গরিবের কি আবার ঈদ আছে? আমাগোর ঈদ আল্লাহই করাইবো! ঈদ কিভাবে কাটাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে এভাবেই উত্তর দিলেন কুড়িগ্রামের রিকশাচালক অলিউল্লা। ঈদের দিনে কী করবেন জিজ্ঞাসা করতেই তার চোঁখে ভেসে ওঠে গ্রামে রেখে আসা আপনজঈদের কাছে যাওয়া ও তাদের হাতে নতুন কাপড় তুলে দেয়ার আকুলতা। কিন্তু সে আকুলতা পূরণের কোনো সাধ্যই তার নেই, তাই তিনি অনুভূতিহীন কুমিল্লা শহরেই ঈদ কাটাবেন বলে জানান। কুমিল্লা শহর ঘুরে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের ঈদ উদযাপনের এমনই সব অনুভূতির কথা জানা গেলো। সবার মনে একটাই আশা আল্লাহ যদি তাদের দিকে মুখ তুলে তাকাতো তাহলে তারা এখনই ছুটে যেতো আপনজঈদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় ঠেলাগাড়ি চালক আলী মিয়ার সঙ্গে। তিনি বললেন, ভাই রে, অনেক কষ্টে পোলা আর মাইয়ার লাইগ্যা দুইডা জামা কিনছি। ঈদের দিন ওদের হাতে এটা ছাড়া আর কিছুই দিবার পারুম না। এ সময় তার চেহারায় আনন্দ ফুটে উঠলেও পরক্ষণেই সে আনন্দ ঠেলে বের হয়ে আসে বেদনার করুণ ছাপ। অশ্রæসজল চোখে বললেন, আমার বউডারে গত দুই বছর হইলা একটা সুতাও দিতে পারলাম না। বউ আমার তালি মারা শাড়ি পইরাই এইবারও ঈদ কাটাইবো।
এরপর কথা হয় কাজের বুয়া কাজলির সঙ্গে। ঈদে কী করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামী আজ থিকা দুই বছর আগে এমনই এক ঈদের আগে নতুন বউ লইয়া আইস্যা আমারে ঘর থেইকা ভাগাইয়া দিছে। তাইলে বুঝেন আমার কাছে ঈদ কেমন। একটু থেমে তিনি জানালেন, যে বাড়িতে কাজ করেন ঈদের দিন সেখানে অনেক ভালো ভালো রান্না হবে। আর তার থেকে যা বাঁচবে তাই তিনি আর তার ছেলে খাবে। ছেলের জন্য কিছু কিনছেন- এর জবাবে তিনি বলেন, গরিব মানুষ কি আর ছেলের জন্য কিছু কিনতে পারে। তবে বাড়ির স্যার আমারে একটা শাড়ি, আর আমার পোলারে শার্ট-প্যান্ট দিছে। ওই দিয়াই ঈদ হইবো। খেটে খাওয়া মানুষদের এমন ঈদ উদযাপনের কথা শুনে বড় বড় শপিং মলের দিকে নজর চলে যায়, সেখানে দেখা যায় হাজার হাজার টাকা দিয়ে দুই হাত ভর্তি করে শপিং করে ঘরে ফিরছে বিত্তবাঈদের স্ত্রী-সন্তানরা। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ঈদের আনন্দ যেন এখানে এসেই মিলিয়ে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন