সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

দেরাদুনে লজ্জার হার

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৮, ৮:৫৭ পিএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ৪ জুন, ২০১৮

ফুলটস বল, চেয়েছিলেন বড় শট খেলতে। তবে পুরো গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দিয়ে উড়ন্ত এক ক্যাচে আবু জায়েদ রাহিকে ফেরালেন রশিদ খান। এই আউটের সঙ্গে সঙ্গে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশও। যেন সিরিজে আফগানিস্তানের উড়ন্ত সূচনার প্রতিচ্ছ্ববিই। টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানে হারলো বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ১৬৭ রান তোলে ৮ উইকেট হারানো আফগানিস্তান। জবাবে ১৯ ওভারে ১২২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

লড়াই করে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ
লাড়াই করে অবশেষে হার মানলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। শাপুর জাদরানের কিছুটা লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চালাতে চেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। ব্যাট চালনায় ক্লান্তির ছাপ ছিল স্পষ্ট। বেশিদূর পেরোয়নি বল, উঁচুতে ওঠা বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ছুটে গিয়ে বল লুফে নেবার চেষ্টা করেছিলেন উইকেটরক্ষক শাহজাদ। তবে তার খর্বকায় গড়নের ফায়দা নিয়ে তিন ফিল্ডারের মাঝখান থেকে বল তালুবন্দী করেন উসমান গনি। একই ওভারের দ্বিতীয় বলে আবুল হাসান রাজু এবং শেষ বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন রুবেল হোসেন।

অবশেষে এল একশ’
শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ অবশেষে পেয়েছে একশ’র দেখা। তবে দলীয় তিন অঙ্ক ছুঁতেই লেগেছে ১৫ ওভার ও ৫ উইকেট। সেটি পেরিয়েই দলকে আর টেনে নিতে পারেন নি মোসাদ্দেক হোসেন। এবারও আঘাতটি ঘূর্ণির জাদুকর রশিদ খানের। আফগান স্পিনারের এক গুগলি বুঝতে না পেরে ব্যাট চালিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। তবে লং অনে উসমান গনির হাতে ধরা পড়েন ২৩ বলে ১৪ করা এই অলরউন্ডার।

রশিদের জোড়া আঘাত
শুরুতে তামিম-সাকিবের উকেটের পর রাশ টেনেছিলেন লিটন দাস। তবে আম্পায়ারের বিতর্কিত এক সিদ্ধানেত ফিরতে হয় তাকেও। কিছুটা থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। রশিদের ঘূণিতে সেটিও বশিদূর এগোয়নি। দশম ওভারে বল হাতে এসেই পর পর দুই বলে ফিরিয়েছেন মুশফিক (২০)-সাব্বিরকে (০)। ১১ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮৬। এক পাশ আগলে রেখেছেন মাহমুদউল্লাহ (১২)। তাকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে এসেছেন মোসাদ্দেক হোসেন (৫)।

বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ফিরলেন লিটন
আগের বলেই জীবন পান মুশফিকুর রহিম। তার ঠিক পরের বলে ফেরেন লিটন দাস। মোহাম্মদ নবির বলে তাকে বিতর্কিত এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার। অফ স্পিন রিভার্স হিটে শর্ট থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন লিটন। ব্যাটে খেলতে পারেননি। আম্পায়ার নবির আবেদনে সাড়া দিয়ে এলবিডব্লিউ দেন, যদিও ইম্প্যাক্ট ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। ২০ বলে ৩০ রান করে ফিরেন লিটন।

উইকেট বিলিয়ে দিলেন সাকিব
অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে দিয়ে যাচ্ছিল মোহাম্মদ নবির একটি বল। সেটিকে টেনে এনে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। লাইনে পা না নেয়ার খেসারত দিতে হল বাংলাদেশ অধিনায়ককে উইকেট খুইয়ে। কানায় লেগে উঁচুতে উঠে যাওয়া বল লুফে নিতে কোন বেগ পেতে হয়নি উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ শাহজাদকে। ১৫ রান করে সাকিবের ফেরার সময় ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২১।

প্রথম বলেই আউট তামিম
এর আগে বড় রান তাড়ায় শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় ইনিংসের প্রথম বলে তামিম ইকবালকে হাহিয়ে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দেন মুজিব উর রেহমান। দ্বিধা নিয়ে ফুল লেংথ বল খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ড্যাশিং এই ওপেনার।

বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৬৮
ঝড়ো শুরু, মাঝে দমকা ব্যাটিংয়ের পরও বেশি দূর এগোয়নি আফগানিস্তানের সংগ্রহ। প্রথম টি-২০তে জয়ের জন্য ১৬৮ রানের লক্ষ্য পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ রোববার রাতে দেরাদুনের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৬৭ রান তোলে ‘স্বাগতিকরা’।

জুটি ভাঙলেন রাহি
ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সামিউল্লাহ সেনওয়ারিকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন আবু জায়েদ রাহি। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় পেসারকে উঠিয়ে মারতে চেয়েছিলেন এই মিডলওর্ডার বাটসম্যান। তবে মোসাদ্দেক হোসেনের তালু বন্দী হন ডিপ মিড উইকেটে। ১৮ বলে তার ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটি ৩টি করে চার-ছক্কায় মোড়ানো।

এর আগে সাকিব আল হাসানকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে আফগানিস্তানের একশ’ পার করেন সামিউল্লাহ। দলের রান তিন অঙ্কে নিতে আফগানদের লেগেছে ১৫.৪ ওভার। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন সাকিব।

মাহমুদউল্লাহর দ্বিতীয় শিকার নবি
বোলিংয়ে এসে দুই উইকেট তুলে নিলেন মাহমুদউল্লাহ। নাজিবুল্লাহ জাদরানের পর ফিরিয়ে দিলেন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবিকে। স্কিড করা বল ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হয়ে যান নবি। শূন্য রানে তিনি ফেরার সময় ১৩.৫ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর ৯১/৪।

বোলিংয়ে এসেই মাহমুদউল্লাহর আঘাত
সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেনের দুটি আঁটসাঁট ওভারের সুফল পেলেন মাহমুদউল্লাহ। বোলিংয়ে এসেই পেলেন উইকেট। ফিরিয়ে দিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরানকে। অফ স্পিনারকে বেরিয়ে এসে উড়াতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যাওয়া ক্যাচ শর্ট থার্ড ম্যানে জমান আবু জায়েদ। ২ রান করে নাজিবুল্লাহ ফিরে যাওয়ার সময় ১৩.২ ওভারে আফগানিস্তানের স্কোর ৯০/৩। ক্রিজে আসগর স্টানিকজাইয়ের সঙ্গী মোহাম্মদ নবি।

র‌্যাংকিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে, সেই আত্মবিশ্বাসের পালে জোর হাওয়া লেগেছে প্রস্তুতি ম্যাচে ৮ উইকেটের জয়ে। যার রেশ ছিল আজ রাতে শুরু হওয়া তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজের প্রথমটিতেই। রোববার ভারতের দেরাদুনের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও ছিলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও উসমান গনি। সাকিব আল হাসানের দলকে টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার মাশুল দিতে হল প্রথম পাওয়ার প্লে-থেকেই। মাত্র ৫ ওভারে দুই বিদ্ধংসী আফগান ব্যাটসম্যান তুলে নেন ৪২ রান।

২ ওভার করে বল ঘুরিয়েও কোন সাফল্যের দেখা পাননি আবু জায়েদ রাহি, নাজমুল ইসলাম অপু, অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। মুস্তাফিজুর রহমানের বদলে দলে ঠাঁই পাওয়া আবুল হোসেন রাজুও ছিলেন ব্যর্থদের কাতারে। কোন উইকেট না হারোন দলটি যখন আরো মারমুখী হবার চেষ্টায়, ঠিক তখনই গনির উইকেট ভেঙে দিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ান রুবেল হোসেন। তার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে লেগ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন এই পেসার (৬২/১)।

১০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ঐ এক উইকেট হারিয়ে ৭২ রান। ৩৬ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন শাহজাদ। ৫ রান নিয়ে এই ওপেনারকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আছেন আজগর স্তানিকজাই।

এ ম্যাচের অনন্য এক মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। আর মাত্র ১টি উইকেট পেলে ইতিহাসের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান ও ৫০০ উইকেটের মালিক হবেন তিনি। ভুল না করলে এই ম্যাচেই ছুঁতে পারতেন এই মাইলফলক। ৩৬ রানের নিজের বলে ক্যাচ নিতে পারেন নি ওপেনার শাহজাদের। এর আগে এ কীর্তি গড়তে পেরেছেন পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস। তবে তাদের এ কীর্তি গড়তে ৫০০ এর বেশি ম্যাচ লাগলেও সাকিবের লাগছে ঠিক ৩০০ ম্যাচ।

তিন পেসার নিয়ে বাংলাদেশ
দলে ফেরা অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন এসেছেন একাদশে। বাদ পড়ে গেছেন অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। স্পিন আক্রমণে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী আরেক বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। পেস বোলিংয়ে রুবেল হোসেন ও আবু জায়েদের সঙ্গী অলরাউন্ডার আবুল হাসান।
বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, আবুল হাসান, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ, নাজমুল ইসলাম অপু।

পাঁচ স্পিনার নিয়ে আফগানিস্তান
অলরাউন্ডার সহ পাঁচ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে আফগানিস্তান। যার নেতৃত্বে আছেন লেগ স্পিনার রশিদ খান ও দুই অফ স্পিনার মুজিব উর রেহমান ও মোহাম্মদ নবি।
আফগানিস্তান দল : আসগর স্টানিকজাই, উসমান গনি, মোহাম্মদ শাহজাদ, মুজিব উর রেহমান, নাজিবুল্লাহ জাদরান, সামিউল্লাহ শেনওয়ারি, শফিকুল্লাহ, দারবিশ রাসুলি, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খান, গুলবদন নাইব, করিম জানাত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন