রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

হরিরামপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙন, সর্বহারা শতাধিক পরিবার

ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) মো. সোহেল রানা খান : মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা নদীতে বেপরোয়া ও অবৈধ ড্রেজারের বালু উত্তোলনের ফলে হরিরামপুরের কয়েকটি গ্রামে শুরু হয়েছে ভাঙনের তাÐব।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসময়ের এই ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিন ইউনিয়নের কয়েক শ’ পরিবারের মানুষ।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই বর্ষার আগে ও পরে হরিরামপুরের পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে এবার অসময়ে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ছোট বাহাদুরপুর ও বড় বাহাদুরপুর, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশেরচর, কোটকান্দি এবং রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এসব গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতভিটাসহ ফসলি জমি চলে গেছে নদীগর্ভে।
ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট বাহাদুরপুর ও বড় বাহাদুরপুর গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর তীরবর্তী এসব এলাকার মানুষকে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার ঘরের ভেতরে থাকা বিভিন্ন মালমাল নিয়ে পাশের আশ্রয়স্থলে ছুটছেন। সব কিছু হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন খোলা আকাশের নিচে। পুরনো টিন দিয়ে চাল বেঁধে কোনোরকম রাত পার করছেন অনেকেই। পদ্মার এমন অকাল গ্রাসে সর্বত্র হারিয়ে নদীর তীরে বসে থাকতে দেখা গেছে মানুষদের।
জানা যায়, গোপিনাথপুর উজানপাড়া, বাহাদুরপুর, ছোট বাহাদুরসহ আশপাশে এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ কয়েকটি ড্রেজার (বলগেট) দিয়ে অবৈধভারে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। ভাঙনকবলিত এলাকার কাছেই ডেজার দিয়ে বালু তোলা ও পদ্মানদীর পানির স্রোত এসে পাড়ে লাগাতে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।
স্থানীয় আবেদ হাসান জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীতে শক্তিশালী খননযন্ত্র (ভেকু) দিয়ে অবৈধভারে বালু উত্তোলন করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা কার্গোতে করে অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে খনন স্থানসহ আশপাশের বালুমাটি না থাকায় নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। আর বসতভিটা হারানো এসব পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে।
ছোট বাহাদুরপুর গ্রামের বিধবা নাজমা বেগম জানান, স্বামী হারানোর পর তিন শিশুসন্তান নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলছে সংসার। মাথা গুঁজার মতো যে জায়গা ছিল, তাও পাঁচদিন আগে পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন শিশুসন্তানদের নিয়ে কোথায় যাবেন তা জানেন না এই স্বামীহারা নাজমা বেগম।
একই গ্রামের বৃদ্ধ মারফত মোল্লার শেষ সম্বল বসতভিটাও চলে গেছে পদ্মার গর্ভে। গ্রামের অন্য এক ব্যক্তির জমিতে ঘরের টিনের চাল ও অন্যান্য আসবাবপত্র রেখেছেন তিনি। সেখানেই স্ত্রী ও দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে কোনো মতে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তা ছাড়া নদীতে বসতভিটা হারিয়ে আরো অনেকেই পরিবার নিয়ে অন্যের জমিতে কোনোমতে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের লোকজন অর্ধাহারে হতাশার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, প্রতি বছরই বন্যায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন হয়ে থাকে। তবে এবার গেলো বন্যায় ভাঙন হওয়ার পরেও অসমেয় নদীভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বাস্তুহারা সাধারণ মানুষ। নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করার কারণেই এই ভাঙন শুরু হয়েছে। অসময়ে হঠাৎ পদ্মার এমন ভয়াবহতা কখনো দেখিনি। ভাঙন কবলিতদের এখন পর্যন্ত কোনো আর্থিক সহয়তাও দেয়া হয়নি। তবে শিগগিরই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হবে।
হরিরামপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ জানান, গত কয়েক দিন ধরেই পদ্মার নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে ব্যাপকভাবে বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। উপজেলা পরিষদ থেকে ভুক্তোভোগীদের সহযোগিতার জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রাশিদা আক্তার জানায়, নদীতে খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ছয়জনকে এক মাস করে কারাদÐ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই খননযন্ত্রটি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় ভাঙন রোধে ২০১৪ সালে হরিরামপুরে নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্পে অনুমোদন হয়। পরের অর্থ বছরে (২০১৫-১৬) এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)র অর্থায়নে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি গুচ্ছে (প্যাকেজ) রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর থেকে ধূলশুড়া ইউনিয়নের আবিধারা পর্যন্ত ৮.৮ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন