শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই নশ্বর

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ জাল্লা শানুহু ভুপৃষ্ঠে বসবাসরত জ্বিন ও মানুষকে সতর্ক করে আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : ভুমন্ডলে যা কিছু আছে, সব কিছুই নশ্বর, আর অবিনশ্বর শুধু আপনার প্রতি পালকের চেহারা, যিনি মহিমাময় মহানুভব। (সূরা আর রাহমান : আয়াত : ২৬-২৭)। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন : আসমানসমূহ ও যমিনে যারা আছে, সবাই তাঁর কাছে আবেদন জানায়, তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিরত আছেন। (সূরা আর রাহমান : ২৯)।

উল্লিখিত তিনটি আয়াতে মহান রব্বুল আলামীন সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, ভ‚পৃষ্ঠে যত জ্বিন ও মানুষ আছে তারা সবাই ধ্বংসশীল। তাই আলোচ্য আয়াতত্রয়ে বিশেষভাবে তাদের প্রসঙ্গই উল্লেখ করা হয়েছে। এতে একথা বলা হয়নি যে, আকাশ ও আকাশস্থিত সৃষ্ট বস্তুসমূহ ধ্বংসশীল নয়। কেননা, অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা ব্যাপক অর্থ-বোধক ভাষায় সমগ্র সৃষ্টি জগতের ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয়টিও ব্যক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর চেহারা, সত্তা ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংশীল। (সূরা আল কাসাস : ৮৮)।

আলোচ্য আয়াতে ‘ওয়াজ্হুন’ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এর অর্থ হলো চেহারা, মুখমন্ডল। এই ‘ওয়াজহুন্’ শব্দ দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার চেহারার সাথে সাথে তাঁর যাত বা সত্তাকেও বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা যেমন অবিনশ্বর, তেমনি তাঁর চেহারাও অবিনশ্বর। তিনি ব্যতীত আর যা কিছু রয়েছে সবই ধ্বংসশীল। সৃষ্টিক‚লের মধ্যে চিরস্থায়ী হওয়ার যোগ্যতাই নেই। কেননা, কিয়ামতের দিন এগুলো সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।

কোনো কোনো তাফসীরবিদ ‘ওয়াজহুন’ শব্দের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র সেই বস্তুই চিরস্থায়ী, যা আল্লাহ তায়ালার দিকে সম্পৃক্ত করা আছে। এতে শামিল আছে আল্লাহপাকের সত্তা এবং মানুষের সেই সব কর্ম ও অবস্থা, যা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। (তাফসীর কুরতুবী)। এই ব্যাখ্যার সারমর্ম এই যে, মানুষ, জ্বিন ও ফিরিশতা যে কাজ বা এবাদত আল্লাহর উদ্দেশ্যে করে, সেই কাজ ও এবাদতও চিরস্থায়ী, অবিনশ্বর এবং অক্ষয়। তা’ কোনো সময়ই ধ্বংস হবে না।

পবিত্র আল কুরআনের অন্য আয়াত থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। সেখানে ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের কাছে যা কিছু আছে (অর্থাৎ অর্থ-সম্পদ, শক্তি-সামর্থ্য, দুঃখ-কষ্ট, ভালোবাসা ও শত্রুতা) সবই নিঃশেষ হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে আল্লাহর কাছে যা কিছু আছে, তা অবশিষ্ট থাকবে। সুতরাং আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত মানুষের যে সব কর্ম ও অবস্থা আছে, সেগুলোও ধ্বংস হবে না। (সূরা নাহল : ৯৬)।

চিরভাস্বর ও অবিনশ্বর স্রষ্টা মহিমান্বিত এবং মহানুভব। মহানুভব হওয়ার এক অর্থ এই যে, প্রকৃতই সম্মান ও মর্যাদা বলতে যা কিছু আছে, এসবেরই যোগ্য একমাত্র আল্লাহ। আর এক অর্থ এই যে, তিনি মহিমাময় হওয়া সত্তও দুনিয়ার রাজা বাদশাহ ও মান-সম্মানের অধিকারী ব্যক্তিবর্গের মতো নন। তাঁর সম্মান ও মর্যাদা অতুলনীয়, চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর। এজন্যই সমগ্র সৃষ্টি জগত তাঁরই কাছে মিনতী জানায়, প্রার্থনা করে (তাফসীরে ইবনে কাসীর)।

আর উল্লিখিত আয়াতে বর্ণিত ‘জুল্ জ্বালালি ওয়াল ইকরাম’ বাক্যটি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ গুণাবলির অন্যতম। এই শব্দগুলো উচ্চারণ করে দোয়া করার জন্য হাদীস শরীফে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা- ‘ইয়াযাল্ জ্বালালি ওয়াল ইকরাম, উচ্চারণ করে দোয়া করো। (জামে তিরমিজী : ৩৫২৫)।

মোটকথা, আসমান ও যমীনের সমুদয় সৃষ্টবস্তু আল্লাহ তায়ালার মুখাপেক্ষী এবং তাঁর নিকটই যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করে। পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের রিযিক, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি, আখেরাতে ক্ষমা, মুক্তি, রহমত ও জান্নাত লাভের প্রার্থনা করে এবং নভোমন্ডলের অধিবাসীরা যদিও পানাহার করে না, কিন্তু সেগুলোও আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ, ক্ষমা ও কৃপার মুখাপেক্ষী। আল্লাহ পাকের কাছে তাদের এই প্রার্থনা প্রতিনিয়তই অব্যাহত থাকে। (তাফসীরে ইবনে কাসির, তাফসীরে কুরতুবী)।

‘আল্লাহপাক প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিরত’ এটি একটি উদাহরণ মাত্র। মূলতঃ তিনি প্রতি মুহূর্তে কাউকে আরোগ্য দান করছেন, আবার কাউকে রোগাক্রান্ত করছেন। কোনো ব্যথিত-ক্রন্দনকারীর মুখে হাসি ফুটাচ্ছেন, কোনো প্রার্থনকারীকে প্রার্থিত বস্তু দান করছেন। সীমা-সংখ্যাহীন সৃষ্টিরাজিকে নানাভাবে রিযিক দান করছেন। অসংখ্য বস্তুকে নতুন নতুন ধরন, আকার-আকৃতি ও গুণ-বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করছেন।

তাঁর সৃষ্টি পৃথিবী কখনো এক অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে না। এর পরিবেশ ও অবস্থা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হতে থাকে এবং মহান স্রষ্টা তাকে প্রতিবারই একটি নতুন রূপে সুসজ্জিত করেন, যা পূর্বের সব আকার-আকৃতি ও রং-রূপ থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। মোটকথা, প্রতি মুহূর্তে, প্রতিপাল অবিনশ্বর আল্লাহপাকের একটি বিশেষ শান ও মর্যাদা থাকে। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে তাবারী)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন