(পূর্বে প্রকাশিতের পর) মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারের কাউকে এমন কাজ করতে দেখা যায়নি। তা শাসনতন্ত্রের ঐ ধারার কারণে। বিশেষ করে আল্লাহর নিকট জবাবদানের বিষয়টিই একজন মানুষকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে। অপরদিকে যে ব্যক্তির মাঝে, আল্লাহর নিকট জবাব দিহিতার মানসিকতা সৃষ্টি হবে না সে জনগণের নিকট জবাবদিহিতার প্রশ্নই উঠে না। এমন লোকদেরকে কোন ধরনের পদে বসানো উচিৎ নয়। ৫নং ধারা : ‘‘রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সকল সম্পদের মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্র প্রধানের নিকট এ সম্পদ জনগণের পক্ষ থেকে আমানত। তিনি রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে এ সম্পদের মালিক নন। শুধুমাত্র আমানতদার।’’ রাষ্ট্র প্রধান এ সম্পদ ব্যবহার করবেন আল্লাহর প্রদত্ত নির্ধারিত খাতে। যা দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যয়িত হবে। তা এমন ভাবে ব্যয় করবেন যে ভাবে আল্লাহ বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি হবেন কঠোর ও নির্দয়। কারণ সম্পদের বিষয়েও তাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। ৬নং ধারা : ‘‘রাষ্ট্রের আইন হবে আল্লাহর প্রদত্ত রাসুল (সঃ) প্রদর্শিত ও প্রয়োগকৃত আইন।’’ রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে সাধারণ কুলি-মজুর পর্যন্ত এই আইনের অধীনে থাকবেন। আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না কেউ। এ আইন সকলের জন্য সমান। এটার নামই হচ্ছে আইনের শাসন। যেমন মদীনার ইসলামী আদালতের কাজী রাষ্ট্র প্রধানকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য করেছেন। খলিফার বিরুদ্ধে রায়ও দিয়েছেন। এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর আইন সকলের জন্য সমান প্রযোজ্য। ৭নং ধারা : ‘‘সকল প্রকার অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে পূর্ণ সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মানুষ সমান।’’ রাষ্ট্রপ্রধান যেমন মানুষ রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকও মানুষ। অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রধান যা ভোগ করবে সাধারণ মানুষ তাই ভোগ করবে। দেশ, গোত্র, ভাষা বর্ণের কোন ধরনের পার্থক্য করা চলবেনা। কে শাসক আর কে শাসিত তা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো উভয়ই মানুষ। উভয়ে আল্লাহর বান্দাহ্। আল্লাহর বান্দাহ্ হিসেবে সকলেই সম অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করবে। উপরোক্ত ৭টি ধারা ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক শাসনতান্ত্রিক ধারা। এর বাইরে গিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। যার হৃদয়ের গভীরে আল্লাহর প্রেম আছে এবং আল্লাহর গজব ও কঠিন শাস্তির ভয় আছে তিনি এর বাইরে যেতে পারেন না। কাউকে এর বাইরে যেতে দিতে পারেন না। সৎ কাজের আদেশ দান ও অসৎ কাজের বাঁধাদান যেহেতু শাসতন্ত্রের একটি মৌলিক ধারা সে অনুযায়ী হযরত ইমাম হোছাইন (রঃ) এজিদকে বাঁধা দান করেছেন। কারণ এজিদ ইসলামী শাসনতন্ত্রের মৌলিক ধারার বাইরে চলে গিয়েছে। তাকে বাধা দেয়া এবং জনগণ তথা আল্লাহর বান্দাদেরকে তার কবল থেকে উদ্ধার করা জরুরি ছিল বিধায় তিনি কারবালার ময়দানে এজিদি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এ অবতীর্ণ হন এবং ৭২ জন আহলে বাইয়্যাতসহ শাহাদাত বরণ করেন। এজিদ স্বাভাবিক পদ্ধতিতে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়নি। হযরত আমীরে মোয়াবিয়ার ছেলে হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে নিজেকে খলিফা ঘোষণা করে। যা ইসলামী রীতিনীতির পরিপন্থি ছিল। এজিদ ক্ষমতায় আরোহণ করার পর হযরত ইমাম হোছাইন (রঃ) তার অন্তর দৃষ্টিতে দেখতে পেলেন যে, এক: এজিদ তার মসনদে বসে ভিন্ন গতিতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অর্থাৎ রাসুল (সঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনগণ যেভাবে বা যে পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন সে সুন্দর ও সত্যের পথ থেকে সরে গিয়ে আল্লাহর বান্দাদেরকে ভিন্ন পথে পরিচালনা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। যা কোন খোদাভীরু লোক.....মেনে নিতে পারেনা। দুই: যেহেতু পৃথিবীর শ্রষ্টা একক ভাবে একমাত্র আল্লাহ তা’আলা। সেহেতু দুনিয়ার সকল দেশ বা রাষ্ট্রের একমাত্র মালিকানাও আল্লাহর। দুনিয়ার সকল দেশ বা রাষ্ট্র যেহেতু আল্লাহর একক মালিকানাধীন সেহেতু দেশ বা রাষ্ট্রে বসবাস রত সকল বনি আদম কেবল মাত্র আল্লাহরই বান্দাহ বা গোলাম। রাষ্ট্র বা দেশ জনগণের মালিক নয়। জনগণও রাষ্ট্র বা দেশের গোলাম নয়। জনগণের পরামর্শ, মতামত বা ভোটের মাধ্যমে যিনি রাষ্ট্র প্রধান হবেন তার প্রধান দায়িত্ব হলো সর্বাগ্রে আল্লাহর দাসত্ব কবুল করা এবং আল্লাহর দাসত্বের শিকল গলায় ঝুলিয়ে নেয়া। তারপর আল্লাহর বান্দাহদের ওপর আল্লাহর আইন জারি করা। এজিদ সিংহাসনে বসার পর আল্লাহর কর্তৃত্বকে বাদ দিয়ে স্বীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আল্লাহর বান্দাহদের গলায় তার মর্জি মতো রাজতান্ত্রিক শিকল পরিয়ে দেবার চেষ্টা করে। সে বাদশাহ হিসেবে রাষ্ট্রের মালিক, জনগণের মালিক এবং জনগণের ইজ্জত আব্রুর মালিক হয়ে বসে। যা ইসলামী শাসনতন্ত্রের মৌলিক ধারার পরিপন্থি। আল্লাহর প্রদত্ত আইনের পরিপন্থি কোন ধরনের প্রচেষ্টাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও লালন-পালন করতে দেয়া যায় না। কোন সাচ্চা মুসলিম তা মেনে নিতে পারেনা। তিন: আল্লাহর প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হচ্ছে ইসলাম। ইসলামকে সামগ্রিকভাবে চর্চা করতে হলে রাষ্ট্রীয় ভাবে তার প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানের সর্বপ্রথম ও প্রধান কর্তব্য। কেননা ইসলামকে বাদ দিয়ে মুসলমান থাকা যায় না। তাই আল্লাহর মনোনীত পূর্ণাঙ্গ এই জীবন বিধান ধরাপৃষ্ঠে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিভাবে কোন পদ্ধতিতে ইসলামী রাষ্ট্র চালাতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান যারা হবেন তাদের চরিত্র ও নীতি নৈতিকতা কোন মানের হবে। জনগণের চরিত্র কেমন হবে তা সরাসরি দেখিয়ে দেবার জন্য এবং বাস্তবে শিখিয়ে দেবার জন্য সরাসরি রাসুল প্রেরণ করেছেন। যাকে রাসুল হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে তাকে অহি দ্বারা পরিচালিত করা হয়েছে। বিশ্বনবী (সঃ) সে মনোনীত সর্বশেষ রাসূল (সঃ)। আল্লাহর নির্দেশ ক্রমে রাসুল (সঃ) ইসলামকে এবং ইসলামী রাষ্ট্রকে সেভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান কাজ সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ইনসাফ এবং আল্লাহর বান্দাহদের জন্য আল্লাহর নির্দেশিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সাথে সাথে ইসলামের বিপরীত যা কিছু আছে তা সমূলে ধূলিস্যাৎ করা। ধ্বংস করা। মানুষের ওপর থেকে মানুষের প্রভুত্ব খতম করা। রাসুল (সঃ) পরিচালিত ইসলামী রাষ্ট্র এমনই ছিল। খোলাফায়ে রাশেদার যুগেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু এজিদ উত্তরাধিকার সূত্রের নামে মতায় এসে সততা ও ইনসাফকে উৎখাত করতে চেষ্টা করল এবং নিজেকে প্রভুর আসনে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালালো। যা সম্পূর্ণরূপে রাসূল (সঃ) এর দেখানো এবং শিখানো নীতির পরিপন্থি। চার : তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি ছিল ইসলামী রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি। রাষ্ট্র প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সকলকে এ শক্তির বলে বলীয়ান হতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্রের গোটা জন শক্তির অন্তরে বিরাজ করবে আল্লাহর আযাবের ভয়। এর বাইরে অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রের জনগণ শুধুমাত্র আল্লাহর ভয়েই ভীত ছিল। অন্য কোন ভয় তাদের মাঝে ছিল না। কিন্তু এজিদ ক্ষমতায় আসার পর পরই নিজে ইসলামী রীতি-নীতি বাদ দিয়ে ভিন্ন রীতি-নীতি অনুস্মরণ কতে লাগল। দেশ থেকে চলে গেল সততা, ন্যায়নীতি ও ইনসাফ। বেড়ে গেল জুলুম নিপীড়ন। মানুষের মন থেকে বিধায় নিতে শুরু করল খোদাভীতি পূর্ণ ইসলামী চরিত্র। জনগণের মাঝে বেড়ে গেল আল্লাহর ভয়ের পরিবর্তে শাসকগোষ্ঠীর ভয়। এ ছিল এক বিরাট পরিবর্তন। হযরত ইমাম হোসাইন (রঃ) তাঁর অন্তর দৃষ্টি দিয়ে উপরোক্ত বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করে এজিদকে বাধা দিতে গেলেন। তার পতিপথ পরিবর্তন করে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। এ প্রচেষ্টার ফলই হলো কারবালার যুদ্ধ। সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি হলেন আপোসহীন। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে তিনি শহীদ হলেন। মাসুম বাচ্চাকেও কুরবানী দিলেন। তার পরও মিথ্যার কাছে মাতা নত করলেন না। দ্বীনের জন্য ইমাম হোছাইন (রঃ) এর জীবন দান কোন সহজ ব্যাপার ছিলনা। অথচ আমরা কি করছি? যা করে যাচ্ছি তা কি ইসলাম সম্মত? হযরত ইমাম হোছাইন (রঃ) এর পবিত্র শাহাদাত দিবসকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কুসংস্কার প্রচলিত আছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এসব কাজ জায়েজ বা বৈধ নয়। ঈমানের বলে বলিয়ান কোন মুসলমান ঐসব কাজ করতে পারেনা। ঐসব কুসংস্কারের জনক হলো পোড়া শিয়া সম্প্রদায় এবং এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী। আমাদের সমাজের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ পোড়া শিয়া সম্প্রদায় ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে শাহাদাতে কারবালা হতে বাস্তব ও জীবন্ত শিক্ষা গ্রহণ করার পরিবর্তে নানা ধরনের কুসংস্কার শিখছে এবং ঐ সব কুসংস্কার চর্চার মাধ্যমে এজিদি শক্তিকে শক্তিশালী করে তুলছে। জারীগান আর পুঁথি পাঠের আসর ইত্যাদি মনোরঞ্জনের জন্য হতে পারে। শোক-সন্তোপের জন্য নয়। ইমাম হোছাইন (রঃ) এর শাহাদাত দুনিয়ার সবচেয়ে বিয়োগান্ত ও হৃদয় বিধারক ঘটনা। এ ঘটনা মুসলমান হৃদয়ে ঈমানী ও ইসলামী চেতানার প্রসার ঘটায়। আল্লাহর প্রদত্ত ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে। মিথ্যার বিরুদ্ধে বজ্রকঠোর করে তুলতে পারে। কোন রকম আনন্দ দিতে পারেনা। বিনা অপরাধে আহলে-বাইয়্যাতের ৭২ জন লোকের শাহাদাত বরণ সহ্য করার মতো বিষয় নয়। নবী দৌহিত্রের কোন অপরাধ ছিলনা। আপন সমাজে নতুনভাবে জন্ম নেয়া তাগুতকে অস্বীকার করার কারণে তাদেরকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। এ ঘটনা বা এ দিবসকে কেন্দ্র করে জারিগান আর পুঁথি পাঠের আসর বসায়ে আনন্দ করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই। এ সব কুসংস্কার মুসলিম জাতিকে বিপ্লবী চেতনা হতে ফিরিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র মাত্র। দ্বীন-ধর্মের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে আনন্দ-ফুর্তির সাগরে ডুব দিয়ে মহররম পালন কতটুকু শরিয়াহ সম্মত তা মুসলমানদের ভেবে দেখা উচিত। নগ্ন-পায়ে হাঁটা, কালো ব্যাজ ধারণ করা, হায় হোসেন, হায় হোসেন রবে মদমত্ত হওয়ার ভান করা, আপন দেহে চাকু চালিয়ে খুন প্রবাহিত করা। নারী-পুরুষ এক সাথে একাকার হয়ে শোকযাত্রা করা এসব মুসলমানের সংস্কৃতি নয়। এসব কোন মুসলমানের সংস্কৃতি হতে পারে না। এ সংস্কৃতি ইংরেজদের কাছ থেকে গ্রহণ করা। যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে ঐসব কুসংস্কার। মুসলমানরা আজ ঐসব ভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে শাহাদাতে কারবালার প্রকৃত শিক্ষাকে বিকৃত করে চলছে। শুধু তাই নয়, ঐসব কুসংস্কার চর্চার মাধ্যমে এজিদি শক্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যা কোন মতে মেনে নেয়া যায়না। শাহাদাতে কারবালার যথাযত মূল্যায়ন পূর্বক আশুরা পালন করতে হলে নিম্নে লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। এক: বিশ্বনবী (সঃ) যে ভাবে আশুরা পালন করেছেন ঠিক সে ভাবে আশুরা পালন করার জন্য সকল মুসলমানকে এগিয়ে আসতে হবে। রাসুল (সঃ) ২টি রোজা রাখতেন। বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এর বাইরে অন্য কিছু তিনি করেননি। মুসলমানদের কেউ এর অতিরিক্ত কিছু করা উচিৎ নয়। রাসূল যা করেনি তা করা কোন উম্মতের জন্য জায়েজ নয়। এটা হচ্ছে মৌলিক সংস্কৃতি। দুই: কারবালার শাহাদাতের ঘটনার অন্যতম শিক্ষা হলো কোন ধরনের তাগুতি শক্তির কাছে কোন ভাবে মাথানত না করা। আল্লাহ দ্রোহী তাগুতি শক্তিকে ধ্বংস করে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে হিজরী ৬১ সন মোতাবেক ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে ইমাম হোছাইন (রাঃ)সহ ৭২ জন শাহাদাত বরণ করেন। যে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ইমাম হোছাইন (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেছেন সে সত্য এখনো বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। কুফরী ও তাগুতি শক্তি গোটা দুনিয়ার মুসলিম মিল্লাতের উপর খবরদারী করছে। কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত মিথ্যাকে ধ্বংস করে সত্য ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য মুসলিম মিল্লাতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গড়তে হবে এক নতুন বিপ্লব। সৃষ্টি করতে হবে এক নতুন স্রোত। নিতে হবে নতুন শপথ। তিন: কারবালার রণক্ষেত্রে সত্যের সৈনিক ছিল মাত্র ৭২ জন। অপর পক্ষে এজিদি সৈন্য ছিল অনেক গুণ বেশি। সত্যের সৈনিকরা মুষ্ঠিমেয় ছিল বটে। তারা তাদের ঈমানের ওপর ছিল অটল ও অবিচল। তাদের অন্তরে ছিল আল্লাহ, রাসুল (সঃ) এবং দ্বীনের মুহাববত। তাদের মাঝে ছিল ঈমানি চেতনা। তাই এজিদ বাহিনীর শক্ত, কঠিন বেষ্টনীর মাঝে ও তারা মাথানত করেনি। জালিম সৈনিকদের তলোয়ারের নীচে মাথা সঁপে দিয়েছে বীরের মতো লড়াই করে। তারপরও পিছু হটেনি। মিথ্যাবাদীর নিকট মাথানত করেনি। লড়াই করে শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করলেন। কিন্তু ঈমান হারা হলেন না। মিথ্যাকে স্বীকৃতি দিলেন না। অথচ চলমান দুনিয়ার মুসলিম সমাজের একটি অংশ দুনিয়ার ঘৃণ্যতম মতবাদসমূহের পূজা-অর্চনা করেও মুসলিম বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে না। অথচ কুসংস্কারের কাছে মাথানত করে শিরিক বেদআতের আসর বসিয়ে তারা মিথ্যা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত। আশুরার এ পবিত্র দিবস হতে সত্যের পক্ষে অবিচল থাকার প্রেরণা নিয়ে আশুরা পালন করা উচিৎ। চার: শোকগাঁথা, গান-বাজনা, জারিগান, পুঁথি পাঠের আসর, চাকুমারা, কালো ব্যাজ ধারণ ইত্যাদি বর্জন করে ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে এ দিবস পালন করা নিতান্ত জরুরি। সাথে সাথে যাবতীয় অপ-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রাণ-পণ সংগ্রামের শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া আবশ্যক। পাঁচ: পাড়া, গ্রাম, মহল্লা, শহর, নগর তথা জায়গায় জায়গায় আলোচনা সভা, ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে আশুরার প্রকৃত ঘটনা, গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃত শিক্ষা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা উচিত। সমগ্র মুসলিম জাতিকে সকল প্রকার বিদা’আত, শিরিক ও ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আশুরা এবং কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি। শুধু জরুরি কেবল নয়। সচেতন মুসলমানের জন্য বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য। সত্তর দানার বিরানী রান্না করে ফুর্তি সহকারে খাওয়ার মাঝে এ দিবস পালনের কোন যৌক্তিকতা নেই। কোন সার্থকতাও নেই। আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থাকে দুনিয়ার জমিনে প্রতিষ্ঠা করে মিথ্যা ও জুলুমের শিকড় উপড়ে ফেলার মাধ্যমেই রয়েছে ঈমানদারের সার্থকতা। ইমাম হোছাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের উদ্দেশ্য এটাই ছিল। সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের চেতনাও তাই হওয়া উচিৎ। আল্লাহ আমাদেরকে শাহাদাতে কারবালার ঘটনা হতে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জীবন দান করার তৌফিক দিন। আমিন। ছুম্মা আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন