একমাত্র মেয়ে রিমার কথা শুনতে শুনতে দু’চোখ ঝাপসা হয়ে এলো রেবেকা হায়দারের। অসুস্থ শরীরটা কোন রকমে টেনে তুলে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। বাইরে অশান্ত বর্ষণ।
ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমক।
বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ।
আর সামনে দাঁড়ানো ২২ বছরে উদ্যত ঝকঝকে তরবারি রিমার উপস্থিতি।
সবকিছু মিলে রেবেকার জীবনে যেন এক সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে গেল।
রিমা মায়ের দু’ কাঁধ ধরে ঝাঁকুনি দিলো।
বলল-
ঃ মা, মা- তুমি আর চুপ করে থেকো না।
রেবেকা ক্লান্ত কণ্ঠে বললেন-
ঃ বলবার যখন সময় ছিল তখন তো কিছুই বলিনি। আর এখন তো শেষ সময়। শুধু তোর একটা ভালো বিয়ে হয়ে গেলেই আমি মরেও শান্তি পাব।
রিমা ক্রুদ্ধ হয়ে বলল-
ঃ আর বিয়েটা দিয়ে যেতে পারলে সব শেষ? কিন্তু তার পরের জীবনটা মা? যে জীবন তুমি পেয়েছো...?
রেবেকা মেয়ের মুখে হাত চাপা দিলেন-
ঃ আল্লাহ না করুন, তোর অমন জীবন হতে যাবে কেন?
ঝাপসা চোখ দুটো আঁচল দিয়ে মুছলেন রেবেকা। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস চাপতে চাপতে বললেন-
ঃ আমি যে আমার জীবনে দুঃখের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে তোর জীবনের মঙ্গল কামনা করি মা।
রিমা বলল-
ঃ মঙ্গল কামনা কর। কিন্তু নিশ্চয়তা দিতে পারো না। তোমার মা, নানুও নিশ্চয় সারা জীবন তোমার মঙ্গল কামনাই করেছিলেন। কিন্তু কি পেয়েছো তুমি?
ঃ রিমা
আর্তনাদ করে উঠলেন রেবেকা।
বললেন-
ঃ অমন করে বলিসনে মা। আমি যে তোকে পেয়েছি। তোর মুখের দিকে তাকিয়েই জীবনের সবচে সংকটময় সময়গুলো কাটিয়ে দিয়েছি। আর বাকীটাও পারবো।
রিমা বলল-
ঃ ওসব অর্থহীন সেন্টিমেন্টের কথা ছাড়ো মা। কোন দাম নেই এর। কি পেয়েছো তুমি! এতো কষ্টের মধ্যেও হাসবার মতো মুখ করলেন রেবেকা।
রিমা কাছে এসে দাঁড়ালো এবার।
বলল-
ঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় মেয়ে ছিলে তুমি।
গানে, আবৃত্তিতে, সাংগঠনিক কাজে প্রচুর সুনাম ছিল তোমার। আর এসবে মুগ্ধ হয়েই বাবা তোমায় বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তুমি তোমার ক্যারিয়ারের কথা ভুলে গিয়ে ডুবে গেলে সংসারের শ্রীবৃদ্ধির কাজে। বাবা আর চাচারা তোমাকে আশ্রয় করে যে যার গন্তব্যে পৌঁছে গেল। আর তুমি ধূপ কাটির মতো জ্বলতে জ্বলতে আজকের এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছো।
মেয়ে রিমার ওই শাণিত রূপ আর দৃঢ় চেতনার কথা শুনতে শুনতে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন রেবেকা।
এই সংসারে এসে গত ২৩ বছর যে কথা কোনদিন বলতে পারেননি রেবেকা সেকথা এমন স্পষ্ট করে, কি করে বলতে পারলো ওই টুকুন মেয়ে রিমা ?
সন্ধে অতিক্রান্ত হয়েছে অনেকক্ষণ। বাইরে নেমেছে ঘন অন্ধকার। সেই সাথে একটু শীত শীত হাওয়া।
কিন্তু তবুও রেবেকার ঘরে পাখা ঘুরছে।
অল্প অল্প ঘামছেন তিনি।
একটু আগেই ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে রিমা।
রেবেকা আঁচল দিয়ে চোখ চাপলেন।
আর যেন পারছেন না শ্বাস নিতে। বড় কষ্ট এই বুকের ভেতরটায়। বড় বেশী কষ্ট...।
মায়ের আগোছালো আলমারিটা গোছাতে গিয়েই ডাইরীটা চোখে পড়েছিল রিমার। সুশিক্ষিতা, দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী মেয়ে রিমা যদিও জানতো এ অন্যায়; অনুমতি ছাড়া কারো ডাইরী পড়া উচিৎ নয়। কিন্তু তবুও এ কাজটি করলো সে।
সব কাজ শেষ করে, মায়ের দৃষ্টি লুকিয়ে এক ফাঁকে নিজের ঘরে এসে ঢুকলো রিমা।
রাত গভীর থেকে গভীরতর হতে লাগলো। খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ভেজা হাওয়া এসে লাগছে রিমার গায়ে। তবুও ফ্যান চলছে মাথার ওপর। ক্রমাগত ঘামছেও।
ডাইরীটা পড়তে পড়তে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল রিমা।
বিস্মিত বেদনায় ছটফট করতে লাগলো একাকী।
কেন...? কেন...? এতোদিন মাকে জানার চেষ্টা করেনি সে?
কেন জানতে চায়নি কি অসুখ মায়ের? কেন মা ভালো হচ্ছে না?
কেন মাকে সব সময় একটা প্রাণহীন-পাথরের মূর্তির মতো মনে হয় রিমার?
শৈশব থেকে কৈশর, যৌবন পর্যন্ত হোস্টেল থেকে প্রতিটি ছুটিতে ঢাকায় এসে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে রিমা।
অসুস্থ হলেও সব সময় স্বাভাবিকভাবে মেয়ের সামনে নিজেকে উপস্থিত করেছেন রেবেকা। মেয়েকে কখনো বুঝতে দেননি কিছুই।
ঘরের দরজা বন্ধ করে অনেক কাঁদলো রিমা।
আশ্চর্য !
এতো কষ্ট সহ্য করেছেন মা! শুধু ওর মুখের দিকে চেয়ে?
রিমা যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না।
মাকে এতো কষ্ট দিয়েছেন বাবা? তাঁর উচ্ছৃঙ্খলতা আর স্বেচ্ছাচারিতা মায়ের মতো একজন অসাধারণ-অনন্য মহিলাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে!
চাচাদের বদ স্বভাবের জন্যে বাড়িতে কাজের মেয়ে রাখা যেতো না।
বাবা বাড়ি ফিরতেন রাত দুপুরে...!
কোন কোনদিন বন্ধু-বান্ধব থাকতো সাথে।
এসেই খাবার দিতে বলতেন; যেমন করেই হোক এসবের জোগান দিতে হতো মাকে। এমন কি অসুস্থ অবস্থায়ও।
ডাইরীটা পড়তে পড়তে রিমার মনে হলো-ও যেন ক্রমাগত অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
ওকি তবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে! কিন্তু না। যেখানে মা এতো ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতরেও শুধু রিমার জন্যে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেখানে ওকেও সুস্থ থাকতে হবে।
নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো রিমা।
কই? বাবা তো কখনো বলেননি এসব কথা?
ছোট বেলা থেকেই দার্জিলিং এর বোর্ডিং স্কুলে এবং পরে কলেজে পড়াশোনা করেছে রিমা।
আর বুদ্ধি হবার পর থেকেই দেখছে একটু একটু করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মা। কিন্তু সেজন্যে বাবাকে কখনো চিন্তিত বা দুঃখিত হতে দেখেনি রিমা।
বাবা জামাল হায়দার উচ্চবিত্ত সমাজের একজন ব্যস্ত ব্যক্তিত্ব।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের কাজে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়।
ব্যবসার খাতিরে বিভিন্ন ধরণের পুরুষ মহিলার সাথে মেলামেশা করতে হয় তাঁকে। সময় কোথায় অন্দর মহলের কোন কোণায় দুঃখ এবং ভালোবাসার ধুপ জ্বলতে জ্বলতে কখন নিঃশেষ হচ্ছে তা জানার...?
ব্যবসা, জীবন এবং যৌবন সবই জামাল হায়দারের অনুগত দাস। এসবের যেমন খুশী ব্যবহার তার নখদর্পণে।
স¤প্রতি দার্জিলিং থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ঢাকায় এসে পড়াতে ভীষণ রকম ভালো হয়েছে ওর জন্যে। বিশেষ করে মায়ের জন্যেও। কিন্তু কদিন পরে যখন জানলো যে বাবা তাঁর এক বিজনেস পার্টনার বন্ধু পুত্রের সাথে রিমার বিয়ে ঠিক করেছেন, তখন মনটা একটু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মায়ের সব কিছু জানবার পর আপাতত বিয়ের চিন্তা মনটাকে একেবারে বিষিয়ে দিল।
একদিন বন্ধুপুত্র ইমরানকে সাথে নিয়েই বাড়ি ফিরলেন জামাল হায়দার।
ছেলেটির সুন্দর চেহারা।
চলনে-বলনে স্মার্ট। ভদ্র এবং আকর্ষণীয়।
চায়ের টেবিলে রিমার সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিলেন জামাল হায়দার।
একসময় ইমরান বলল-
ঃ আপনার কথা এতো শুনেছি যে-
হাসলো রিমা
অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলল-
ঃ বাবার সব কিছুতেই বাড়াবাড়ি। আমার কথা কি আছে এতো বলার!
জামাল সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-
ঃ পাগলী মেয়ে? বাড়াবাড়ি কি বলছিস, এমন ল²ী মেয়ে আর কার ঘরে আছে বল?
উঠে পড়লো রিমা।
বলল-
ঃ কিছু মনে করবেন না ইমরান সাহেব। সব বাবা-মাই সন্তানদের সম্পর্কে এরকম ধারণা পোষণ করেন। আমার একটু কাজ আছে-
উঠে দাঁড়ালো ইমরানও ।
সহাস্যে বলল-
ঃ আমাকেও যেতে হবে। আসি চাচা।
চলে গেল ইমরান।
ব্যবসা সংক্রান্ত নানান প্রয়োজনে জামাল সাহেবের কাছে আসতে হয় ইমরানকে। কখনো অফিসে, কখনো বাসায়।
প্রায় দেখা হয় রিমার সাথে।
সৌজন্যবোধের কথা-বার্তাও হয় দু’জনের। দু’জনেই দু’জনের সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বে চমৎকৃত।
ইমরান কিছুটা ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করলেও একটা সযতন দূরত্ব রাখে রিমা। ওর বার বার মনে হয়, এই মেলা-মেশা, হাসি-গল্প, আর ভালোবাসার কথা সবই অর্থহীন।
মেয়েদেরকে কাছে পাবার পুরুষদের এ এক চিরন্তন ছল। মায়ের ডাইরীর এক জায়গায় লেখা আছে-
“আমার রূপকথাময় ভুবন থেকে জামাল আমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে এলো একেবারে ওর বুকের মাঝখানটিতে।
ভালোবাসার সমুদ্রে আমায় ডুবিয়ে দিল এবং আমি ক্রমাগত ডুবতে লাগলাম।
আত্মীয়-স্বজন, চেনা পৃথিবী, সবকিছু থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম আমি।
যখন আমার চৈতন্য হলো তখন আমি আমার পরিবার, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্যারিয়ার সবকিছু থেকে অনেক দূরে।”
অন্য জায়গায় লেখা আছে-
‘বিশ্বাস করতে পারছি না, জামাল এতো বদলে যাবে! এতো ভালোবাসার অঙ্গীকার করে একি ভিন্ন রূপ ওর! কার হাত ধরে পথ চলব আমি ...?’
অন্য পাতায়-
‘ইয়া আল্লাহ, তুমি আমায় শাস্তি দাও। আমার একমাত্র সন্তান রিমাকে যেন আমি সমস্ত অমঙ্গল থেকে রক্ষা করে মানুষ করে তুলতে পারি। ওর বাপের অন্যায়ের জন্য তুমি যতো খুশী আমাকে শাস্তি দাও। আঘাত দাও। জামালকে আমি যতো বেশী ভালোবাসি ততো বেশী ঘৃণাও করি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও পরওয়ার দিগার।’
পড়তে পড়তে রিমার মাথার ভেতরটা যেন কেমন করে ওঠে।
কিন্তু কেন এমন হলো?
কেন এমন হবে ...?
যে মানুষ ভালোবাসা দেয়-
সে কেন অহেতুক কষ্ট দেয়, ধ্বংস ডেকে আনে?
পুরুষ যদি তার ভালোবাসার পাত্রীকে অকারণে অন্যায়ভাবে আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতে পারে, তবে নারী কেন পারে না প্রতিবাদটুকু করতে?
কেন মা রুখে দাঁড়ান নি বাবার অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে?
সেকি বাবার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার গভীরতার জন্যে?
এ কেমন ভালোবাসা-যা একজন মানুষকে তিলে তিলে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়?
কিন্তু রিমা তা হতে দেবে না।
কারণ সে বিশ্বাস করে দাম্পত্য ভালোবাসা হচ্ছে আল্লাহর নেয়ামত।
এটা কখনো বিফলে যেতে পারে না। আর এই বিশ্বাসের কথা সে মায়ের মুখেই শুনেছে।
রিমার বুকের ভেতরটায় কিসের যেন শিহরণ লাগে-
সত্যি, মা একজন অসাধারণ মহিলা।
যে বিশ্বাস এবং ভালোবাসার ন্যায্য অধিকারের কথা তিনি রিমাকে শুনিয়েছেন- সে বিশ্বাস মাকে সে ফিরিয়ে দেবেই।
মায়ের স্বর্গীয় প্রেমসুধা, সহনশীলতা আর বাবার কঠোরতার সংমিশ্রনেই রিমার জন্ম।
কি করে হেরে যাবে রিমা?
বিজয়ী তাকে হতে হবেই।
বাবাকে মায়ের কাছে ফিরে আসতেই হবে।
তবেই হবে ওর নতুন জীবনের শুরু।
ইমরান কিছুতেই বুঝতে পারে না কোথায় রিমার সমস্যা।
ক’দিন পর ওদের বিয়ে।
সব ঠিক হয়ে আছে।
দু’জনেই অভিজাত ধনী পরিবারের।
শিক্ষায়-সংস্কৃতিতে অমিল নেই কোথাও। তবে কেন এই দূরত্ব?
ইমরানের ব্যবহারে কোন বাড়াবাড়ি নেই।
বরং পরিমিত এবং মার্জিত পদক্ষেপ লক্ষ্য করবার মতো।
বুদ্ধিমতি এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের মেয়ে রিমার সংযত বিচরণও নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়।
এক অব্যক্ত দুরত্ব রেখে চলে দু’জনেই।
তবুও দু’পক্ষের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিয়ের তাগাদা আসলো। কিন্তু বেঁকে বসলো রিমা।
জামাল সাহেব বললেন-
ঃ ইমরানকে তুই দেখেছিস। ওকে কি তোর যোগ্য মনে হয় না?
রিমা বলল-
ঃ আমি কি তাই বলেছি?
ঃ তাহলে তোর অসুবিধেটা কোথায়?
রিমা একটু চুপ করে থেকে বলল-
ঃ মা এতো অসুস্থ-এখন আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয় বাবা।
ঃ অসুস্থ! এটা কি কোন নতুন ব্যাপার? তাই বলে বিয়ে বন্ধ থাকবে?
বাবার চোখে চোখ রাখলো রিমা কঠিনভাবে। নিজেকে সামলালো অনেক কষ্টে। তারপর দৃষ্টি সরিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল-
ঃ মায়ের অসুস্থতা তোমার কাছে কোন ব্যাপার নয় বাবা। কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু। মাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্যে কোথাও যেতে চাই।
বিস্ময়ে এবং রাগে ফুলতে লাগলেন জামাল সাহেব।
বললেন-
ঃ তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? বিয়ে টিয়ে বাদ দিয়ে হঠাৎ করে বেড়াতে যাবার কি হলো? এসব তো পরেও হতে পারে।
রিমা বলল-
ঃ মাকে আমি সুস্থ করে তুলতে চাই বাবা। ভালো দেখতে চাই।
ঃ কিন্তু-
ঃ কেন কিন্তু নয় বাবা। প্লীজ।
বিস্মিত হলেন জামাল সাহেব।
শৈশব থেকে বাবা-মা’র স্নেহ ছায়া হতে দূরে থেকে কখন আর কেমন করে এতো দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলো মেয়েটা...?
কিছুক্ষণ হয় রেবেকা ঘুমিয়ে পড়েছেন।
ঘরের আলো কমিয়ে দিল রিমা। নিজের ঘরে যাবার আগে-কোণায়, বাবার রেস্ট রুমের দরজায় দাঁড়ালো রিমা। দেখলো, কিছু কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত আছেন বাবা।
টের পেয়ে দরজার দিকে চোখ তুললেন জামাল সাহেব। বললেন-
ঃ কিছু বলবি? আয় ভেতরে আয়।
একটু হাসবার মতো মুখ করলো রিমা। কিন্তু ভেতরে গেল না।
তেমনি দাঁড়িয়ে রইলো দরজায়।
বলল-
ঃ এতো রাত অবধি তোমার এতো ব্যস্ততা বাবা। ঘুমুবে কখন?
ঃ একটু দেরী হবে।
ঃ কতো দেরী বাবা?
মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বিস্মিত হলেন জামাল সাহেব।
ওই চোখ-মুখ! দাঁড়াবার ওই ভঙ্গি। মনে হলো সেই পাঁচ বছরের ছোট্ট রিমা। ঘুমে ঢুলুঢুলু দু’চোখে ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতো পর্দা ধরে।
বলতো -
ঃ আর কতো দেরী বাবা? ঘুমুবে না?
ঃ তুমি যাও না মা-মনি। আমি একটু পরে আসছি। মায়ের কাছে যাও।
ঃ না তুমিও এসো-
শেষ পর্যন্ত মেয়ের খাতিরে বাধ্য হয়ে উঠে যেতে হতো জামাল সাহেবকে।
এরপরÑ
সাত বছর বয়সে সেই যে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হয় রিমাকেÑ তারপর কখন আর কেমন করে এতোগুলো বছর পার হয়ে গেল...।
সেই ছোট্ট রিমা-এখন একটা জলন্ত অগ্নিশিখা।
অথচ দাঁড়াবার আর কথা বলবার ভঙ্গি একটুও বদলায় নি। চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার সামনে এলেন জামাল সাহেবে।
হাত রাখলেন মেয়ের মাথায়।
একটু হাসবার মতো মুখ করে বললেন-
ঃ যাচ্ছি। তুই ঘুমুতে যা।
বাবার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিল রিমা।
কম্পিত কণ্ঠে বলল-
ঃ অনেক কষ্টে মাকে আমি ঘুম পাড়িয়ে এসেছি বাবা। মায়ের যেন ঘুম না ভাঙ্গে।
নিজের ঘরের দিকে চলে গেল রিমা। স্তব্ধ বিস্ময়ে সেই দিকেই তাকিয়ে রইলেন জামাল সাহেব।
বুকের ভেতরটায় কোথায় যেন একটু কাঁপন লাগলো।
ইমরান আসে মাঝে মাঝে জামাল সাহেবের কাছে।
কখনো কখনো দেখা হয়ে যায় রিমার সাথে।
কথাও হয়।
ইমরানের দৃষ্টির গভীরতা একেক সময় রিমার বুকের ভেতরটাকে কেমন করে কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু সেই কম্পনকে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে সামলে নেয় রিমা।
প্রতিক্ষণে-প্রতি ঘন্টায় মাকে মনে পড়ে ওর।
নিজের মধ্যে যেন মাকে দেখতে পায় রিমা।
সেই বিকশিত তারুণ্য, প্রতীভায় দীপ্ত, প্রেমিকের সান্নিধ্য, বিয়ে...। এবং তারপর? ছটফট করে রিমার অশান্ত মনটা। ভালো লাগে না ওর এইসব।
একটা জীবনÑ
একটা প্রদীপ্ত শিখা-
আর দশজনের চেয়ে ব্যতিক্রম একটি স্ফুলিঙ্গকণা-
চোখের সামনে শেষ হয়ে যাবে একটি জীবন আরেক জনের অনাদরে, অসম্মানে, ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে...? অত্যাচারে অত্যাচারে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে যাবে নিঃশব্দে...?
সমাজ আর লৌকিকতার ভয়ে দম ঘুটে ঘুটে মরে যাবে -একই ছাদের নিচে, চোখের সামনে? সতী স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? এ কি করে সম্ভব?
একটা জীবনকে পৃথিবীতে আনতে কতো কষ্ট। সে জীবনকে গড়ে তুলতে কতো সাধনা।
একটা ঘরকে তৈরি করতে কি অমানুষিক পরিশ্রম। এর পরেও নারীর নেই কোন মর্যাদা। এ কি কখনো হতে পারে ?
রিমা কিছুতেই ভেবে পায় নাÑকেন এমন হয়? কেন এমন হয়?
কিসের জোরে একজন পুরুষ অন্যায়ভাবে একজন নারীকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে? কে তাকে দিয়েছে এই স্পর্ধার ক্ষমতা?
কেন মানুষ এক সাথে পথে চলার অঙ্গীকার করে মাঝ পথে হাল ছেড়ে দেয় আচমকা? কি শাস্তি হওয়া উচিৎ এইসব বিশ্বাস হন্তা নেকড়েদের?
কথা কম হলেও ইমরানের গভীর চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি, সতন্ত্রতা, ব্যক্তিত্ব- এক অব্যক্ত আকর্ষণে কাছে টানতে থাকে রিমাকে।
কিন্তু আবার পরক্ষণেই বাবার চেহারাটা মনে পড়ে যায় ওর।
তারুণ্যের এক প্রেমিক পুরুষ থেকে ধীরে ধীরে স্বেচ্ছাচারী আর অত্যাচারী নির্দয় এক স্বামীতে রূপান্তরিত হয়।
মুহূর্তের মধ্যে বিষিয়ে ওঠে রিমার মনটা। নিঃশ্বাসটা যেন আটকে যেতে চায়। দু’চোখ ভিজে আসে অজান্তে।
মনে মনে উচ্চারিত হয়-বাবা, তোমাকে মায়ের কাছে ফিরে আসতেই হবে।
মাকে নিয়ে রিমা কক্সবাজারে এসেছে আজ দু’দিন হলো। আসবার আগে বারবার বাবাকেও অনুরোধ করেছে সে।
কিন্তু ব্যস্ততার জন্যে সময় দিতে পারেননি জামাল সাহেব।
মনক্ষুণœ হয়েছে রিমা।
কিন্তু মাকে নিয়ে ঘরের বার হয়েছে সে।
পর্যটনের মটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেক কিছুই দেখা যায়।
সমুদ্র সৈকত, আঁকাবাঁকা বাঁধানো চমৎকার রাস্তা।
রাস্তাগুলো চলে গেছে বিভিন্ন মটেলের গা ঘেসে। চারদিকে মৌসুমি ফুলের সমাহার...লাল ইটের সরু পায়ে হাঁটা সমুদ্রগামী পথ।
অপূর্ব !
সকাল বিকেল মাকে নিয়ে বীচে হেঁটে বেড়ায় রিমা।
কখনো কখনো চাদর বিছিয়ে বসে। বাদাম চানাচুর খায়। একেক সময় ছোট ছোট ঢেউ এসে ভিজিয়ে দেয় খানিকটা।
বেশ লাগে রিমার।
মায়ের শাড়ির আঁচল ওড়ে। দু’পাশের চুলগুলো আনন্দে বাতাসের ছোঁয়ায় ফুর ফুর করে। মা হাত দিয়ে এলোমেলো কুন্তল চূর্ণ সরান।
হাঁটতে হাঁটতে খুলে যাওয়া দীর্ঘ চুলে বেণী বাঁধেন।
শাড়ির আঁচলটা বুকের কাছটিতে টেনে ধরেন।
দু’চোখ ভরে মাকে দেখে রিমা।
মায়ের চলনে বলনে প্রতিটি ভাব ভঙ্গিতে এতো স্বকীয়তা....! এতো মার্ধুয! এতো ব্যক্তিত্ব!
পঁয়তাল্লিশের মাকে মনে হয় পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি।
হালকা পাতলা গড়নের অসুস্থ রেবেকা কিছুটা যেন লাবণ্যময়ী হয়ে উঠেছে মেয়ে রিমার অক্লান্ত সেবা আর সাহচর্যে।
রেবেকা মেয়ের মুগ্ধ দৃষ্টি লক্ষ্য করে বলেন-
ঃ কি দেখছিস অমন করে?
রিমা বলেÑ
ঃ তোমাকে।
ঃ আমাকে!
হাসলেন রেবেকা অবাক হয়ে।
ঃ আমাকে দেখার কি আছে?
দুষ্টুমীর হাসি হাসলো রিমা।
তারপর মায়ের গলা জড়িয়ে ঘরে বলল-
ঃ সে তুমি বুঝবে না।
রিমার গালে চুমু খেলেন রেবেকা হায়দার।
স্বস্নেহে বললেন-
খুব দুষ্টু হয়েছিস।
হেসে উঠলো দু’জনেই।
ফেরার পথে রোজই বীচের কোল ঘেঁষা চায়ের দোকানে এসে ঢোকে রিমা, মাকে নিয়ে। বেশীর ভাগ টুরিস্টরাই ঢোকে দোকানগুলোতে।
ভাজি, পুরি, গরম মশলা দেয়া চা চমৎকার তৈরি হয় এখানে।
ভোরের নির্মল ঠান্ডা বাতাসে অবগাহন করে এই চা আর ভাজি পুরির তুলনা হয় না।
রিমার কান্ড-কারখানা দেখে হাসলেন রেবেকা।
বলেনÑ
ঃ তুই একটা পাগল।
রিমা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে মায়ের হাতে দেয়,
বলে-
ঃ কেন মা? তোমার ইচ্ছে করে না এই ঘুরে বেড়ানো। সংসারের ছক বাঁধা গÐির বাইরে কখনো কখনো হারিয়ে যেতে ...?
ঃ ইচ্ছে করলেই বা কি?
মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো রিমা। তারপর মুরুব্বিয়ানার ভঙ্গিতে বলল-
ঃ যখনই ইচ্ছে হবে এই অবারিত প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে, তখনই কাঁধে ছোট্ট একটা ব্যাগ তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়বে-সংসারের পিঞ্জর থেকে।
ঃ তাও কি হয়?
রিমা চোখ রাখে মায়ের চোখে। দৃঢ় আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলে-
ঃ হয় মা, হয়। আমি রয়েছি না তোমার জন্যে।
রিমাকে বুকের কাছটিতে টেনে নিল রেবেকা।
দুটো চোখ ভিজে আসে অজান্তে
তবুও হাসবার মতো মুখ করে বললেন-
ঃ আমি জানিরে।
রিমা বলল-
ঃ মা, মা তুমি কোন অবস্থাতেই মন খারাপ করতে পারবে না। আমি তা হতে দেব না- রেবেকা বললেন-
ঃ তুই আর কতোদিন আমাকে আগলে রাখবি রিমা? কতো দিন?
রিমা মায়ের কাঁধে মাথা রাখলো।
অস্ফুট কণ্ঠে বলল-।
ঃ সারা জীবন
খুব ভোর বেলা রুম থেকে বেরিয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল রিমা। ঘুম ভেঙে ছিল অন্ধকার থাকতেই।
ছটফট করছিল বিছানায় শুয়ে।
অনেক এলোমেলো চিন্তা মনটাকে বার বার ভারাক্রান্ত করে তুলছিল।
নামাজ পড়েই মটেলের টানা বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল রিমা।
ভোরের ঠাÐা বাতাসটা ওর খুব ভালো লাগছিল।
অনেকেই জগিং করছিল রাস্তায়। কেউ বা লনের একপাশে।
রিমা খেয়াল করলো জগিং শেষে কেউ একজন সিঁড়ি দিয়ে উঠে ওকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে থেমে গেল।
দেখলো পেছন ফিরে-
রিমা তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে। এগিয়ে এলো মানুষটি।
আপনি?
হাসলো ইমরান।
কেমন আছেন?
ভালো। কবে এসেছেন?
ঃ হলো কদিন। মা কেমন আছেন?
ঃ অনেকটা ভালো।
রিমা একটু চুপ করে থেকে আবার বলল-আপনি একা এসেছেন?
ঃ হ্যাঁ। রিমা তাকালো সামনের দিকে।
বলল-
ঃ আপনি এই হোটেলেÑএই ফ্লোরেই আছেন জানতেই পারিনি।
হাসলো ইমরান।
একটু চুপ করে থেকে বলল-
ঃ আচ্ছা চলি-
লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল ইমরান।
তেমনি দাঁড়িয়ে থাকলো রিমা।
মা কখন ঘুম থেকে উঠে ওর পাশে দাঁড়িয়েছেন টেরই পায়নি সে।
টের পেয়ে মায়ের কাঁধে মাথা রাখলো রিমা।
বলল-
ঃ কি সুন্দর সকাল মা। তাই না?
ঃ হ্যাঁ-
একসময় রেবেকা আবার বললেন-
ঃ চল্। এবার ফেরা যাক।
ঃ কেন মা?
ঃ বারে আর কতোদিন ঘর ছেড়ে বাইরে থাকা যায়?
রিমা তাকালো মায়ের দিকে।
তারপর বলল-
ঃ বাবাকে আসতে বলে দিই?
একটা দীর্ঘশ্বাস চাপার চেষ্টা করলেন রেবেকা।
বললেন-
ঃ এখানে আসার সময় কোথায় তাঁর?
রিমা বলল-
ঃ সময় হবে মা। সময় বাবাকে করে নিতেই হবে।
দু’জনেই তৈরি হয়ে ডাইনিং হলে গেল।
তারপর চায়ের পর্ব শেষ করে ফোন করলো ঢাকায়, জামাল সাহেবের কাছে।
দু’দিনের মধ্যেই হাজির হলেন তিনি। খাওয়া এবং বিশ্রামের পর জামাল সাহেব এক ফাঁকে জিজ্ঞাস করলেন-
ঃ জরুরী তলব কেন এবার বল।
রিমা বাবার কাঁধে মাথা রাখলো আদুরে ভঙ্গিতে।
তারপর বলল-
ঃ এতো চমৎকার জাগায় তোমাকে ভীষণভাবে মিস করছিলাম বাবা। ভীষণ খারাপ লাগছিল ঢাকায় তোমাকে একা ফেলে এসেছি বলে।
জামাল সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন-
ঃ সত্যি?
রিমা এবার সরাসরি বাবার চোখে চোখ রাখলো।
বলল-
ঃ তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো বাবা? আমি কি তোমাকে এখানে জোর করে আনতে পারি না? আমি আর মা ছাড়া তোমার আর কে আছে বলো?
মেয়ের কথার কোন জবাব দিতে পারলেন না জামাল সাহেব। আলতো হাত বুলালেন মেয়ের চুলে।
দেখলেন-সমুদ্রের দিকে; এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন রেবেকা।
পড়ন্ত সুর্যের রং এসে পড়েছে চোখে মুখে।
দুটো চোখ যেন সমুদ্রের গভীরতায় আচ্ছন্ন। চোখ দুটোতেই অবস্থান করছে চাপা অভিমান।
জামাল সাহেবে যেন বিস্মিত হলেন।
এ যেন অন্য কোন রেবেকা।
দূর দ্বীপবাসিনী এক নিভৃতচারিনী।
এলো খোঁপা খুলে পড়ছে পিঠের ওপর।
রিমা এক সময় উঠে পড়লো বাদাম আনতে।
থুতনীতে হাঁটু রেখে বালুর ওপর তেমনি বসে আছেন রেবেকা।
পাশের মানুষটির উপস্থিতি চোখ দুটোকে বার বার ভিজিয়ে দিচ্ছিল।
ফেনায়িত সমুদ্রকে সামনে রেখে, সূর্যের শেষ রশ্মিতে অবগাহন করে, দুই জগতের দুটি মানুষের এই নিঃশব্দ উপস্থিতি যেন একটি রক্তাক্ত মহাকাব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
রেবেকার মুখের একটা পাশ দেখা যাচ্ছে। মরাল গ্রীবা।
কাঁচা সোনার মতো রং ইষৎ ¤øান।
চোখের দীঘল পাপড়িতে মেঘের ঘনঘটা।
বিবাহিত জীবনের এতোগুলো বছর পার হয়ে গেছে...
রেবেকার এই অপূর্ব বিষাদ মূর্তি এতো কাছ থেকে কোন দিন দেখেছেন কি জামাল সাহেব...?
কথা নেই কারো মুখে।
এক সময় রেবেকার একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় তুলে নিলেন জামাল হায়দার।
একটু শিউরে উঠলেন রেবেকা কাক্সিক্ষত হাতের স্পর্শে।
এবং তারপরই ফুঁপিয়ে উঠলেন হাঁটুতে মুখ গুঁজে।
বুকের কোথায় যেন একটু কাঁপন লাগলো।
সমুদ্রের দিকে চেয়ে নিজেকে সামলাতে চাইলেন জামাল সাহেব।
বাদামের ঠোঙ্গা হাতে এগিয়ে আসতেই থমকে দাঁড়ালো রিমা।
দেখলো Ñ
হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছেন মা। একটা হাত বাবার হাতে।
ছোট ছোট ঢেউ এসে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ওদের দু’জনকে।
দু’চোখ ভিজে এলো রিমার।
ওর ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে ভীষণভাবে আদর করে বাবা মা দু’জনকে।
কিন্তু এক পাও এগুতে পারলো না রিমা।
বাবা-মার এ অব্যক্ত মুহূর্তটির জন্যই এতোদিন অপেক্ষা করেছিল রিমা।
মায়ের অতৃপ্ত প্রেম কাক্সিক্ষত ভালোবাসা, আর স্বামীর হাতের উত্তপ্ত স্পর্শ মায়ের জীবনে ফিরিয়ে আনবে বলেই রিমার এই সাধনা।
কখন সূর্য ডুবে গিয়ে চারদিকে লালচে আভা ছড়িয়ে দিয়েছে টের পায়নি রিমা।
সম্বিৎ ফিরে ফেলো পাশে কারো উপস্থিতিতে।
দেখলো ইমরান।
ঃ একা দাঁড়িয়ে আছেন?
নিজেকে সামলে নিল রিমা।
তাকালো ইমরানের মুখের দিকে।
কণ্ঠে গভীরতা এনে বলল-
একা কোথায়? আপনি রয়েছেন না?
একটু হাসলো ইমরান।
রিমার চোখে চোখ রেখে বলল-
ঃ থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ রিমা।
ওরা দু’জন এগিয়ে গেল সামনের দিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন