ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে অবস্থিত কয়েক হাজার গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ মারাত্মক পরিবহন সংকটে পড়েছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের বাহন বন্ধ করায় তারা চরম দূভর্েূাগে পড়েছেন। জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাতারাতি সাধারণ মানুষের চলাচলের বাহন বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ঈদুল আযহার পর থেকে মহাসড়কে চলাচলকারী ইমা, অটোরিকশা, লেগুনা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এসব যানবাহনে অল্প দূরত্বের পথে চলাচল করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য পরিবহন করে এসব গাড়িতে। এখন উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য। যাতায়াতের সংকটে পড়েছে অফিসগামী লোকজনসহ ছাত্রসমাজ ও রোগীরা।
এদিকে ফেনীতে সড়ক ও মহাসড়কে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য ২০টি কারন উল্লেখ করে উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট সুপারিশ করেছেন ফেনী জেলা প্রশাসন। ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গত সোমবার দুপুরে নিরাপদ সড়কের জন্য নাগরিক কর্তব্য বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান এর বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে। ফেনী জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র আয়োজনে আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি.কে.এম এনামুল করিম এর সভাপতিত্বে ফেনী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) প্রকৌশলী পার্কন চৌধুরী’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ফেনী ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান, মহিপাল সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আজিজ আহম্মদ, স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মো. জাফর উদ্দিন, ফেনী জেলা মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম নবী, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বুলবুল, ফেনী জেলা ট্রাক মিনি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, আন্ত:জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আবদুল মালেক ভূঞা, ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আমির হোসেন চৌধুরী মোজাম্মল, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জালাল আহমেদ হাজারী, ট্রাক ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সভায় ফেনী জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, মাদকসেবী, অসুস্থ লোক ও যারা বেশি ঘুমায় তাদের গাড়ি চালাতে দিবেন না। ভোরবেলায় বেশি দূর্ঘটনা হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ফেনী সাউথ ইস্ট কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল খালেক জানান, তার কলেজটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। কলেজের সব ছাত্র-ছাত্রী অল্প দূরত্বের যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল। এখন তাদের পক্ষে কলেজ করাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
ফেনীর লেমুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মমিনুল হক জানান, সাধারণত দুই থেকে পাঁচ মাইলের মধ্যে অবস্থিত গ্রামগঞ্জের লোকজনকে স্কুল, কলেজ ও হাটবাজারে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। এখন ছোট গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাট-বাজার বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, কয়েক সপ্তাহ যাবত মহাসড়কে ছোট যান চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যবসায়-বানিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। খুচরা ও পাইকারী মালামাল সরবরাহ করতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
ফেনী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাফর উদ্দিন জানান, মহাসড়কের দূরপাল্লার যানবাহনগুলোতে ছোট ছোট গ্রাম্য স্ট্যান্ডগুলোর যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হয় না। গ্রামের অল্প দূরত্বের যাত্রী পরিবহনের গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সত্যিকার অর্থেই বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের উচিত ছিল আগে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা। তিনি অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও ল²ীপুর জেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশ মহাসড়কের দুর্ঘটনা রোধে দেশব্যাপী সব মহাসড়কে অটোরিকশা, সাধারণ তিন চাকার গাড়ি, ইমা, নছিমন, করিমন, লেগুনা, ভটভটি, ইজিবাইক ও রিকশাসহ সব ছোট গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এতে মহাসড়কে দুর্ঘটনা গত কয়েক দিনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।
ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম জানান, পরপর কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার পর প্রশাসন তড়িঘড়ি করে ছোট গাড়ি বন্ধ করেছে। এতে কী পরিমাণ সমস্যার সৃষ্টি হবে, তা বিবেচনায় আনা উচিত ছিল।
ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল আউয়াল জানান, অবৈধভাবে চলাচলের কারণে এরই মধ্যে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ইমা ও রিকশা আটক করা হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন