ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার এবং ছোটোগল্পকার কাজুও ইশিগুরো (কধুঁড় ওংযরমঁৎড়) ১১৪তম লেখক হিসেবে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবার বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১.০০ ঘটিকায় সাহিত্যে নোবেলজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে ইশিগুরোর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে তিনি ৮০ লাখ ক্রোনার পাবেন। কাজুও ইশিগুরোকে নোবেল বিজয়ী ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি জানায়, তার অসাধারণ আবেগময় উপন্যাসগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগে তিনি আমাদের অপার্থিব অনুভূতির গভীরতম প্রকাশ ঘটিয়েছেন। সুইডিশ একাডেমির প্রেস রিলিজে বলা হয়, কাজুও ইশিগুরো এমন একজন লেখক যার মহৎ আবেগীয় শক্তির উপন্যাসগুলোতে পৃথিবীর সঙ্গে আমাদের কাল্পনিক সংযোগের নিচের অতল গহŸর আবিষ্কার করেছেন। ইশিগুরো এখন পর্যন্ত ৮টি উপন্যাস লিখেছেন যা ইতোমধ্যে ৪০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তার বিখ্যাত উপন্যাস দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে এবং নেভার লেট মি গো অবলম্বনে জনপ্রিয় সিনেমা নির্মিত হয়েছে।
কাজুও ইশিগুরো ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ নভেম্বর জাপানের নাগাসাকিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সিজিও ইশিগুরো এবং মায়ের নাম সিজুকো। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইশিগুরোর পিতামাতা তাদের পুত্র কাজুও ইশিগুরো এবং দুই বোনসহ লন্ডনে অবস্থিত সুরির গিল্ডফোর্ডে গমন করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৫ বছর। কাজুও ইশিগুরোর পিতা সিজিও ইশিগুরো ছিলেন শারীরিক সমুদ্রবিদ তিনি সেখানে সুরির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব গিল্ডফোর্ডে গবেষকের কাজ শুরু করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন।
কাজুও ইশিগুরো সুরির স্টোউটন প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন এবং পরবর্তীকালে সুরির কাউন্টি গ্রামার স্কুলে কাজ শুরু করেন। স্কুল জীবন শেষ করার পর গ্যাপ ইয়ারে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা ভ্রমণ করেন। তখন থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কাজুও ইশিগুরো ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট অ্যাট ক্যান্টবুরিতে (টহরাবৎংরঃু ড়ভ কবহঃ ধঃ ঈধহঃবৎনঁৎু) ভর্তি হন এবং ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি ভাষা ও দর্শনে অনার্সসহ ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। এক বছর লেখালেখিতে নিয়োজিত থাকার পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ায় গধষপড়ষস ইৎধফনঁৎু এবং অহমবষধ ঈধৎঃবৎ সঙ্গে অধ্যায়ন শুরু করেন এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এর উপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সাহিত্যে ১১৪ জনকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ১৪ জন নারী। দুইজনকে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেছে ২ বার। সাহিত্যে নোবেল পাওয়া সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হলেন রুডইয়ার্ড কিপলিং। ৪১ বছর বয়সে ‘দ্য জাংগল বুক’ এর জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। আর সাহিত্যে নোবেলজয়ী সর্বোজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন ডোরিস লেসিং। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন লেসিংকে পুরস্কার বিজয়ী ঘোষণা করা হয় তখন তার বয়স ছিল ৮৮ বছর।
কাজুও ইশিগুরো নোবেলবিজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক। তিনি জাপানি বংশোদ্ভূত হলেও ইংরেজি ভাষাতেই সাহিত্যচর্চা করে থাকেন। সমসাময়িক ইংরেজি সাহিত্যে অন্যতম প্রধান ঔপন্যাসিক হিসেবে সমাদৃত কাজুও ইশিগুরো। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ‘দি টাইমস’-এর এক জরিপ মতে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের পর ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাবশালী ৫০ জনের মধ্যে তিনি ৪৫তম। ১৯৮৯ সালে ‘দি রিমেইনস অব দি ডে’ বইয়ের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন কাজুও ইশিগুরো। তার সপ্তম উপন্যাস ‘বারিড জায়ান্ট’ ২০১৫ সালের ৩ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়।
মূলত তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে সমধিক পরিতি। এ পর্যন্ত তিনি যেসব উপন্যাস লিখেছেন সেগুলো হচ্ছে : অ চধষব ঠরবি ড়ভ ঐরষষং (১৯৮২), অহ অৎঃরংঃ ড়ভ ঃযব ঋষড়ধঃরহম ডড়ৎষফ (১৯৮৬) , ঞযব জবসধরহং ড়ভ ঃযব উধু (১৯৮৯), ঞযব টহপড়হংড়ষবফ (১৯৯৫), ডযবহ ডব ডবৎব ঙৎঢ়যধহং (২০০০), ঘবাবৎ খবঃ গব এড় (২০০৫), ঞযব ইঁৎরবফ এরধহঃ (২০১৫)
চিত্রনাট্য লেখাতেও রয়েছে তার ব্যতিক্রমী দক্ষত। শর্ট ফিকশন লেখাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। ইশিগুরোর লেখা যে উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে : ঞযব জবসধরহং ড়ভ ঃযব উধু, ফরৎবপঃবফ নু ঔধসবং ওাড়ৎু রহ ১৯৯৩; ঞযব ডযরঃব ঈড়ঁহঃবংং, ফরৎবপঃবফ নু ঔধসবং ওাড়ৎু রহ ২০০৫ এবং ঘবাবৎ খবঃ গব এড়, ফরৎবপঃবফ নু গধৎশ জড়সধহবশ রহ ২০১০.
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ছাড়া তিনি অন্যান্য যেসব পুরস্কার অর্জন করেছেন তন্মধ্যে ডরহরভৎবফ ঐড়ষঃনু গবসড়ৎরধষ চৎরুব ভড়ৎ অ চধষব ঠরবি ড়ভ ঐরষষংস (১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দ), চঁনষরংযবফ রহ ঃযব এৎধহঃধ ইবংঃ ণড়ঁহম ইৎরঃরংয ঘড়াবষরংঃং রংংঁব (১৯৮৩খ্রিষ্টাব্দ), ডযরঃনৎবধফ চৎরুব ভড়ৎ অহ অৎঃরংঃ ড়ভ ঃযব ঋষড়ধঃরহম ডড়ৎষফ (১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ), ইড়ড়শবৎ চৎরুব ভড়ৎ ঞযব জবসধরহং ড়ভ ঃযব উধু (১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দ), চঁনষরংযবফ রহ ঃযব এৎধহঃধ ইবংঃ ণড়ঁহম ইৎরঃরংয ঘড়াবষরংঃং রংংঁব (১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ), ঙইঊ (১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ), ঈযবাধষরবৎ ফব ষ’ঙৎফৎব ফবং অৎঃং বঃ ফবং খবঃঃৎবং (১৯৯৮খ্রিষ্টাব্দ), ঞরসব সধমধুরহব হধসবং ঘবাবৎ খবঃ গব এড় ড়হ রঃং ষরংঃ ড়ভ ঃযব ১০০ মৎবধঃবংঃ ঊহমষরংয ষধহমঁধমব হড়াবষং ংরহপব ঃযব সধমধুরহব ভড়ৎসবফ রহ ১৯২৩. (২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ), ঞযব ঞরসবং হধসবফ ওংযরমঁৎড় ধসড়হম এবং “ঞযব ৫০ মৎবধঃবংঃ ইৎরঃরংয ৎিরঃবৎং ংরহপব ১৯৪৫”. (২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ) প্রভৃতি অন্যতম। এছাড়াও তিনি আরও অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
সাহিত্যে নোবেল জয়ের পর কাজুও ইশিগুরো তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান, “আমি অবাক হয়েছি, হতবিহŸল হয়ে পড়েছি। এটা অবশ্যই দারণ সম্মানের বিষয়, এমন পুরস্কার জয় করা মানে বড়ো বড়ো লখকদের পাশে আমাকে দাঁড় করানো। যারা বিশ্বজুড়ে দামী লেখক, তাদের কাতারে আমাকে রাখা হচ্ছে Ñ এটা অবশ্যই অনেক প্রশংসনীয়।” পুরস্কার ঘোষণার সময় একাডেমির সারা ড্যানিয়াস ইশিগুরোর লেখার স্টাইল সম্পর্কে বলেন, তার লেখা জেন অস্টিন এবং ফ্রান্ৎজ কাফকার মিশ্রণ, তবে এর সাথে আপনাকে কিছুটা মার্সেল প্রুস্তুকেও মেশাতে হবে এবং তারপর আপনি নাড়াবেন, কিন্তু খুব বেশি নয় এবং তারপর আপনি তার লেখাগুলো পাবেন।”
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন