একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়ায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন দলটির তিনজন নেতার সমর্থকরা। তারা হলেন- সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও গোপালগঞ্জের সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থক। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় এই তিন প্রার্থীর সমর্থকরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এর এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা কার্যালয়ের দিকে ঢিল-ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে কার্যালয়ের দোতলার কাঁচের গ্লাস ভেঙে যায়।
আহত হয় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা ও সংবাদকর্মীও। মনোনয়ন বঞ্চিতদের সমর্থকরা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে কার্যালয়ের দুটি গেইট ধাক্কাধাক্কি করে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খানসহ দলটির সিনিয়র নেতারা। এহছানুল হক মিলন চাঁদপুর-১, তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণঞ্জ-১ এবং সেলিমুজ্জামান গোপালগঞ্জ-১ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
এর আগে এহছানুল হক মিলনের সমর্থকরা গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর এবং মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। এসময় তারা ঘণ্টাব্যাপী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা সেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে ক্ষোভের কথাও জানান। মিলনের কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন, এহসানুল হক মিলনের জায়গায় চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনকে। তিনি এলাকায় পরিচিত নন এবং দলের তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। তাঁরা মোশাররফ হোসেনের পরিবর্তে এহসানুল হক মিলনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কচুয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, যুবদলের সভাপতি ও আশরাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী এবং ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল হোসেন তাঁদের নেতা-কর্মীরা এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ফারুকী বলেন, কচুয়ার আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মিলনের কোনো বিকল্প নেই বলে তাঁরা মনে করেন। দুপুর ২টার পর মিলনের নেতাকর্মীরা তালা খুলে চলে যান। এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আলাউদ্দিন বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমরা ১২ ঘণ্টার মধ্যে কচুয়া আসনে মিলনকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলেছি। নইলে পল্টন কার্যালয় ও গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তালা দেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে আবদুল মালেক রতনকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে বঞ্চিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করে ভাঙচুর চালান। তাঁরা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের ফটকে ধাক্কাধাক্কি করেন। একপর্যায়ে দুই-তিনজন কর্মী বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দ্বিতীয় তলায় ইট পাটকেল ছোড়েন। এতে জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপকারীকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন।
একই কারণে এহছানুল হক মিলনের সমর্থকেরা সাড়ে পাঁচটা থেকে তাঁর নামে স্লোগান দিতে থাকেন। গোপালগঞ্জের সেলিমুজ্জামান সেলিমের হাজারো সমর্থক শনিবার বিকেলে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হামলা চালান। একপর্যায়ে সেলিমুজ্জামান সেলিমের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন।
বঞ্চিত প্রার্থীদের সমর্থকদের বিক্ষোভ-হামলার পর রাত সাতটার দিকে তৈমুর আলমের সমর্থকেরা সরে যান। তবে এ সময় তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল করে। তারা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য করে স্লোগান দিতে থাকে ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ারি-সাবধান’। এর পাশাপাশি বিএনপির ঢাকার নেতাকর্মীরা সংগঠিত হতে থাকলে বিক্ষুব্ধরা সরে যান।
এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলুও। শুক্রবার বিকালে তার এলাকা মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবিরকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার পর রাতেই ছোট বোন দেলোয়ারা বেগম পান্নাকে নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে আসেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের বাধা পেয়ে কেঁদে ফেলেন দুই ভাই-বোন। ডাবলু অনুসারীরা এ সময় হৈ চৈ করেন।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন