শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ভোলায় ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল

ভোলা থেকে মো. জহিরুল হক | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৮ এএম

ভোলায় ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল। সাগরে গিয়েও জেলেরা ফিরছেন শূন্য হাতে। দাদন ব্যবসায়ীদের চাপে দিশেহারা জেলেরা। মাছ না থাকায় জেলে পল্লীতে হাহাকার দেখা দিয়েছে। নদীতে মাছ না পাওয়ায় জেলেরা ঘাটে ঘাটে মাছ ধরার ট্রলার-নৌকা বেঁধে রেখে অলস সময় পার করছেন। ঘরে বসে বসে খেয়ে অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অপেক্ষায় রয়েছেন কখন মাছ পড়বে আর জেলেরা মাছ ধরবেন। অনেক জেলে দাদন ব্যবসায়ী ও এনজিওর চড়া সুদে ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ পেশা বদলানোর চিন্তাও করছেন।
ভোলা জেলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, চরফ্যাশনের সামরাজ, ঢালচর, পাতিলা, আটকপাট, দৌলতখানের চৌকিঘাটা, লালমোহনের বাতির খাল, বেতুয়া সুলিজ, পাড়ের বিভিন্ন মাছ ঘাট ঘুরে জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ সব তথ্য। এসব ঘাটে ইলিশের মাছের বড় বাজার বসে। সেখানে ঢাকা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা মাছ কিনে বিভিন্ন স্থানে পাঠান। ভোলার ইলিশ বিদেশেও রফতানি হয়। মাছের আড়ৎদার কালা মিয়া মেম্বার জানান, প্রতিবছর ভোলায় মাছের আড়তে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। কিন্তু এ বছর এখনো তেমন একটা মাছ মিলছে না। বেতুয়া ঘাটের ছিদ্দিক মাঝি বলেন, এখন ইলিশ মাছের ভরা মৌসুম অথছ মাছ নাই। মাঝিরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে সারা রাত-দিন জাল ফেলে একেকটি নৌকায় তিন-চারটি করে মাছ পন। মাছ ধরতে গিয়ে যে খরচ হয়, সে খরচও উঠে না। অনেক প্রস্তুতি নিয়ে নদীতে গেলেও মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসছে। মহাজনের দাদন ও এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলেরা।
মাছ ঘাটের মন্নান, আবু কালাম, আব্দুল মালেক, হান্নান, কালাম মাঝি জানান, ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে আট থেকে ১০ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে গতকাল নদীতে গিয়ে ছোট সাইজের ছয়টা ইলিশ মাছ পেয়েছি, যা বিক্রি করে হাতে পেয়েছি দুই হাজার আটশত টাকা। অথচ প্রতিদিন নদীতে গেলে খরচ হয় পাঁচ-সাত হাজার টাকা। লোকসান হওয়ায় নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখেছেন তিনি। মনপুরা কলাতলী মাছ ঘাটের মাজেদ মাঝি জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাস থেকে মাছ পড়া শুরু হলেও এ বছর জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হতে চললেও ইলিশ মাছের দেখা মিলছে না। চার-পাঁচটি মাছ পেয়ে খরচ পোষে না। তাই তিনি চট্টগ্রাম গিয়ে অন্য কাজ করার কথা ভাবছেন। দাদন ও এনজিওর ঋণ দুটোই তাদের জন্য কস্টকর। দাদন ব্যাবসায়ীরা যে টাকার মাছ বিক্রি হয় তার উপর শতকরা সাত-আট টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু দাদনের সুবিধা হলোÑ যেদিন মাছ ধরা পড়ে না, সেদিন আড়ৎদারকে টাকা দিতে হয় না। অন্য দিকে এনজিওর কিস্তি এদিক সেদিক হলে ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এ জন্য জেলেরা পালিয়ে বেড়ান। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তাদের জন্য সুবিধা হয় বলে জানান স্থানীয় জেলেরা।
সøুইস ঘাটের মৎস্য আড়ৎদার সিরাজ মেম্বার জানান, গত বছর এই দিনে দৈনিক অত্যন্ত ৫০ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়েছে। কিন্তু এ বছর ৫০ হাজার টাকার মাছও বেচাকেনা হয়নি। জেলেদের আরেক প্রধান সমস্যা নদীতে ডাকাত আতঙ্ক। মাছের মৌসুমেই ডাকাতদের উৎপাত বেশি দেখা দেয়। অনেক সময় মাছসহ জেলেদের মুক্তিপণের জন্য আটক করে নিয়ে যায়, মাছ লুট করে নিয়ে যায়, ট্রলার ডুবিয়ে দেয়। অনেক সময় ডাকাতদের দাবি পূরণ না হলে জেলেদের মেরে ফেলা হয়। অর্থনীতির সফলতার ক্ষেত্রে এই মৎস ব্যবসার অনেক অবদান রয়েছে। দেশের মৎস্যজীবী ও মৎস্যসম্পদ টিকিয়ে রাখতে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই এ মৎস আহরণ, জেলেদের সুরক্ষ্যা ও সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করে মৎস সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখাই হলো সময়ের দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন