলেছেন। সুবীর ভৌমিক যেহেতু বিদেশী নাগরিক সেহেতু তিনি বাংলাদেশের আদালতের আওতায় পড়বেন না। যেহেতু আওতায় পড়বেন না সেজন্য অবাধে নিজ দেশ থেকে আঞ্চলিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঠাকুরমার ঝুলির বানানো গল্প রচনা করে সেটি অপপ্রচার করছেন। এই সমস্ত লেখালেখি যে সম্পূর্ণরুপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা জানতে কারো বাকী নেই। বিএনপি নেতা বলেন, যে সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক, সেই সেনাবাহিনীর মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করার জন্যই সুবীর ভৌমিকরা উঠেপড়ে লেগেছে। তবে সবচেয়ে দু:খের বিষয়-বিদেশী এই সাংবাদিকের মিথ্যাচারকে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের বাজারজাত করছেন আমাদের দেশের গণমাধ্যমের হাতেগোনা কয়েকজন সাংবাদিক। স্বর্গ (ক্ষমতা) থেকে যাতে বিদায় না নিতে হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর আরো বেশী নৈকট্য লাভ করতেই এদেশের কিছু সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সিন্ডিকেটে যোগ দিয়েছেন। সুবীর ভৌমিক ও তাদের এদেশীয় দোসরদের মূল টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিষোদগার অব্যাহত রেখে জনগণের মধ্যে একটা বিরুপ ভাবমূর্তি তৈরী করা। এজন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানামূখী ষড়যন্ত্রের কাহিনী রচনা করে সেটি প্রচার করা হচ্ছে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর বেশী বেশী সুনজরে থাকার জন্য। কিন্তু ওদের যুগদৃষ্টি নেই বলেই অপপ্রচারের কৌশল অবলম্বন করেছেন। রিজভী বলেন, জনগণ আজ বিস্মিত, কিভাবে সুবীর ভৌমিকের মতো রহস্যজনক, সন্দেহভাজন ব্যক্তি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে অবাধে যাতায়াত করেন এবং স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে টিম গঠন করে বিএনপি বিরোধী অভিযানে লিপ্ত থাকে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা সঙ্কটের সময়ে দেশের বাইরে আছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা যদি ষড়যন্ত্র হয়, তাহলে আমরা বলব আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসাও ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, আমরা যদি বলি, প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু আমরা এটা বলি নাই। তবে এই প্রশ্ন চলে আসতে পারে। কারণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ষড়যন্ত্র হলে প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসাও ষড়যন্ত্র। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসে বিএনপিকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছেন। এ কারণে তার আসতে দেরি হচ্ছে। আবার আমরা এটাও বলতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর গলবøাডারে কোন অস্ত্রোপচার হয়নি। কিন্তু আমরা বলছি না। জাতিসংঘের অধিবেশন এবং ভাষণও শেষ তাহলে প্রধানমন্ত্রী কেনো এখনও আছেন- বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি। রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় বিএনপি না থাকলেও সমস্যা নেই, ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণ শব্দের সাথে তাদের কোন পরিচয় নেই। আর জাতীয় ঐক্য কি সেটা ওবায়দুল কাদের ভুলে গিয়েছেন। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা জাতীয় ঐক্য চাইবেন না। কারণ তারা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চান না। রোহিঙ্গা নিয়ে রাজনীতি করে তারা আরো বেশ কিছুটা সময় ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় কী না সেই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কুটনৈতিক উপায়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কোন উদ্যোগ গ্রহণে সরকার তৎপর নয় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ফেরা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী- খান সোহেল, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু ও সহ- দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন