শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আল্লাহ’র উদ্দেশ্যেই ভালোবাসা ও ঘৃণা করা

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

একজন মানুষ নিজেকে মুসলমান দাবী করলে প্রথমে তার মধ্যে যে বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে তা হলো ঈমান। আর এ ঈমানের রয়েছে অনেক শাখাপ্রশাখা। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য একটি হলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর রহমাতরুপী ফরমান, ‘আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে ঘৃণা করা।’ বলতে হয়, মুমিন হতে হলে ঈমানের কারণেই আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসতে হবে আর কাউকে ঘৃণা করতে হলে তাও ঈমানের কারণেই আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হতে হবে। তবেই আশা করা যায় ব্যক্তির মধ্যে ঈমানের পরিপূর্ণতা অর্জিত হবে। এটি ঈমানের একটি সুদৃঢ় শাখা। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা বা পার্থিব কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসা বা তার সাথে শত্রæতা পোষণ করা আল্লাহ’র অসন্তুষ্টির কারণ, সন্তুষ্টির নয়।
আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসার অর্থ হলো, কোনো দীনদার বা আল্লাহ ওয়ালাকে তার দীনদারীর কারণে ভালোবাসা। অনুরুপ আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করার অর্থ হলো, আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর অনুগত্য বর্জন এবং তার মাঝে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর প্রেম না থাকার কারণে ঘৃণা করা। এটাই ঈমানের দাবি। যারা একমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পরস্পরে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হবে, এতে তাদের পার্থিব কোনো স্বার্থ জড়িত থাকবে না; এরুপ ব্যক্তিদেরকে মহান আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের কঠিন সময়ে তার রহমাতের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। সেদিন আল্লাহ’র রহমাতের ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না এবং অবশেষে তাদেরকে জান্নাত প্রদানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করবেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা রাদি-আল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা’আলা এমন দু’বন্ধুকে ডাকবেন, যারা পার্থিব কোনো স্বার্থ বা উদ্দেশ্যে ছাড়াই একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে পরস্পর পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা স্থাপন করেছিলো। তাদের উদ্দেশ্যে ছিলো মহান আল্লাহ তা’আলার উজ্জত ও মহত্বের বিকাশ করা। তিনি ডেকে বলবেন, সে সব লোক কোথায়, যারা নি:স্বার্থে পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করেছিলো। আজ আমি আমার আরশের ছায়ার নিচে তাদেরকে ছায়া প্রদান করবো। আজ আমার আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোনো ছায়া কোথাও নেই। (মুসলিম)
হাদিসে কুদসীতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার গৌরব ও মহত্বের খাতিরে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে তাদের জন্য পরকালে বিরাট নুরের মিম্বার হবে, যা অবলোকন করে নবী ও শহীদগণ লোভাতুর হবেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে অতি উত্তম কাজ হচ্ছে, কাউকে ভালোবাসলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা আর কাউকে শত্রæ ভাবলে আল্লাহ’র উদ্দেশ্যেই শত্রæ ভাবা। কবি মাওলানা আবু জাফর ছালেহী লিখেছেন,
ওপারেতে যাবার লাগি তৈয়ার করছো কি,
আর কিছু নয় রাসুল তোমায় ভালোবেসেছি।
যে যাহাকে বাসলো ভালো, তার সাথে তার হাশর হলো।
আমায় যদি বাসবি ভালো, জান্নাতে যাবি।
যতই বিপদ আসুক তবে, তার আচল ধরে থাকতে হবে।
সেই আচলে পার হবে ভাই, বিপদের ঘাটি।
দূর্বল উম্মত মোরা, জীবন মোদের পাপে ঘেরা।
হাতে ধরে বানাও মোদের উম্মতও খাটি।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বলেছেন, তুমি যাকে ভালো বাসবে, পরকালে তার সাথেই তুমি থাকবে। আলোচ্য হাদিসাংশ দ্বারা প্রতীয়মান, দুনিয়াতে মানুষ যার সাথে থাকবে তথা যাকে অনুসরণ করবে, কিয়ামত দিবসে তার সাথেই তার হাশর হবে। কেউ সৎলোককে ভালোবাসলে তার সাথেই তার হাশর হবে বিনিময়ে পাবে মহান আল্লাহ তা’আলার রহমাতের ছায়ায় আশ্রয় ও জান্নাত। আর অসৎ লোককে ভালোবাসলে তার সাথেই তার হাশর হবে বিনিময়ে পাবে জাহান্নাম। এ প্রসঙ্গে আল্লামা খাত্তাবী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন, হাদিসের পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, অধিক আমল না থাকলেও নিষ্ঠার সাথে (অর্থাৎ আল্লাহ’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে) নেককার লোকদেরকে ভালোবাসলেও তাদের সাথে (হাশর মাঠে) একত্রিত হওয়া যাবে। জর্নৈক কবি বলেছেন, ‘বোঝা যায় যে, নবীগণ, সালেহীন, ওলামা এবং উন্নত নৈতিকতা সম্পন্ন লোকদেরকে ভালোবাসতে হবে। তাহলে পরকালে তাদের দলভুক্ত হওয়া সম্ভবপর হবে। পক্ষান্তরে আল্লাহদ্রোহী ও ইসলাম বিরোধী লোকদেরকে ভালোবাসলে তাদের সাথেই হাশর হবে। এ কারণে মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা ফাতিহার মধ্যে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, “আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছো, তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। (সুরা আল-ফাতিহা : ৬,৭)
কবি মাওলানা এমামুদ্দীন মোঃ ত্বহা তার ‘আদর্শ ছাত্র শিক্ষকের স্বরুপ ও মেধা শক্তি বৃদ্ধির উপায়’ গ্রন্থে লিখেছেন, “সোহবাতে সালেহ তোরা সালেহ কুনাদ, সোহবাতে ত্বালেহ তোরা ত্বালেহ কুনাদ”। অর্থাৎ ভালো মানুষের ছোহবাতে ভালো মানুষই হইবে তুমি, মন্দ মানুষের নিকটে গেলে মন্দে হইবে না কমি। (আল্লামা রুমী র.)
“এক যামানা ছোহবাতে বা আউলিয়া, বোহতর আয ছদ ছালাহ ত্বআতে বে বিয়া।” অর্থাৎ এক মূহুর্ত আল্লাহ’র অলির (হক্কানী পীর) সান্নিধ্যে থাকা, একশত বছর রিয়াহীন ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
সর্বোপরি বলতে হয়, মুসলমান পরস্পরকে ভালোবাসা শরীয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব। কারণ, পারস্পরিক ভালোবাসাই হচ্ছে ভ্রাতৃত্বের দাবি। পারস্পরিক বন্ধুত্ব স্থাপন ও ঘৃণা করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনকে প্রধান্য দিতে হবে। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কাউকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা জায়েয নেই। সুতরাং ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ নয়; বরং আল্লাহ’র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই একজন অপর জনকে ভালোবাসতে (বন্ধুত্ব করতে) হবে এবং ঘৃণা করতে হবে। তাহলেই ঈমানের পরিপূর্ণতা লাভ হবে এবং হাদিস অনুযায়ী কিয়ামতের কঠিন দিবসে মহান আল্লাহ তা’আলার রহমাতের ছায়াতলে আশ্রয় ও জান্নাত লাভ করা যাবে।
মহান আল্লাহ তা’আলা জাল্লা শানুহু আমাদেরকে এ আলোচনার মর্ম বুঝার ও বাস্তব জীবনে আমলের মাধ্যমে জীবন গড়ার তৈফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Bashir ullah ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৭:১০ পিএম says : 0
ধন্যবাদ সম্পাদক মহদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন