শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খোশ আমদেদ মাহে রমজান সংখ্যা

ইসলামকে ব্যবহারিক জীবনে আনা প্রয়োজন

শে খ দ র বা র আ ল ম | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

“এক”
জীবনধারা মানুষের শ্রেণী চেতনা তৈরি করে। এটা কেবল মার্কসবাদীদের, সাম্যবাদীদের এবং প্রগতিশীল বলে অভিহিত মানুষের কথা নয়, এটা প্রতিটি মানুষের ব্যবহারিক জীবন সম্পর্কে স্মরণ রাখার মতো, খেয়াল রাখার মতো কথা।
কুরআন এবং হাদীস শরীফে যে ইসলাম আমরা পাই, সে ইসলাম এক। সে ইসলামের মধ্যে কোনো ভিন্নতা নেই। কিন্তু আমাদের অনেকের ব্যবহারিক জীবন লক্ষ করলে উপলব্ধি করা যাবে যে, একই ইসলামকে আমরা একেকজন একেকভাবে গ্রহণ করছি। আল্লাহ তাঁর প্রত্যাদেশে যা আমাদের ওপর ফরজ বা অবশ্যপালনীয় করে দিয়েছেন, সে সব আমরা অনেকেই পালন করলেও আমরা কেউ কেউ তা পালন করছি একেকজন একেকভাবে।
কেউ কেউ আমরা মনে করছি যে, আমরা যখন ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছি (অর্থাৎ সালাত আদায় করছি) কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে পায়ের গোঁড়ালির সঙ্গে গোঁড়ালি মিলিয়ে, তখন এ থেকেও তো উপলব্ধি করতে হবে যে, ধনগত বৈষম্য, বর্ণ বা গায়ের রংগত বৈষম্য, ভাষাগত বৈষম্য, অঞ্চলগত বৈষম্য বা এরকম কোনো বৈষম্য ইসলামে কাম্য নয়। ইসলামে অর্থনৈতিক সাম্য, সামজিক সাম্য আছে। সাম্য ও সহাবস্থানের কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামের এই সাম্যের দিকটাকে কীভাবে দেখেছিলেন, সে বিষয়ে একটা উদ্বৃতি পেশ করব।
আলজেইমার ডিজিজে কবি অসুস্থ হয়ে পড়ার বছর দেড়ের আগের কথা। কবি তখন ১৫/৪ শ্যামবাজার স্ট্রিটে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। সে সময় ৯ জানুয়ারি ১৯৪১ (২৫ পৌষ ১৩৪৭ : ১০ জিলহজ ১৩৫৯ হিজরি) তারিখ বৃহস্পতিবার ছিল ঈদুজ্জোহা। এই ঈদুজ্জোহা উপলক্ষে কলকাতা বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির ঈদ সম্মেলনে প্রদত্ত অভিভাষণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেনÑ
সকল ঐশ্বর্য, সকল বিভ‚তি আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দিতে হবে। ধনীর দৌলতে, জ্ঞানীর জ্ঞানভাÐারে সকল মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। এ নীতি স্বীকার করেই ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে। আজ জগতের রাজনীতির বিপ্লবী আন্দোলনগুলোর যদি ইতিহাস আলোচনা করে দেখা যায়, তবে বেশ বুঝা যায় যে, সাম্যবাদ সমাজতন্ত্রবাদের উৎসমূল ইসলামেই নিহিত রয়েছে। আমার ক্ষুধার অন্নে তোমার অধিকার না থাকতে পারে; কিন্তু আমার উদ্বৃৃত অর্থে তোমার নিশ্চয়ই দাবি আছেÑ এ শিক্ষাই ইসলামের। জগতের আর কোনো ধর্ম এত বড় শিক্ষা মানুষের জন্য নিয়ে আসেনি।”
“দুই”.
এবার আসছি মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতির অপরিহার্য প্রয়োজন প্রসঙ্গে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তখন থাকতেন কলকাতার ৩৭/১ সীতানাথ রোডের বাসায়। এই বাসায় থাকতেই কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে সভাপতিত্ব করার দাওয়াত রক্ষা করতে গিয়েছিলেন ঈদুজ্জোহার দু’দিন আগে। ঈদুজ্জোহা ছিল ২২ ফেব্রæয়ারি ১৯৩৭ (১০ ফাল্গুন ১৩৪৩ : ১০ জিলহজ ১৩৫৫ হিজরি) তারিখ সোমবার। এর দু’দিন আগে ২০ ফেব্রæয়ারি ১৯৩৭ (৮ ফাল্গুন ১৩৪৩ : ৮ জিলহজ ১৩৫৫ হিজরি) তারিখ শনিবার ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণে মুসলিম জাতীর ঐক্য ও সংহতির অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তার কথা কবি কাজী নজরুল ইসলাম এভাবে বলেছিলেনÑ
“সম্মান দেওয়ার নামে এতদিন আমরা আমাদের মাতা-ভগিনী-কন্যা-জায়াদের যে অপমান করেছি, আজও তার প্রায়শ্চিত্ত যদি না করি; তবে কোনো জন্মেও এ জাতির আর মুক্তি হবে না।”
“তারও আগে তোমাদের কর্তব্য সম্মিলিত হওয়া সংঘবদ্ধ হওয়া। যে ইখাওয়াৎ সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ব, যে একতা ছিল মুসলিমের আদর্শ, যার জোরে মুসলিম জাতি এক শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবী জয় করেছিল, আজ আমাদের সে একতা নেইÑ হিংসায়, ঈর্ষা, কলহে, ঐক্যহীন, বিচ্ছিন্ন। দেয়ালের পর দেয়াল তুলে আমরা ভেদ-বিভেদের জিন্দানখানা সৃষ্টি করেছি। কত তার নামÑ সিয়া, সুন্নি, শেখ, সৈয়দ, মোগল, পাঠান, হানাফি, শাফি, হাম্বলি, মালিকি, লা মাজহাবি, ওহাবি ও আরো কত শত দল। এই শত দলকে একটি বোঁটায়, ওপর মৃণালের বন্ধনে বাঁধতে পারো তোমরাই। শতধা-বিচ্ছিন্ন এই শতদলকে এক সামিল করো, এক জামাত করোÑ সকল ভেদ-বিভেদের প্রাচীর নিষ্ঠুর আঘাতে ভেঙে ফেল।”
“তিন”
যে কোনো জাতির মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির জন্য ইতিহাসচর্চার অপরিহার্য প্রয়োজন হয়। মুসলিম জাতির মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির জন্য কবি কাজী নজরুল ইসলাম মুসলমান সমাজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামি সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তা চর্চার অপরিহার্য প্রয়োজন অনুভব করতেন। এখন থেকে একাশি বছরেরও বেশি আগে ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে প্রদত্ত অভিভাষণে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেনÑ
“তোমরা আমার সেই প্রিয়তম ছাত্রদল, যাদের দেখলে মনে হয়, আমি যেন কোটি বার কা’বা শরীফ জিয়ারত করলাম; যাদের চোখে দেখেছি তৌহিদের রৌশনী, যাদের মুখে দেখেছি খালেদ-তারেক-মুসার ছবি যাদের মক্তব মাদরাসা স্কুল-কলেজকে মনে হয়েছে দর্গার চেয়েও পবিত্র। যাদের বাজুতে দেখেছি আলী হায়দারের বেদেরেগ, তেফের শান ও শওকত, কণ্ঠে শুনেছি বেলালের আজান ধ্বনি। তোমরা আমার সেই ধ্যানের মহামানবগোষ্ঠী। এ আমার এতটুকু অত্যুক্তিÑ কল্পনা নয়। তোমাদের আমি দেখেছি তোমাদের অতিক্রম করে সহস্রাধিক বছর দূরেÑ ওহুদের যুদ্ধে, বদরের ময়দানে, খয়বরের জঙ্গে। দেখেছি ওমর ফারুকের বিশ্ববিজয়ী বাহিনীর অগ্রসেনিকরূপে’ দেখেছি দূর আফ্রিকায় মুসা-তারিকের দক্ষিণে, দেখেছি মিসরের পিরামিডের পার্শ্বে, পিরামিড ছাড়িয়ে গেছে তোমাদের উন্নত শির। দেখেছি ইরানের বিরানÑমুলুক আবাদ করতে, তার আলবোর্জের চূড়া গুঁড়া করে দিতে। দেখেছি জাবলুল তারেকেরÑ জিব্রালটারের আকুল জলরাশির মধ্যে নাঙ্গা শম্শের হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে। দেখেছি সেই জলরাশি সাঁতরে পার হয়ে স্পেনের কর্ডোভায় বিজয়চিহ্ন অঙ্কিত করতে। দেখেছি ক্রুসেডের রণে, জেহাদের জঙ্গে সুলতান সালাহ্উদ্দিনের সেনাদলের মাঝে, দেখেছি কুরূপা ইউরোপকে সুরূপা করতে। সেদিনও অল্প দু-একটি দেশ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্রই আজ কম-বেশি সংখ্যায় ইসলাম অনুসারীদের বসবাস রয়েছে। বলা দরকার, আধুনিক পৃথিবী ক্রমেই সংযোগ ও সম্পর্কের পথ হেঁটে বিশ্বগ্রামের রূপ নিচ্ছে। এ বিশ্বগ্রামের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে ইসলাম, মুসলমান, কোরআন ও ইসলামী সংস্কৃতি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ফয়সাল করিম ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৩০ এএম says : 0
কুরআন হাদিসের আলোকে রেফারেন্স চাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন