গত বছর পৃথিবীতে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এ রিপোর্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। হিসাবে দেখা যায়, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ নিজেকে হত্যা করেছে। এরা কেউই কথিত তৃতীয় বিশ্বের হতদরিদ্র দূর্ভাগা মানুষ নয়। নয় হতাশায় নিমজ্জিত জীবন যুদ্ধে পরাজিত লোকজন।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের তালিকার প্রথম শীর্ষ ১০ টি দেশ সুইডেন, আমেরিকা, জাপান, ফ্রান্স, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি। আলহামদুল্লিাহ, এর তালিকার ১০০ দেশের মধ্যেও একটি আরব দেশ নেই। নেই মুসলিম প্রধান দেশ। ঈমান মানুষকে বাঁচার শক্তি যোগায়। নাস্তিক বা মিথ্যা দেব-দেবী পূজারীরা হতাশার সময় কোনো আশ্রয় পায় না। চরম সময়ে আত্মহত্যা করে বসে। বেশি ভোগ-বিলাসে বিতৃষ্ণ হয়ে কিংবা দুনিয়ার সব পাওয়া হাতে পেয়ে পরিতৃপ্ত ও বিরক্ত হয়ে আর কিছু যখন করার থাকে না, তখন মানুষ আত্মহত্যা করে। হযরত খতীবে মিল্লাত রহ. বলেছেন, মানুষ স্বভাবজাত উদ্বিগ্ন, এ উদ্বেগের ওষুধ তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ নির্ভরতা। মানুষ স্বভাবজাত ভীত, এ ভয়ের ওষুধ আল্লাহর আশ্রয়। মানুষ স্বভাবজাত অস্থিরচিত্ত, এ রোগের ওষুধ আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস। যা নাস্তিক ও কাফিরদের নেই। আমরা দেখি, একজন শ্রমিক বা ফেরিওয়ালা তার সব পুঁজি ও সম্পত্তি একজায়গায় রেখে মসজিদে চলে যায়। আল্লাহকে সেজদা করে সে হয়ে উঠে দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী। একজন অশীতিপর বৃদ্ধ তীব্র শীতে জামাত পড়তে ফজরের সময় মসজিদে যায়। তার জীবনে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত সেটি। যাতে সে আল্লাহর প্রেমে তার পথে হেঁটে যায় তারই ঘরে। ভাবে, যতদিন বেঁচে থাকে তার যেন বন্ধ না হয় আত্মার এ অভিসার। একজন মা তার শিশুপুত্র হারায়, অথবা যুবক ছেলে তার শহীদ হয়ে যায়। মা টি মানুষ হিসাবে বুকফাটা কষ্টে রোদন করে বটে। তবে আল্লাহর কাছে হাত তুলে সবর করে বলে হে আল্লাহ, তুমি এই আমানত আমাকে দিয়েছিলে, আবার তুমিই নিয়ে গেছ। আমি মা, কষ্ট পেয়েছি, তথাপি তোমার ফায়সালায় অসন্তুষ্ট নই। আমায় তুমি ধৈর্য দাও, সন্তানকে কবুল কর, আমার ওপর রহম কর। বিত্তবানরা গোনাহ না করে তাদের সম্পদ অভাবীদের দিয়ে দেয়। যাকাত দিয়ে মালকে পবিত্র করে। যুবা-তরুনেরা কাজ ও বিনোদনের ফাকে হাজির হয় আল্লাহর ডাকে। নামাজ পড়ে তারা তাদের মন ও দেহকে পবিত্রতার পানিতে ধুয়ে ফেলে। নারীরা আল্লাহর সামনে জায়নামাজে তাদের মনের সুখ দুখ খোলে তুলে ধরে। কৃতজ্ঞতা ও বেদনার অশ্রæতে ভাসিয়ে দেয় অন্তরের সকল যন্ত্রণা। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কৃষক আল্লাহর সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। তাদের হতাশার গভীরে ডুবে থাকতে হয় না। চরম দুখে জীবন দিতে হয় না। কারণ, ইসলাম তাদের শিখিয়েছে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ জীবন মূল জীবন নয়। জীবনের ডামি মাত্র। কোরআন শরীফে আল্লাহ বলেছেন, দুনিয়ার জীবন ছলনাময়ী সামান্য ভোগছাড়া আর কিছু নয়। পরকালীন জীবনই হলো প্রকৃত জীবন। ঈমানদার দুঃখ কষ্ট জয় করতে পারে। আনন্দে উচ্ছসিত হয়ে বা প্রাপ্তিতে বেসামাল হয়ে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে না। নিয়ন্ত্রণ, সংযম বা তাকওয়া তাকে সঠিক ট্র্যাকের ওপর রাখে। এজন্য মুসলমানের মধ্যে আত্মহত্যা নেই বললেই চলে। সামান্য যা আছে তা ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধ না থাকার ফলে। আমাদের ধর্মীয় জীবনবোধ আরও বেশি করে চর্চা ও অনুশীলন করতে হবে। অতীত পীর-আউলিয়াদের ভ‚মিকা স্মরণ করে বর্তমান উলামা মাশায়েখকে উম্মতের প্রতিটি সদস্যকে নার্সিং করতে হবে। মনে করতে হবে নবীজির উম্মত একেকটি গাছ, চারা, ফুল ও পাপড়ি। যতœ ও মায়া-মমতার সাথে তাদের পরিচর্যা করা আলেম সমাজ ও বুযুর্গানে দীনের কাজ। এ কাজ নবীন ও তরুন আলেমদেরও হাতে কলমে এখনই শিখতে হবে। কারণ, মানবজাতি তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন