শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পাথর কোয়ারিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হোক

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম


দেশে-বিদেশে তৈরীকৃত সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ, বড় বড় বিল্ডিং তৈরীতে মজবুত টেকশইয়ের দীর্ঘস্থায়ী নিশ্চয়তায় সবচেয়ে বড় যে অবদান রাখে তা হচ্ছে দেশের পাথর কোয়ারী হতে আহরিত পাথর কিংবা আমদানিকৃত পাথর। পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উওোলনের সময় ঘটে নানা ট্রাজেডি । হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে কাজ করে। কোটি কোটি টাকার পুঁজি সেখানে লগ্নীকৃত। এই পাথর কোয়ারী হতে বাংলাদেশ সরকার কোটি টাকার রাজস্বও আয় করে থাকে। এই পাথরকোয়ারিতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও বেশ পুরনো। মূল্যবান সম্পদ পাথরকোয়ারিগুলো আজ নানান কারনে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে এর অন্যতম কারণ পরিবেশ বিধ্বংসী ও অবৈধ ব্যবহারের মাধ্যমে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন এবং ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে পাথর উত্তোলনের হরেকরকম নির্মম প্রতিযোগিতা। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের সময় টিলা ধসে কিংবা মাটি চাপায় প্রায়ই ঘটছে প্রাণহানি। যাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। পাথর কোয়ারি এলাকাগুলো যেন শ্রমিকদের জন্য মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না পাথর চাপা পড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা। শ্রমিকদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়ে যারা রাতারাতি ধনকুবের বনে যাচ্ছে, তারা সব সময়ই রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রভাব আর অর্থের কাছে সবাই হার মানছে। ফলে কোনোভাবেই অবৈধ পাথর উত্তোলন ও প্রাণহানি রোধ করতে পারছে না প্রশাসন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়াও পাহাড় টিলা কাটায় উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই গোপনে পাথর উত্তোলন করছে একশ্রেণির অসাধু অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। পাথর উত্তোলনের সব নিয়ম ভঙ্গ করে অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা। দুর্ঘটনার পর মামলা হয়, তদন্ত কমিটিও হয়। কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাথর খেকোদের এই অবৈধ কাজ টিকিয়ে রাখতে তাদের রক্ষাকবজ হয়ে কাজ করে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় গুটিকয়েক নেতা। দলীয় প্রভাবের কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। পাথর তোলার এই অবৈধ ব্যবসা চালু রাখতে পরিবেশ অধিদপ্তর, আর পুলিশকে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পাথরকোয়ারিগুলো থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা খাস কালেকশন করলেও সরকারি কোষাগারে এর অর্ধেকও জমা দেওয়া হয় না। অধিকাংশ টাকা উপজেলা ও পুলিশ লুটে পুটে নেয়। কোয়ারিগুলোতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন চলছে বোমা মেশিনের সাহায্যে। একদিকে মানুষ মরছে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের শেষপ্রান্তে চলে এসেছে। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও। বিষয়টির সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
মুনযির আকলাম
কোরপাই, বুড়িচং, কুমিল্লা

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন